Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

শুধু পরমাণু অস্ত্রে ভরসা নয়, বাহিনীর শক্তিও দ্রুত বাড়াচ্ছেন কিম জং উন

পরমাণু অস্ত্র বাড়িয়েই থেমে থাকছে না উত্তর কোরিয়া। একই সঙ্গে বাড়ানো হচ্ছে সশস্ত্র বাহিনীর অন্যান্য পরিকাঠামোও। সৈন্যসংখ্যা বাড়ছে, অস্ত্রশস্ত্র আধুনিক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, নৌসেনার জন্য নতুন যুদ্ধজাহাজ তৈরি হচ্ছে। সেনাবাহিনীর সুবিধার জন্য বিভিন্ন এলাকায় পাতা হচ্ছে নতুন রেল লাইনও। উপগ্রহ চিত্রেও ধরা পড়েছে উত্তর কোরিয়ার সামরিক সম্প্রসারণের এই ছবি।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৬ ১৭:২০
Share: Save:

পরমাণু অস্ত্র বাড়িয়েই থেমে থাকছে না উত্তর কোরিয়া। একই সঙ্গে বাড়ানো হচ্ছে সশস্ত্র বাহিনীর অন্যান্য পরিকাঠামোও। সৈন্যসংখ্যা বাড়ছে, অস্ত্রশস্ত্র আধুনিক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, নৌসেনার জন্য নতুন যুদ্ধজাহাজ তৈরি হচ্ছে। সেনাবাহিনীর সুবিধার জন্য বিভিন্ন এলাকায় পাতা হচ্ছে নতুন রেল লাইনও। উপগ্রহ চিত্রেও ধরা পড়েছে উত্তর কোরিয়ার সামরিক সম্প্রসারণের এই ছবি।

আমেরিকা উপগ্রহ চিত্রের মাধ্যমে সতর্ক নজর রাখছে উত্তর কোরিয়ার সব রকমের সামরিক কার্যকলাপের দিকে। সেই উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ করছেন কোরিয়া সংক্রান্ত বিষয়ের গবেষকরাও। জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউএস-কোরিয়া ইনস্টিটিউটের গবেষক কার্টিস মেলভিন হলেন মার্কিন মুলুকের অন্যতম সেরা কোরিয়া গবেষক। গোটা উত্তর কোরিয়ার ভূগোলটাই তাঁর হাতের তালুর মতো চেনা। মার্কিন সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মেলভিন বলেছন, ‘‘অনেকেই বলেন পরমাণু অস্ত্র হাতে এসে গেলে আর অন্যান্য প্রথাগত অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে খুব একটা ভাবতে হয় না। কিন্তু কিম জং উনের শাসনে উত্তর কোরিয়া পরমাণু অস্ত্র বানানোয় জোর দেওয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং প্রথাগত সামরিক পরিকাঠামো বাড়ানোর উপরেও সমান জোর দিচ্ছেন।’’

২০১১ সালে মৃত্যু হয় কিম জং উনের বাবা তথা উত্তর কোরিয়ার পূর্বতন শাসক কিম জং ইলের। তার পর শাসন ক্ষমতায় বসে উন বলেছিলেন, পরমাণু অস্ত্র বানানো এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন— এই দু’টি তাঁর প্রধান লক্ষ্য হবে। কিন্তু এই দু’টি ক্ষেত্রে জোর দিতে গিয়ে বিশাল সামরিক বাহিনীর প্রথাগত উন্নয়নকে যে তিনি একেবারেই ভুলে যাননি, তা উন বুঝিয়ে দিয়েছেন।

উত্তর কোরিয়ার পূর্ব উপকূলের বন্দর শহর ওয়নস্যানের কাছে সে দেশের নৌবাহিনীর একটি বন্দর রয়েছে। তার কাছাকাছি রয়েছে একটি যুদ্ধজাহাজ তৈরির কারখানা। উপগ্রহ চিত্রে দেখা গিয়েছে নৌসেনার ঘাঁটি এবং জাহাজ তৈরির কারখানার সম্প্রসারণ ঘটানো হয়েছে। কারখানা ও নৌ-ঘাঁটির মধ্যে একটি ব্রিজ তৈরি করা হচ্ছে। সেই ব্রিজের উপর দিয়ে সম্ভবত একটি রেললাইন পাতারও তোড়জোড় চলছে। নৌসোনার ঘাঁটির সঙ্গে যুদ্ধজাহাজ তৈরির কারখানাকে জুড়ে দেওয়ার এই প্রচেষ্টার অর্থ খুব স্পষ্ট বিশ্লেষকদের কাছে। নৌসেনায় নতুন নতুন যুদ্ধজাহাজ আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উন। গত বছর কিম জং উন ওই কারখানা ঘুরে দেখতে গিয়েছিলেন। সেই সফরের কিম বলেছিলেন, ডকইয়ার্ডের সক্ষমতা বাড়াতে হবে যাতে যুগের সঙ্গে খাপ খাইয়ে দ্রুত, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রণতরী তৈরি করা যায়। উত্তর কোরিয়ার নৌসেনার আধুনিকীকরণে ডকইয়ার্ডকে অবদান রাখতে হবে বলে কিম সে সময় আহ্বান জানান। উত্তর কোরিয়ার মিডিয়াতেই প্রকাশিত হয়েছিল সে রিপোর্ট। উপগ্রহ চিত্র বলছে, সেই লক্ষ্যেই এগোচ্ছে নৌসেনা ও ডকইয়ার্ড।

আরও পড়ুন:

আকাশেও সঙ্ঘাত! চিনা ফাইটার বিপজ্জনক ভাবে মার্কিন বিমানের খুব কাছে

উপগ্রহের পাঠানো ছবিতে দেখা গিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার বিমানবাহিনীরর ব্যবহারের উপযুক্ত করে তোলার জন্য বিভিন্ন বিমানঘাঁটির সম্প্রসারণ এবং মোরামতি হচ্ছে। নতুন কিছু বিমানঘাঁটিও তৈরি হচ্ছে। অবশ্য যে সব বিমানঘাঁটির মেরামতি বা সম্প্রসারণ হচ্ছে, তার অধিকাংশই কিম জং উনের ব্যক্তিগত বিমানবন্দর। কিম জং উনের ব্যক্তিগত হালকা এয়ারক্র্যাফ্ট রয়েছে এবং সেটি তিনি নিজেই চালান।

উত্তর কোরিয়ার আর্টিলারি বাহিনীর আধুনিকীকরণ ইতিমধ্যেই অনেকটা সেরে ফেলেছেন কিম। উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ করে আর এক গবেষক জোসেফ এস বার্মুডেজ জানাচ্ছেন, প্রায় প্রত্যেকটি সেনা ঘাঁটির সম্প্রসারণ হয়েছে। বেশ কিছু নতুন সেনাঘাঁটিও তৈরি হয়েছে। তার পাশাপাশি কিমের শাসনে উল্লেখযোগ্য ভাসে সেনাবাহিনীর বয়সের ভার কমিয়ে ফেলেছে উত্তর কোরিয়া। বছর পাঁচেক আগে ক্ষমতায় এসে কিম সেনাবাহিনীর অফিসারদের গড় বয়স দেখে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। দ্রুত সেই অবস্থা বদলে ফেলা হয়েছে। শারীরিক ভাবে অনেক বেশি সক্ষম লোকজন বেছে নেওয়া হয়েছে বাহিনীর জন্য। তরুণ প্রজন্মকে নেতৃত্বে আনা হয়েছে। পাঁচ বছরে আর্টিলারি ইউনিটগুলির চেহারা আমূল বদলে দেওয়া হয়েছে।

গবেষক বার্মুডেজ বলছেন, শুধুমাত্র পরমাণু অস্ত্রের হুঙ্কার না দিয়ে প্রথাগত সামরিক বাহিনীর উন্নতি ঘটানো কিম জং উনের সুচিন্তিত পদক্ষেপ। পরমাণু অস্ত্রের হুঙ্কার যতই দিন, চাইলেই যে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবেন না, তা কিম ভালই জানেন। তাই পরমাণু অস্ত্র ছাড়া বাকি যেটুকু সামরিক পরিকাঠামো রয়েছে, তাকেও মজবুত করে রাখতে চাইছেন তিনি। দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্তে বিশাল সেনা মোতায়েন করে রেখেছেন কিম জং উন। ওই সীমান্ত থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সোল। ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অপেক্ষায় থাকা বাহিনী চাইলে যে কোনও সময় সোল পর্যন্ত ঢুকে যেতে পারে, দক্ষিণ কোরিয়াকে সম্ভবত এই বার্তাই দিতে চাইছেন কিম জং উন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

North Korea Nuclear Might Conventional Military
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE