Advertisement
০৪ মে ২০২৪

জিকার খোঁজে ইউরেকা

মলিকিউলার মেশিন বা ন‌্যানো মেশিন উদ্ভাবনে গবেষণার স্বীকৃতি হিসেবে গত বারও নোবেল গিয়েছিল তিন ইউরোপীয় বিজ্ঞানীর কাছে।

ত্রয়ী: (বাঁ দিক থেকে) জাক দুবোশে, ওয়াকিম ফ্রাঙ্ক এবং রিচার্ড হেন্ডারসন। এএফপি, রয়টার্স

ত্রয়ী: (বাঁ দিক থেকে) জাক দুবোশে, ওয়াকিম ফ্রাঙ্ক এবং রিচার্ড হেন্ডারসন। এএফপি, রয়টার্স

সংবাদ সংস্থা
স্টকহলম শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৩৩
Share: Save:

রসায়নবিদ্যায় নোবেল এ বার ছবি দেখিয়ে। না, এ ছবি ক্যানভাসে তুলির আঁচড় নয়। ক্যামেরার পিছনে দাঁড়িয়ে কারিকুরিও নয়। তা হলে? প্রাণিদেহের অভ্যন্তরে একেবারে আণবিক পর্যায়ে ঠিক কী ঘটে চলেছে, তারই ঝকঝকে এবং ত্রিমাত্রিক ছবি দেখিয়ে সেরার শিরোপা পেলেন তিন ইউরোপীয় বিজ্ঞানী— জাক দুবোশে, ওয়াকিম ফ্রাঙ্ক এবং রিচার্ড হেন্ডারসন।

মলিকিউলার মেশিন বা ন‌্যানো মেশিন উদ্ভাবনে গবেষণার স্বীকৃতি হিসেবে গত বারও নোবেল গিয়েছিল তিন ইউরোপীয় বিজ্ঞানীর কাছে। এ বারও শিরোপা আদতে যন্ত্রেরই। নাম, ক্রায়ো-ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ। আজ নোবেল কমিটি বলে, ‘‘এই তিন বিজ্ঞানীর সৌজন্যে এই যন্ত্র আজ এতটাই উন্নত যে গবেষকেরা এখন কোষের আণবিক পর্যায়ের যে কোনও অবস্থার ছবি পেতে পারেন।’’ তাতে লাভ? জীবনের মৌলিক রসায়ন বোঝার পাশাপাশি সহজ হবে রোগ নির্ণয় এবং ওষুধ আবিষ্কারের কাজও।

কী ভাবে? বছর কয়েক পিছিয়ে গেলেই বোঝা যাবে, ইউরেকা আসলে জিকা ভাইরাসের খোঁজ করতে গিয়েই! ব্রাজিলের ঘরে ঘরে তখন হানাদার এক অজানা ভাইরাস (তখনও জিকার নাম জানা যায়নি)। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে সদ্যোজাতেরা। চিকিৎসক-গবেষকদের তখন মাথা-খোঁড়ার মতো অবস্থা। তার পর একটা সময় ভাইরাস যদিও বা শনাক্ত করা গেল, কিন্তু ওষুধ কোথায়! ওষুধ আবিষ্কারের জন্য সব চেয়ে জরুরি শরীরের মধ্যে নানাবিধ সরল এবং জটিল প্রোটিন অণুর গঠন এবং কোষের অভ্যন্তরে তাদের যাতায়াত বোঝা। বাজারচলতি এক্স-রে ক্রিস্ট্যালোগ্র্যাফি বা নিউক্লিয়ার ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স পদ্ধতিতে যা কোনও ভাবেই সম্ভব হচ্ছিল না।

আরও পড়ুন: কেন ফুটবল পাগল, বলবে কলকাতা

খোঁজ পড়ল ক্রায়ো-ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের। আর ঘটনাচক্রে জার্মান বংশোদ্ভূত নিউইয়র্কের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ওয়াকিম ফ্রাঙ্ক (৭৭) তখন এই যন্ত্র নিয়েই কাজ করছিলেন। এত দিন এই যন্ত্রে প্রোটিন অণুর দ্বিমাত্রিক ছবি পাওয়া যেত। ওয়াকিম দেখালেন ত্রিমাত্রিক (থ্রি-ডি) ছবি। ধাপে ধাপে যন্ত্রটিকে আরও সূক্ষ্মতা দিলেন সুইৎজারল্যান্ডের লাউসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নবিদ জাক দুবোশে (৭৫) এবং ব্রিটেনের গবেষক রিচার্ড হেন্ডারসন (৭২)।

মাস তিনেকেই চিচিং ফাঁক! জিকার পাশাপাশি অ্যালঝাইমার্সেরও অনেক রহস্য ফাঁস হয়ে গেল এই ত্রয়ীর কৃতিত্বে। আগামী দিনে এই গবেষণা ক্যানসার, ইবোলাকে কাবু করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলে মনে করা হচ্ছে। নোবেল কমিটির দাবি, ‘‘এই গবেষণা জৈব-রসায়নের দুনিয়ায় নিশ্চিত ভাবেই যুগান্তকারী।’’ ‘আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটি’-র অ্যালিসন ক্যাম্পবেলও বললেন, ‘‘শরীরে ভাইরাসের গতিবিধি বুঝতে এ যেন গুগল-আর্থ হাতে পাওয়া।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nobel Prize Dr. Dubochet Dr.Frank লোবেল
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE