টাইমস স্কোয়্যারের মোড়ে ঘনিষ্ঠ এক চুম্বন! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষের আনন্দঘন মুহূর্তের এক চিরকালীন ছবি। এই সাদাকালো ছবিতেই বিখ্যাত হয়ে গিয়েছিলেন গ্রেটা ফ্রায়েডম্যান। নিউ ইয়র্ক শহরের রাস্তায় এক নাবিকের আবেগঘন চুম্বনে যিনি ধরা পড়েছিলেন। শনিবার চলে গেলেন সেই গ্রেটা। ভার্জিনিয়ায় নিজের বাড়িতে ৯২ বসন্ত কাটিয়েছেন তিনি। গ্রেটার ছেলে যশুয়া ফ্রায়েডম্যান জানিয়েছেন, শেষ সময়ে নিউমোনিউয়ায় ভুগছিলেন তাঁর মা।
১৪ অগস্ট ১৯৪৫। ঘড়ির কাঁটায় তখন ৫টা ৫১ মিনিট। যুদ্ধশেষে ঘরের পথে ফিরছেন মার্কিন সেনারা। নিউ ইয়র্কের শহরের রাস্তায় তখন থিকথিকে ভিড়। আশপাশের অনেক মার্কিন নাগরিকই একে অপরকে বিজয় দিবসের অভিনন্দন বার্তা দিচ্ছেন। নিজের বাড়ি ফিরছিলেন জর্জ মেন্ডোসাও। হঠাৎ নজরে পড়ল সাদা পোশাক পরা এক অচেনা তরুণীর দিকে। কোনও কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওই তরুণীর কোমর জড়িয়ে তাঁকে চুম্বন করে বসেন তিনি। সেই মুহূর্তটিই ফ্রেমবন্দি করেন বিখ্যাত ফোটোগ্রাফার অ্যালফ্রেড আইজেনস্টেড। চিরস্মরণীয় হয়ে থাকল বিংশ শতকের এক আইকনিক মুহূর্ত!
পরে লাইফ ম্যাগাজিনের পাতা জুড়ে ওই ছবিটি প্রকাশিত হয়েছিল। ছবির পাত্রপাত্রীকে অবশ্য ব্যক্তিগত ভাবে চিনতেন না তিনি। এমনকী, দীর্ঘ দিন ধরে অনেকেই জানতেন না তাঁদের পরিচয়। যদিও বহু মহিলাই দাবি করেছিলেন, ওই ছবির তরুণী আসলে তিনি। অবশেষে ২০১২ সালের ‘দ্য কিসিং সেলর’ বইয়ের লেখকদ্বয় জর্জ গ্যাল্ডোরসি এবং লরেন্স ভেরিয়া দাবি করেন, ওই ছবির নায়ক-নায়িকা আসলে নার্স গ্রেটা ফ্রায়েডম্যান এবং জর্জ মেন্ডোসা নামের এক নাবিক। নিজেদের দাবির সপক্ষে যুক্তিও দিয়েছেন তাঁরা। সে বছরেই একটি সাক্ষাৎকারে তাঁরা বলেছেন, “আমরা তিনটি পদ্ধতি ধরে বিষয়টির সত্যতা নিয়ে নিশ্চিত হয়েছিলাম। ফরেন্সিক অ্যানালিসিস, ফোটোগ্রাফিক ইন্টারপ্রিটেশনের সঙ্গে বেশ কিছু প্রযুক্তিগত সাহায্য নিয়ে এই সিদ্ধান্তে এসেছিলাম যে, ওই ছবিতে গ্রেটা এবং জর্জই ধরা পড়েছিলেন।”
নিউ ইয়র্ক শহরের টাইমস স্কোয়্যারের মোড়ে সেই বিখ্যাত চুম্বন।
ওই বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর সে দিনের স্মৃতিচারণা করেছিলেন জর্জ মেন্ডোসা। জানিয়েছিলেন, অগস্টের ওই সন্ধেয় প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করার তাড়া ছিল তাঁর। গ্রেটাকে একেবারেই চিনতেন না তিনি। তবে বলেছেন, “সেটা একটা মুহূর্ত ছিল বটে! যুদ্ধ হঠাৎই শেষ হয়ে গিয়েছিল। অন্যদের মতো আমিও বেশ উত্তেজিত ছিলাম। হয়তো কয়েক পাত্তর গিলেও ছিলাম। ...ফলে যখন সেই নার্সকে দেখলাম, আমি তাঁকে জড়িয়ে ধরলাম আর চুমু খেলাম!” তবে গ্রেটা নাকি প্রথমে বুঝতেই পারেননি এক জন অচেনা মানুষ তাঁকে এ ভাবে রাস্তায় চুমু খেয়ে বসবেন। এ নিয়ে অবশ্য সামান্য বিতর্কও তৈরি হয়েছিল। এক সাক্ষাৎকারে সে প্রসঙ্গে গ্রেটা বলেন, “আমি তাঁকে চুমু খাইনি। তিনিই আমাকে চুমু খেয়েছিলেন। আমি দেখতেই পাইনি কেউ এ ভাবে আমার দিকে এগিয়ে আসছেন। কোনও কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমি তাঁর আলিঙ্গনাবদ্ধ হয়েছিলাম।”
আরও পড়ুন
১২ হাজার ফুট উপরে শতাধিক যাত্রী নিয়ে আটকে গেল কেব্ল কার, তারপর...
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy