পাশতুন এলাকায় কি ট্যাকটিক্যাল নিউক্লিয়ার ওয়েপন প্রয়োগের কথা ভাবছে পাকিস্তান? —প্রতীকী ছবি।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী নিজেদের দেশেই পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগ করতে পারে। খাইবার-পাখতুনখোয়ায় পরমাণু হামলা চালাতে পারে পাক সেনা। স্বাধীনতাকামী পাশতুন জনগোষ্ঠীর নেতা উমর দাউদ খটক এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। একটি সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিকে এই খবর প্রকাশিত হয়েছে। ভারত এবং আফগানিস্তানে নাশকতার কাজে লিপ্ত হতে পাশতুনরা অস্বীকার করায়, পাক সেনাবাহিনী প্রতিশোধ নিতে শুরু করেছে বলে পাশতুন নেতা জানিয়েছেন।
পাখতুন বা পাশতুনরা হল পাকিস্তানের তৃতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠী। দেশের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে আফগানিস্তান লাগোয়া খাইবার-পাখতুনখোয়া প্রদেশে এই জনগোষ্ঠীই সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাঁরা দীর্ঘ দিন ধরেই পাক শাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। পাশতুন অঞ্চল বলতে মূলত যে অংশকে বোঝায়, তার অধিকাংশটাই বর্তমানে আফগানিস্তানের অন্তর্ভুক্ত। পাকিস্তানের খাইবার-পাখতুনখোয়া প্রদেশও ওই পাশতুন অঞ্চলের মধ্যেই পড়ে। কিন্তু পাকিস্তানের মধ্যে থাকায় এই প্রদেশে বসবাসকারী পাশতুনরা ‘স্বজন’দের থেকে বেশ খানিকটা বিচ্ছিন্ন। আফগান ও পাক পাশতুনরা চান সীমান্ত গৌণ হয়ে যাক, পাশতুনদের নিজেদের মধ্যে অবাধ আদান-প্রদান চলুক। কিন্তু তা হয়ে ওঠে না। আগে সীমান্তের দু’পাশের পাশতুনদের মধ্যে যেটুকু আদান-প্রদান ছিল, পাক-আফগান তিক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ার পর থেকে সেটুকুও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে পাশতুনদের মধ্যে ক্ষোভ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাক প্রশাসনের হাত থেকে মুক্তির দাবিও ক্রমশ জোরদার হচ্ছে খাইবার-পাখতুনখোয়া প্রদেশে।
খাইবার-পাখতুনখোয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এক সময় চাইতেন, পাকিস্তানের কবল থেকে মুক্ত হয়ে আফগানিস্তানের সঙ্গে সংযুক্ত হতে। কিন্তু এখন সে দাবি বদলে গিয়েছে। স্বাধীন পাশতুনিস্তান গঠনের দাবি উঠেছে। উমর দাউদ খটক বলেছেন, ‘‘আমরা পাশতুনিস্তান লিবারেশন আর্মি তৈরি করছি এবং শীঘ্রই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু হবে। আমরা আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন চাইব।’’
পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ পাকিস্তানে। এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রই ট্যাকটিক্যাল নিউক প্রয়োগে ব্যবহৃত হতে পারে। ছবি: সংগৃহীত।
কিন্তু পাকিস্তানের শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার কী এমন প্রয়োজনীয়তা যে পাশতুনদের সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করতে হচ্ছে? উমর দাউদ খটক জানিয়েছেন, পাশতুনদের উপর অভাবনীয় অত্যাচার শুরু করেছে পাক সেনা। খাইবার-পাখতুনখোয়া প্রদেশ থেকে পাশতুন জনগোষ্ঠীকে মুছে দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে বলে তাঁর দাবি। উমর দাউদ খটকের কথায়, ‘‘পাকিস্তানের সেনা আমাদের বিরুদ্ধে ভারী অস্ত্র-শস্ত্র ব্যবহার করছে। তারা আগে আমাদের সোভিয়েত রাশিয়া এবং আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে। এখন পাকিস্তান আমাদের জঙ্গি হিসেবে ভারত এবং আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে চাইছে। আমরা তা হতে দিচ্ছি না। তাই আমাদের উপর বোমা বর্ষণ শুরু হয়েছে।’’ পাশতুনদের অভিযোগ, পাক বিমানবাহিনী এখন পাশতুন এলাকায় বোমা বর্ষণ করছে। খাইবার-পাখতুনখোয়ার দখল ধরে রাখতে সেই প্রদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীকেই পাকিস্তান মুছে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে বলে পাশতুন নেতারা জানিয়েছেন। উমর দাউদ খটকের আশঙ্কা, পাশতুন জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পাক সেনা যে সব ভারী অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করতে শুরু করেছে, তাতে খুব শীঘ্রই পাশতুন জনপদগুলির উপর পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগ করা হবে। খাইবার-পাখতুনখোয়ার বিভিন্ন এলাকায় পরমাণু হামলা চালিয়ে পাকিস্তান পাশতুনদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে চায় বলে পাশতুন নেতার আশঙ্কা।
আরও পড়ুন: ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে ঘোর উদ্বেগে পাকিস্তান, নালিশ এমটিসিআর-এ
পাকিস্তান আসলে স্ট্র্যাটেজিক নিউক্লিয়ার ওয়েপন অর্থাৎ বড় পরমাণু অস্ত্রের পাশাপাশি অনেক ট্যাকটিক্যাল নিউক্লিয়ার ওয়েপন অর্থাৎ ছোট আকারের পরমাণু অস্ত্রও বানিয়েছে। যে কোনও ধরনের যুদ্ধক্ষেত্রেই এই পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করা যায়, কারণ এর প্রভাব স্ট্র্যাটেজিক নিউকের মতো বিশাল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে না, খুব ছোট এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকে। পাশতুনদের দাবি, সেই ট্যাকটিক্যাল নিউকই তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের ছক কষা হয়েছে। ওই সব ছোট ছোট পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগ করে পাশতুন গ্রাম এবং জনপদগুলিকে পাকিস্তান একে একে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে বলে তাঁদের কাছে খবর রয়েছে।
আরও পড়ুন: বড়সড় যুদ্ধ করতে হবে, পরমাণু যুদ্ধও হতে পারে: চিনা হুমকি আমেরিকাকে
খাইবার-পাখতুনখোয়ায় পাক সেনা এবং গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর তত্ত্বাবধানে অন্তত ৫০টি জঙ্গি শিবির চলছে বলে পাশতুন নেতা জানিয়েছেন। জামাত-এ-ইসলামি এবং জমিয়ত-উলেমায়ে-ইসলাম পরিচালিত মাদ্রাসাগুলির পড়ুয়াদের আইএসআই জঙ্গি হিসেবে নিয়োগ করছে বলেও খবর। এই জঙ্গিদের কখনও ভারতে, কখনও আফগানিস্তানে পাঠানো হচ্ছে। অনেককে আবার সিরিয়া-সহ মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশে পাঠানো হচ্ছে।
উমর দাউদ খটকের মন্তব্য, ‘‘সন্ত্রাসবাদ সারা বিশ্বের জন্যই বিপদ। তাই গোটা পৃথিবীর উচিত আমাদের সমর্থন করা। কারণ পাশতুনরা পাকিস্তানের হাত থেকে স্বাধীনতা পেলেই পৃথিবীর এই অঞ্চলে সন্ত্রাস বন্ধ হয়ে যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy