Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Russia Ukraine War

Russia Ukraine War: যুদ্ধ যেন ইউক্রেনেই সীমাবদ্ধ থাকে: নেটো

ইউক্রেন সীমান্ত পেরিয়ে এই যুদ্ধ যাতে ইউরোপের অন্যত্র ছড়িয়ে না-পড়ে, যাতে ইউক্রেনেই সীমাবদ্ধ থাকে, সে কথা নিশ্চিত করবে বলে জানাল নেটো।

দেশছাড়া দুই ইউক্রেনীয় শিশু আশ্রয়ের খোঁজে পোল্যান্ডে। বুধবার।

দেশছাড়া দুই ইউক্রেনীয় শিশু আশ্রয়ের খোঁজে পোল্যান্ডে। বুধবার। রয়টার্স

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২২ ০৮:২২
Share: Save:

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অন্যতম কারণ, নেটোয় যোগ দেওয়া নিয়ে কিভের আগ্রহ প্রকাশ। বারবার তারা সেই আবেদন জানিয়েছে। এমনকি, যুদ্ধ চলাকালীনও। কিন্তু আমেরিকা-সহ ইউরোপের দেশগুলি ইউক্রেনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছে। মুখে মস্কোর নিন্দামন্দ করলেও স্পষ্ট করে দিয়েছে, রাশিয়ার বিরোধিতা করে এত বড় পদক্ষেপ করতে তারা রাজি নয়। আজ ফের সে কথা মনে করিয়ে দিল নেটো। তারা আগেই জানিয়েছিল, ইউক্রেনের যুদ্ধে তারা সরাসরি লড়বে না। কিন্তু ইউক্রেন সীমান্ত পেরিয়ে এই যুদ্ধ যাতে ইউরোপের অন্যত্র ছড়িয়ে না-পড়ে, যাতে ইউক্রেনেই সীমাবদ্ধ থাকে, সে কথা নিশ্চিত করবে বলে জানাল নেটো। কাল হয়তো নেটোর বৈঠক বসতে চলেছে। তার আগে আজ এই বার্তা দিলেন নেটোর সেক্রেটারি জেনারেল জেন্স স্টোলেনবার্গ।

বৈঠকে যোগ দিতে ওয়াশিংটন থেকে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। নেটোর বৈঠকের পরে জি৭-এর আলোচনাতেও যোগ দেবেন তিনি। পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশতে গিয়ে ইউক্রেন নিয়ে বৈঠক করার পরিকল্পনাও রয়েছে বাইডেনের। তবে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, যুদ্ধক্ষেত্রে অর্থাৎ ইউক্রেনে পা রাখবেন না। ইউক্রেনকে নেটোয় অন্তর্ভূক্ত করার জল্পনাও সম্পূর্ণ নস্যাৎ করে দিয়েছেন বাইডেন। কিন্তু রাশিয়া যেন ইউক্রেন ছাড়িয়ে আর এগোতে না-পারে, সেটা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর তিনিও। আজ সাংবাদিক বৈঠকে এই কথারই প্রতিফলন দেখা গিয়েছে স্টোলেনবার্গের মুখে। তিনি বলেন, ‘‘যতটা সম্ভব ইউক্রেনকে সাহায্য করব আমরা। কিন্তু নেটোর দায়িত্ব হল এটা দেখা, ইউক্রেন ছাড়িয়ে যুদ্ধ যাতে আরও বড় আকার না-নেয়।’’

বৈঠকের আগেই নেটো জোটের পরবর্তী সিদ্ধান্তের কিছু আভাস মিলেছে। যেমন, ইউক্রেনের পড়শি দেশ স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, বুলগেরিয়া ও রোমানিয়ায় তাদের নতুন সেনাদল তৈরি করা হবে। স্টোলেনবার্গ জানিয়েছেন, বর্তমানে এই দেশগুলিতে নেটোর যে বাহিনী রয়েছে, তার দ্বিগুণ সংখ্যক সেনা বহাল করা হবে। অর্থাৎ ইউক্রেনের আশপাশের দেশগুলোতে খুঁটি মজবুত করতে চাইছে নেটো। আর এক পড়শি পোল্যান্ড এমনিতেই নেটোর সদস্য। বাকি দেশগুলোতেও শক্তপোক্ত ‘বেড়া’ দিতে চাইছে তারা।

স্টোলেনবার্গ আরও বলেন, ‘‘রাশিয়ার উদ্দেশে আমাদের স্পষ্ট বার্তা— পরমাণু যুদ্ধ হলে তাতে জয় অসম্ভব এবং এই যুদ্ধ না-করাই উচিত।’’ নেটোর বার্তা উড়িয়ে দিয়ে ক্রেমলিনের জবাব, ‘অস্তিত্ব-সঙ্কট’ হলে রাশিয়া অবশ্যই পরমাণু-অস্ত্র ব্যবহার করবে।

গত কাল রাশিয়ার বাহিনী ঢুকে পড়েছে মারিয়ুপোলে। যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এই বন্দর-শহর। গত তিন-চার সপ্তাহ ধরে মারিয়ুপোল দখলে মরিয়া মস্কো। ইউক্রেনও মাটি আঁকড়ে পড়েছিল। আকাশপথে ও সমুদ্রপথে লাগাতার হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। কাল প্রথম এই শহরে ঢুকতে পেরেছে তাদের বাহিনী। খবর পেয়ে তড়িঘড়ি বৈঠকে বসেছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি। একটি ভিডিয়ো-বার্তায় মস্কোর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘আর কিছু বেঁচে নেই। চারদিকে শুধু ধ্বংসস্তূপ। মারিয়ুপোল থেকে অন্তত ১ লক্ষ লোককে উদ্ধার করতে দেওয়া হোক।’’ তাঁর কথার মাঝেই খবর আসে— মারিয়ুপোলে দু’টি অতি শক্তিশালী বোমা ফেলেছে রুশরা। গত কাল রাতের ঘটনা। এর পরে বেশ কয়েক ঘণ্টা পার হয়ে গিয়েছে। এখনও জানা নেই হতাহতের সংখ্যা।

রাশিয়ার শক্তিপ্রদর্শন আজও অব্যাহত। কিভের বক্তব্য, রুশ হামলা থেকে স্পষ্ট, ‘দখলদাররা’ মারিয়ুপোল নিয়ে আগ্রহী নয়, ওরা মাটিতে মিশিয়ে দিতে চায় শহরটাকে, পুড়িয়ে ছাই করে দিতে চায়। দেশের অন্যত্রও হামলা চলছে। ইউক্রেন দাবি করেছে, চের্নোবিলের পরমাণু শক্তি কেন্দ্রের একটি গবেষণাগার ধ্বংস হয়ে গিয়েছে রুশ হামলায়। গবেষণাগারটি তেজস্ক্রিয় বর্জ্য পরিশোধনের কাজ করত। তা ছাড়া বেশ কিছু বিপজ্জনক পদার্থ ছিল ওই কেন্দ্রে। সবই এখন ‘শত্রুদের’ হাতে। সুমিকেও সম্পূর্ণ ঘিরে ফেলেছে রুশ বাহিনী। শহরের কাউন্সিলর আন্ড্রি বারানোভ বলেছেন, ‘‘আমাদের শহর প্রায় ঘিরে ফেলেছে শত্রুরা। পোলটোভা দিয়ে এখনও বেরোনোর একটা রাস্তা আছে। মহিলা ও শিশুদের ওই রাস্তা দিয়ে বার করে দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসা সামগ্রী আনা হচ্ছে ওই পথ দিয়েই।’’ বারানোভ আরও জানিয়েছেন, তাঁর আশঙ্কা, আর বেশি দিন রক্ষা করা যাবে না সুমিকে।

শুধু ইউক্রেন নয়, গোটা ইউরোপেই ক্রমশ জোরদার হচ্ছে এই আতঙ্ক। আর হয়তো বেশি দিন নয়, পুরো দেশটাই দখল করে নেবে মস্কো। সেই আশঙ্কা থেকেই নেটোরও প্রস্তুতি। সবচেয়ে ভয়ে রয়েছে পোল্যান্ড। ইউক্রেনের গা ঘেঁষে থাকা নেটোর সদস্য এই দেশ রুশ হুমকি উড়িয়ে লাগাতার সাহায্য করে গিয়েছে ইউক্রেনকে। পরিবর্তে পুতিন কী করবেন, তা নিয়ে ত্রাস ছড়িয়েছে। অনেকেরই মতে, ইউক্রেন দখল করে থামবে না রাশিয়া। সে ক্ষেত্রে প্রায় রুশ কামানের মুখে দাঁড়িয়ে পোল্যান্ড। শোনা যাচ্ছে, ইতিমধ্যেই পোল্যান্ডের প্রতিরক্ষা বাহিনীতে ব্যাপক ভাবে সেনা নিয়োগ শুরু হয়েছে। ২৬ বছর বয়সি পেট্রিসিয়া দেশরক্ষার কাজে যোগ দিতে চান। প্রাক্তন সেনাকর্মী পাওয়েল কিয়েনস্কি নতুন করে বাহিনীতে যোগ দিয়েছেন। এমন কিয়েনস্কির সংখ্যা নেহাত কম নয়। সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার ঢল সাত গুণ বেড়ে গিয়েছে। পোলিশ সেনাকর্তা মার্সিন সিদজ়িনস্কি জানিয়েছেন, প্রতিদিন সেনায় যোগ দিতে ইচ্ছুক কয়েকশো প্রার্থীর আবেদন জমা পড়ছে।

এই আশঙ্কা খুব অমূলক নয়। ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার বার্তা নিয়ে রাশিয়ার কাছে বিশেষ অভিযান শুরুর প্রস্তাব দিয়েছিল নেটোর সদস্য পোল্যান্ড। তা সমূলে খারিজ করে দিয়ে আজ রুশ বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন ‘‘এ সব অসম্ভব। এতে রাশিয়া ও নেটো বাহিনীর সরাসরি সংঘর্ষ বাধবে। সবাই এই পরিস্থিতি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। হলে পরিণতি ভাল হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Russia Ukraine War
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE