Advertisement
E-Paper

‘হাত পাকাতে টেগোরও এঁকেছি’

শিল্পী অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী এখন। ২০১৮-য় তাই নোবেল-ব্যস্ততার ফাঁকেই এঁকেছিলেন টেনিস-তারকা সেরেনা উইলিয়ামসকে। সেটা ছিল বর্ণবিদ্বেষী এক ব্যঙ্গচিত্রের প্রতিবাদ।

স্নেহাংশু অধিকারী

শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২০ ০৪:১৬
নিজের আঁকা রবীন্দ্রনাথের ছবির সামনে নোবেল কমিটির অফিশিয়াল পোট্রেট-আঁকিয়ে নিকলাস এলমেহেদ। রবিবার স্টকহলমে। নিজস্ব চিত্র

নিজের আঁকা রবীন্দ্রনাথের ছবির সামনে নোবেল কমিটির অফিশিয়াল পোট্রেট-আঁকিয়ে নিকলাস এলমেহেদ। রবিবার স্টকহলমে। নিজস্ব চিত্র

অক্টোবর মানেই তাঁর কাছে ‘সারপ্রাইজ়’। খানিকটা চ্যালেঞ্জেরও। ছবি আঁকেন। ছবি তোলেনও। বাকি সারা বছর হাজারটা রং নিয়ে কাজ সুইডিশ ফ্রিলান্সার নিকলাস এলমেহেদের। কিন্তু নোবেলের মাস মানেই— সব ফেলে সাদা-কালো কিংবা বড় জোর নীল-হলুদ রং আর সোনালি রাংতা নিয়ে মেতে ওঠেন শিল্পী।

কার ছবি আঁকতে হবে জানেন না, তবু তৈরি থাকতেই হয় নোবেল কমিটির অফিশিয়াল পোট্রেট-আঁকিয়ে নিকলাসকে। ন’বছর ধরে এটাই তাঁর অক্টোবর-রুটিন!

নোবেল কমিটি নোবেলজয়ীদের তালিকাটা ধরিয়ে দেয় শুধু। বাকিটা নিকলাসের কামাল। পুরস্কারের মঞ্চে কমিটি নাম ঘোষণা করে, আর স্ক্রিনে এক-এক করে জীবন্ত হয়ে ওঠেন অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, নাদিয়া মুরাদ কিংবা ২০২০-র পদার্থে নোবেলজয়ী স্যর রজার পেনরোজ়েরা!

আরও পড়ুন: করোনাকে হারানোর কৃতিত্ব নেতৃত্বের

কাল অর্থনীতিতে নোবেল। এ বছরের মতো কাজ প্রায় শেষ! স্টকহলমে দু’বার ফোন রিং হয়ে গেল নিকলাসের। ধরলেন না। মেসেজে লিখলেন— ‘‘একটু পরে কথা বলা যায়? বাচ্চাদের ঘুম পাড়াচ্ছি।’’ খানিক পরে ফোনের ও-পারে গলা শোনা গেল ‘নোবেলজয়ীর শিল্পী’ নিকলাসের। কথায় কথায় জানালেন, শিল্প নির্দেশক হিসেবে ২০১২-য় নোবেল মিডিয়ায় যোগ দেন তিনি। সে বছরই প্রথম হাতে-আঁকা নোবেলজয়ীর ছবি প্রকাশিত হয়।

আরও পড়ুন: ‘মুখোশ খুলে দাও’, উত্তাল ইউরোপ

সে বার আইডিয়াটা ছিল—যাঁদের স্পষ্ট ছবি পাওয়া যাচ্ছে না, তাঁদের ছবি আঁকুন নিকলাস। দু’বছরের মাথায় নোবেল মিডিয়ার চাকরিটা ছেড়ে দিলেন শিল্পী। কিন্তু নোবেল মিডিয়া ছাড়ল না তাঁকে। প্রথম বছরেই ঠিক হয়ে যায়— সব নোবেলজয়ীর ছবিই এক রকম হোক।

সে দিনের মধ্য তিরিশ নিকলাস এখন তেতাল্লিশের। নোবেলজয়ীদের ‘একই ছাঁচে ঢালা’ ছবি দেখে এখনও অনেকে সফ্টওয়্যারের কারিকুরি ভাবেন। কোথাও ‘ইলাস্ট্রেটর’ হিসেবে নাম ছাপা হলেও নিকলাস অন্তরালেই। বছর-বছর একই কাজ, একঘেয়ে লাগে না? স্মিত হেসে শিল্পী জবাব দিলেন, ‘‘বিজ্ঞানের নোবেলজয়ী মানেই তো বয়স্ক শ্বেতাঙ্গ বৃদ্ধেরা! একটা সময়ে এরকমই মনে হত। এখন চ্যালেঞ্জই। অনেক সীমাবদ্ধতা, খাঁড়ার মতো ডেডলাইন, কারও ছবি থেকে মুখটাই বোঝা যায় না— তবু সেরাটাই দেওয়ার চেষ্টা করি।’’

আরও পড়ুন: ২৫ বছর একই নম্বরে লটারি কেটে বাজিমাত, জ্যাকপটে কোটিপতি পরিবার

২০১৭-১৮-য় নিকলাস নীল-হলুদে এঁকেছিলেন নোবেলজয়ীদের। গত বারের মতো এ বারও তাঁর মাধ্যম সাদা-কালো। সঙ্গে ধাতব ফয়েল দিয়ে সোনালি রং ধরানো। ছবির কথায় শিল্পী তত ক্ষণে সংসার ভুলে গিয়েছেন। বললেন, ‘‘হাত পাকানোর সময়ে আপনাদের টেগোরের ছবিও এঁকেছি নীল-হলুদে। ভাল হয়নি। কিন্তু ওই ঋষির মতো চেহারা দেখলে এখনও আফসোস হয়— যদি একশো বছর আগে তুলি ধরতাম!’’

শিল্পী অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী এখন। ২০১৮-য় তাই নোবেল-ব্যস্ততার ফাঁকেই এঁকেছিলেন টেনিস-তারকা সেরেনা উইলিয়ামসকে। সেটা ছিল বর্ণবিদ্বেষী এক ব্যঙ্গচিত্রের প্রতিবাদ। শিল্পী নিজেই জানালেন, নোবেলজয়ীর তালিকায় মহিলা নাম দেখলে বাড়তি সম্ভ্রম জাগে। যেমনটা হয়েছিল শান্তিতে নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাই কিংবা নাদিয়া মুরাদের ছবি আঁকতে গিয়ে।

কঙ্গোর চিকিৎসক ডেনিস মুকয়োয়েগের ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছিল। কেন? উত্তরে শিল্পী বললেন, ‘‘আসলে তিন বছর ধরে এই মানুষটার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। আমার এক বন্ধু কঙ্গোতে ওঁর হাসপাতালে কাজ করে। ওর কাছেই জেনেছি, ‘ধর্ষণ-ক্ষত মেরামতের সব থেকে অভিজ্ঞ ও দক্ষ চিকিৎসক’ মুকয়োয়েগে।’’

এ বার শান্তিতে নোবেল পেয়েছে ‘ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম।’ মুঠোয় ভরা শস্য— লোগো এঁকেছেন নিকলাস। যদি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আঁকতে হত? তিনিও তো মনোনয়ন পেয়েছিলেন! হাসি চেপেই শিল্পী বললেন, ‘‘নো কমেন্টস।’’ পরে জুড়লেন— ‘‘কেন! ট্রাম্পও তো বেশ ফোটোজেনিক। রাফ খাতায় এঁকেছি তো আগে।’’

Niklas Elmehed Nobel Prize
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy