আমেরিকার নিউ ইয়র্ক শহরের নবনির্বাচিত ডেমোক্র্যাট মেয়র জ়োহরান মামদানির উপর রাগ কিছুতেই কমছে না মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। ট্রাম্পের পূর্বাভাস, মামদানি জয়লাভ করায় নিউ ইয়র্ক কমিউনিস্টশাসিত কিউবা কিংবা সমাজতান্ত্রিক ভেনেজ়ুয়েলায় পরিণত হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ-ও দাবি যে, নিউ ইয়র্ক শহরের বাসিন্দারা ফ্লরিডায় পালিয়ে যেতে বাধ্য হবেন।
আমেরিকার রাজনীতিতে বামঘেঁষা ডেমোক্র্যাট বলে পরিচিত মামদানি। প্রখ্যাত চিত্রপরিচালক মীরা নায়ারের এই পুত্র নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থীকে বিপুল ভোটে হারিয়ে শোরগোল ফেলে দিয়েছেন। মামদানি যাতে জিততে না-পারেন, তার জন্য শেষ পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন ট্রাম্প। মামদানি মেয়র নির্বাচনে জিতলে তাঁর প্রশাসন নিউ ইয়র্ক শহরের জন্য অর্থবরাদ্দ করবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছিলেন ট্রাম্প। তবে তাঁর সেই তর্জন-গর্জনকে কার্যত উপেক্ষা করেই নিউ ইয়র্কের বাসিন্দারা বিপুল ভোটে জয়ী করেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মামদানিকে।
বুধবার আমেরিকার মায়ামিতে একটি বাণিজ্য সম্মেলনে ট্রাম্প ‘কমিউনিস্ট’ মামদানিকে প্রার্থী করার জন্য বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টিকে আক্রমণ করেন। বলেন, “আমি বহু বছর ধরে সকলকে এই বলে সতর্ক করছি যে, আমাদের বিরোধীরা প্রাণপণে আমেরিকাকে কমিউনিস্ট কিউবা এবং সমাজতান্ত্রিক ভেনেজ়ুয়েলায় পরিণত করতে চাইছে। আপনারা জানেন ওই সমস্ত জায়গায় কী হয়।” ট্রাম্পের দাবি, খুব শীঘ্রই মামদানির নেতৃত্বে নিউ ইয়র্কে কমিউনিস্ট শাসন শুরু হবে। আর সে কারণে শহরের বাসিন্দাদের ফ্লরিডায় পালিয়ে যেতে হবে। নিজের উদাহরণ টেনে ট্রাম্পের সংযোজন, “আমি তো নিউ ইয়র্কে থাকতে চাইব না। কারণ কমিউনিস্ট শাসনে আমি থাকতে চাই না।”
মামদানির জয়ে আমেরিকার সার্বভৌমত্ব খানিক খর্ব হল বলেও দাবি করেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, “২০২৪ সালের ৫ নভেম্বর (প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফলপ্রকাশের দিন) আমেরিকার মানুষ আমাদের সরকারকে চেয়েছিল। আমরা সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধার করতে পেরেছিলাম। গত রাতে নিউ ইয়র্কে আমরা কিছুটা সার্বভৌমত্ব খুইয়েছি। আমি বিষয়টি দেখে নেব।”
নিউ ইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে জিতেই মামদানি স্মরণ করেছিলেন স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে। নিউ ইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র বলেছিলেন, “আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে আজ আমার জওহরলাল নেহরুর কথাগুলি মনে পড়ছে। ঐতিহাসে এই মুহূর্ত বিরল। আমরা পুরাতন থেকে নতুনের দিকে পা বাড়ালাম। একটা যুগ শেষ হল, দীর্ঘ দিন ধরে চেপে রাখা একটা জাতির আত্মা নতুন ভাষা খুঁজে পেল।’’ ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর নেহরুও এই কথাগুলি বলেছিলেন। পূর্বতন প্রশাসনকে খোঁচা দিয়ে মামদানি এ-ও বলেছিলেন, ‘‘এটা এমন একটা যুগ হবে, যেখানে নিউ ইয়র্কবাসী নেতৃত্বের কাছ থেকে প্রাপ্তির আশা করতে পারবেন। যা আমরা করতে ভয় পাই, তার জন্য অজুহাতের তালিকা খাড়া করব না, যা এত দিন হয়ে এসেছে।’’ মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘ফক্স নিউজ়’-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে এই বক্তৃতা নিয়েও মামদানিকে তোপ দাগেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, “আমার ধারণা এটা খুবই জ্বালাময়ী ভাষণ। আমার উপর রাগ থেকে কথাগুলো বলা হয়েছে।”