লাহৌরে নওয়াজ়় শরিফ। শুক্রবার। ছবি: রয়টার্স।
যে উড়ানটা সচরাচর ঘড়ির কাঁটা মেনে ওঠা-নামা করে, সেটাই আজ চার ঘণ্টা লেট! আবু ধাবি বিমানবন্দরে বসেই অস্থির হচ্ছিলেন লন্ডন-ফেরত নওয়াজ় শরিফ। পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জানতেন, লাহৌরে নামা-মাত্রই পানামা দুর্নীতির দায়ে গ্রেফতার করা হবে তাঁকে এবং মেয়ে মরিয়মকে। বিদেশে থাকার সময়েই নওয়াজ়কে ১০ বছর ও মরিয়মকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল পাক দুর্নীতি-দমন আদালত।
গ্রেফতারের সব বন্দোবস্তই সেরে রেখেছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। আজ রাতে লাহৌরে বিমান নামতেই গ্রেফতার করা হল বাবা-মেয়েকে। দুর্নীতি-দমন শাখা ‘ন্যাব’-এর অফিসারেরা এর পরে একটি ছোট সেসনা বিমানে তাঁদের নিয়ে রওনা হন ইসলামাবাদ। সেখান থেকে হেলিকপ্টারে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেল। লাহৌর বিমানবন্দরে এসেছিলেন নওয়াজ়ের বৃদ্ধা মা। কিন্তু ছেলের সঙ্গে দেখা হয়নি। রাতেই আদিয়ালা জেলে পৌঁছন ‘ন্যাব’ আদালতের বিচারক মহম্মদ বশির।
নওয়াজ়ের বিমান নামা নিয়েও আজ নাটক হয় বিস্তর। হঠাৎ শোনা যায়, লাহৌরে নামছে না বিমান। কারণ, শহরের পরিস্থিতি উত্তপ্ত। বিমান তাই গতিপথ পাল্টে চলে যাচ্ছে ইসলামাবাদে। রাজধানীর বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছে বোমা-নিরোধক গাড়ি। স্থানীয় সময় রাত ৯টা বাজতে ১০ মিনিটে ফের খবর আসে, বিমান নেমেছে লাহৌরেই। গ্রেফতার শুধু সময়ের অপেক্ষা। পরে ন্যাব-সূত্র জানায়, নওয়াজ় ও মরিয়ামের পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তদন্তকারীদের সঙ্গে সহযোগিতা করায় তাঁদের হাতকড়া পরানো হয়নি।
শরিফের সমর্থকদের যদিও অভিযোগ, তাঁদের নেতার ‘বন্দিদশা’ কার্যত শুরু হয়ে গিয়েছিল আবু ধাবি বিমানবন্দরেই। কারণ, সেখান থেকে স্থানীয় সময় সন্ধে ৬টায় বিমানে ওঠার আগে পর্যন্ত এতিহাদ বিমান সংস্থার প্রথম শ্রেণির লাউঞ্জে সকন্যা শরিফ ছাড়া আর কাউকেই ঢুকতেই দেওয়া হয়নি। ওই ভাবেই কাটে চার ঘণ্টা। এমনকি আইনজীবী এবং সাংবাদিকেরাও প্রবেশাধিকার পাননি লাউঞ্জে। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, কাকে ঢুকতে দেওয়া হবে না-হবে, তা ঠিক করার অধিকার শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট বিমানসংস্থা এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহি সরকারের।
নওয়াজ় তাই বেরিয়েই বলেছিলেন, ‘‘আমাকে এখানে (আবু ধাবি) গ্রেফতার করা হোক বা লাহৌরে— আমি সব রকম সম্ভাবনার জন্য তৈরি। ওরা আমাকে সোজা জেলে নিয়ে যাবে। কিন্তু আমি যা করছি, পাকিস্তানের মানুষ, আগামী প্রজন্মের জন্যই করছি। পাকিস্তানের ভাগ্য লিখব আমরাই। এমন সুযোগ আর আসবে না।’’ শরিফ-সমর্থকদের বিক্ষোভের আশঙ্কায় দশ হাজার পুলিশ নামিয়ে, মোবাইল-ইন্টারনেট বন্ধ করে লাহৌরকে প্রায় দুর্গ বানিয়ে রেখেছিল প্রশাসন। তবু এড়ানো যায়নি জনতা-পুলিশ বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ। দাদার সমর্থনে বিশাল মিছিল বার করেছিলেন পঞ্জাব প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা পিএমএল(এন)-র বর্তমান প্রধান শাহবাজ শরিফ।
আজই শরিফ পরিবারের একটি ছবি টুইট করেন এক সাংবাদিক। তাতে দেখা যাচ্ছে, লন্ডনের হাসপাতালে ভেন্টিলেটরে থাকা স্ত্রী কুলসুমের মাথায় হাত বুলিয়ে তাঁর কাছে বিদায় নিচ্ছেন নওয়াজ়। পাশে দাঁড়িয়ে মরিয়ম কাঁদছেন। সেই ছবিটি পরে রিটুইট করেন শরিফ-কন্যা। বলেন, ‘‘মাকে এ ভাবে ছেড়ে আসার চেয়ে যন্ত্রণার কিছু নেই। তবু দেশের কাজে যাচ্ছি। যেতে তো হবেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy