পাকিস্তানের সেনা অফিসারদের এখন প্রিয় গন্তব্য বাংলাদেশ। অক্টোবর ও নভেম্বরে পাকিস্তানের চার থেকে পাঁচটি সেনা প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করেছে। এর মধ্যে রয়েছে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের প্রতিনিধি দলও। এই প্রতিনিধি দলগুলি পাঁচ থেকে সাত দিন বাংলাদেশ থেকেছে। প্রকাশ্যে বলা হচ্ছে, দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করা এবং কৌশলগত সম্পর্ক বৃদ্ধির লক্ষ্যে পাক অফিসারদের সফর। কিন্তু সূত্রের মতে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উপরে পাক প্রভাব মজবুত করা এবং ভারত-বিরোধী তৎপরতা বাড়াতেই ঘন ঘন বাংলাদেশ সফর পাকিস্তানের সেনা অফিসারদের।
বাংলাদেশে মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের প্রধান হওয়ার পর থেকে সে দেশে যতটা ভারত-বিরোধিতা বেড়েছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ইউনূস প্রশাসনের পাকিস্তান প্রেম। বাণিজ্য থেকে শিক্ষা— এমনকি প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও ইসলামাবাদের সখ্যকে নিবিড় করতে চেয়েছে ঢাকা। আর সেই সুযোগ লুফে নিতে দেরি করেনি পাকিস্তান। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির বাংলাদেশের প্রশাসন এবং সেনাবাহিনীর মধ্যেকার ভারত-বিরোধী অংশকে চিহ্নিত করে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ নিবিড় করার চেষ্টাও করছেন।
গত বছরের ৫ অগস্টের পর থেকে পাক সেনা অফিসারদের বাংলাদেশে যে আনাগোনা শুরু হয়েছিল, তা উত্তরোত্তর বাড়ছে। দুই সেনাবাহিনীর বৈঠকে প্রশিক্ষণ, যৌথ মহড়া, অস্ত্র সরবরাহ ও গোয়েন্দা সহযোগিতা নিয়ে বহু সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সূত্রের খবর, শনিবার বাংলাদেশ সফরে গিয়েছেন পাকিস্তানের লেফটেন্যান্ট জেনারেল শাকির উল্লা খট্টক। তিনি বর্তমানে পাকিস্তানের হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ টাকসিলা (এইচআইটি)-র চেয়ারম্যান। আইএসআইয়ের ডিরেক্টর জেনারেল (অ্যানালিসিস) এবং ৭ম ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের জিওসি-র দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। তাঁর সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল গিয়েছে। ওই সূত্রটি জানাচ্ছে, খট্টকের সঙ্গে আসা প্রতিনিধি দলের একটা বড় অংশ আইএসআইয়ের অফিসার। গত ১৪ নভেম্বর থেকে আইএসআইয়ের একটি দলও বাংলাদেশ সফর করছে। আগামী ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত তাদের বাংলাদেশে থাকার কথা। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ওই দলটি বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে ঘুরছে।
অক্টোবরের শুরুতে লেফটেন্যান্ট জেনারেল তাবাসসুম হাবিবের নেতৃত্বে পাকিস্তানের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর করে। এর পরে ওই মাসের শেষ সপ্তাহে জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জার নেতৃত্বে আরও বড় প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের সেনাপ্রধান, নৌ-প্রধান, বায়ুসেনা প্রধান এবং ইউনুসের সঙ্গে বৈঠক করেছে। সূত্রের খবর, এই সফরগুলিতে মূলত চারটি ক্ষেত্রে চুক্তি হয়েছে, গোয়েন্দা সহযোগিতা, সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ, যৌথ মহড়া এবং অস্ত্র সরবরাহ বৃদ্ধি। গত ৮–১২ নভেম্বর পাকিস্তান নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল নবীদ আশরাফ ঢাকায় গিয়েছিলেন। তিনি পেকুয়ায় পাকিস্তানের সাবমেরিনের জন্য নোঙর (রিফুয়েল–রিফিট) করার জন্য আবেদন জানিয়েছেন। সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এর অর্থ হল বঙ্গোপসাগরে পাকিস্তানের আগ্রহ নতুন করে বাড়ছে।
ভারতীয় গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, পাক সেনাকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় ইউনূস সামনে এগিয়ে দিচ্ছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল কামরুল হাসানকে। কারণ, সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ়-জামানের মতো আওয়ামী লীগের সংস্রব রয়েছে, এমন ব্যক্তিদের দূরে রাখা হচ্ছে। ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্রের খবর, বাংলাদেশ এখন আর ভারতের সঙ্গে যৌথ মহড়া চালিয়ে যেতে আগ্রহী নয়। ভারত থেকে সামরিক সরঞ্জাম কেনার প্রস্তাবও বন্ধ হতে পারে। বাংলাদেশের নৌবাহিনী ইতিমধ্যে পাকিস্তান উপকূলে আয়োজিত ‘আমান’ মহড়ায় অংশ নিয়েছে, তাতে চিন ওশ্রীলঙ্কাও ছিল।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)