Advertisement
E-Paper

শহরে শুধু সাদা- হার-জিত যা-ই হোক, জিতবে ‘টিম ফুটবল’ই

আর্জেন্টিনার রক্তে যে ফুটবল আছে, ফুটবলের পাগলামি আছে, সেটা এই রবিবারের কাউন্টডাউনের প্রতিটা মুহূর্তে বোঝা যাচ্ছে। রবিবার হার-জিত যাই হোক, এই ক’দিনের জন্য ‘টিম ফুটবল’ জিতে গিয়েছে।

পরাগ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:১৮
 ফাইনালের দিনে গোটা দেশ  বিকেল চারটেয় কেঁপে উঠবে বিশ্বকাপের গানে, ‘আলবিসেলেস্তে’-র টানে। ‘আলবিসেলেস্তে’ মানে সাদা ও আকাশি নীল রং।

ফাইনালের দিনে গোটা দেশ বিকেল চারটেয় কেঁপে উঠবে বিশ্বকাপের গানে, ‘আলবিসেলেস্তে’-র টানে। ‘আলবিসেলেস্তে’ মানে সাদা ও আকাশি নীল রং। ফাইল চিত্র।

আর পনেরো মিনিট বাকি। স্থানীয় সময় বিকেল চারটেয় খেলা শুরু হবে। রাস্তা-ঘাট দেখলে মনে হবে যেন বন্‌ধ চলছে। দোকানের শাটার নামানো, বাস-মেট্রোয় লোক প্রায় নেই বললেই চলে। চারটে বাজতে পাঁচ মিনিট। শুরু হল আর্জেন্টিনার জাতীয় সঙ্গীত। রাস্তার মোড়ে, বার-রেস্তরাঁয়, বারান্দায় বারান্দায় এখন আর সেই নিস্তব্ধতা নেই। একটা গোটা দেশ গাইছে — ‘‘ও হুরেমস কোন গ্লোরিয়া মরির (আসুন, আমরা গৌরবের সঙ্গে মৃত্যুবরণের শপথ নিই)! ’’ গত এক মাস ধরে এমনই ছবি রাজধানী বুয়েনোস আইরেস-সহ আর্জেন্টিনার বিভিন্ন শহরে।

রাজনীতি, অর্থনীতি বা আবহাওয়া— এ দেশটা সব কিছুতেই বিভক্ত। ফুটবলেও ছবিটা সে রকম। রিভার প্লেট ও বোকা জুনিয়র্স— দেশের প্রধান দু’টি ফুটবল ক্লাবের প্রতি আনুগত্যে বিভক্ত এ দেশের ফুটবলপ্রেমীরা। কিন্তু বিশ্বকাপের সময়ে গোটা দেশ, গোটা শহর, বিকেল চারটেয় কেঁপে উঠবে বিশ্বকাপের গানে, ‘আলবিসেলেস্তে’-র টানে। ‘আলবিসেলেস্তে’ মানে সাদা ও আকাশি নীল রং। আর্জেন্টিনার জাতীয় পতাকার রং। এ দেশের জাতীয় ফুটবল দলের ‘ডাকনাম’ও।

বছর ছয়েক হল আর্জেন্টিনায় আছি। একটা গোটা দেশ কী ভাবে ফুটবল নিয়ে মেতে থাকতে পারে, সেটা এখানে থাকলে বোঝাযায়। বুয়েনোস আইরেস শহরের উত্তর দিকে অনেকখানি সবুজ, আমাদের ঢাকুরিয়া লেকের মতো। বিশ্বকাপের খেলার দিনগুলোতে এখানে বসানো হয়েছে বিশাল স্ক্রিন, হাজারে হাজারে মানুষ একসঙ্গে গলা ফাটাচ্ছেন আর্জেন্টিনার জন্য। আমি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াই, সেখানেও খেলার সময়ে সবাই একসঙ্গে বড় অডিটোরিয়ামে খেলা দেখায় মেতে ওঠেন। আর্জেন্টিনার খেলার সময়ে মিটিং, ক্লাস, পরীক্ষা— সব কিছু বাতিল, ওই নব্বই মিনিট সব কিছু ভুলে থাকা যায়।

গত বছর কোপা আমেরিকার ফাইনালের সময়ে আমরা ছিলাম আর্জেন্টিনার সৈকত শহর মার দেল প্লাতায়। রাত এগারোটার সময় ম্যাচ শেষ হওয়ার বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে কাতারে কাতারে লোক রাস্তায় নেমে আসল, চারদিকে শুধু উৎসব আর বাঁশির আওয়াজ। এই বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের পর থেকে প্রত্যেকটা ম্যাচের পরে একই ভাবে পাল্টে যাচ্ছে বুয়েনোস আইরেস শহর। শহরের কেন্দ্রে ওবেলিস্কোতে লাখে লাখে মানুষ— শুধু একটাই রং চোখে পড়ে— নীল সাদা।

কাল ফাইনাল। আবেগ, আশা, প্যাশন, স্বপ্ন সব মিলেমিশে এক হয়ে গিয়েছে। আর্জেন্টিনার রক্তে যে ফুটবল আছে, ফুটবলের পাগলামি আছে, সেটা এই রবিবারের কাউন্টডাউনের প্রতিটা মুহূর্তে বোঝা যাচ্ছে। রবিবার হার-জিত যাই হোক, এই ক’দিনের জন্য ‘টিম ফুটবল’ জিতে গিয়েছে। যে বন্ধুরা অনেক বছর কথা বলত না, তারা আবার এই রবিবার একসঙ্গে বসে খেলা দেখবে। যে রিভার-বোকা ফ্যানেরা প্রতি মুহূর্তে তর্ক করত, তারা এক হয়ে এই রবিবার ‘লা স্কালোনেতা’র (কোচ লিয়োনেল স্কালোনির নামে এখন জাতীয় ফুটবল দল এই নামেই পরিচিত) জন্য গলা ফাটাবে, আর ঠিক বিকেল চারটেয় (স্থানীয় সময়) দেশের প্রতিটা প্রান্ত থেকে ধ্বনি উঠবে— ‘ভামোস, ভামোস আর্জেন্টিনা’।

আপনারাও গলা মেলাবেন তো?

FIFA 2022 Argentina football worldcup final
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy