Advertisement
E-Paper

‘ট্রেন থেকে বেরোতেই পারল না আহতেরা, গুলি চালিয়ে মেরে দিল’! বালোচ জঙ্গিদের নির্মমতার বর্ণনা যাত্রীদের মুখে

পরিচয়পত্র দেখে দেখে যাত্রীদের হত্যা করা হচ্ছিল বলে দাবি করেছেন বালোচিস্তানের ট্রেন থেকে মুক্তি পাওয়া যাত্রীরা। মহিলা এবং শিশুদের আলাদা করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২৫ ১৪:০২
Passengers of Balochistan train shares experience

বালোচিস্তানের ট্রেন থেকে উদ্ধারের পর আহত যাত্রীকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: রয়টার্স।

পাকিস্তানের বালোচিস্তানে অপহৃত ট্রেন থেকে যে যাত্রীরা বেঁচে ফিরেছেন, ঘটনাবলির পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দিয়েছেন তাঁরা। কখন ট্রেন দাঁড়িয়ে পড়ল, কখন সেই ট্রেনের কামরায় ঢুকে পড়লেন বালোচ বিদ্রোহীরা, তাঁরা ঠিক কী কী করলেন, বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যাচ্ছে। যাত্রীদের অনেককে শুরুতেই মেরে ফেলেছিলেন বিদ্রোহীরা। পরিচয়পত্র দেখে দেখে যাত্রীদের হত্যা করা হচ্ছিল বলে দাবি। আবার কিছু কিছু যাত্রীকে পণবন্দি করে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বুধবার রাতেই এই অভিযান সমাপ্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। সেনার গুলিতে মোট ৩৩ জন বিদ্রোহী নিহত হয়েছেন বলে দাবি। ৩০০-রও বেশি যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়েছে। পাক সেনা জানিয়েছে, বিদ্রোহীদের হাতে ২৮ জন নিহত হয়েছেন। যদিও মোট মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে।

পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের বাসিন্দা নোমান আহমেদ। ইদ উপলক্ষে কোয়েটা থেকে তিনি জাফর এক্সপ্রেসে বাড়ি ফিরছিলেন। অপহরণের মুহূর্তের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘ট্রেন চলছিল। আচমকা একটা বিস্ফোরণের শব্দ পেলাম। আমরা সকলে কামরার মেঝেতে শুয়ে পড়েছিলাম। তার পর দ্রুত কামরার দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম গুলি চলছে, দরজা বন্ধ করে রাখতে পারলে বেঁচে যাব।’’ কিন্তু কিছু ক্ষণের মধ্যেই আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বালোচ বিদ্রোহীরা ওই কামরায় প্রবেশ করেন।

নোমানের বর্ণনা অনুযায়ী, কামরায় ঢুকে মহিলা এবং শিশুদের আলাদা করছিলেন বিদ্রোহীরা। তাঁদের রেখে বাকি যাত্রীদের ট্রেন থেকে বার করা হয়েছিল। তাঁদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল দুর্গম পাহাড়ি এলাকায়। এই সময়ে কয়েক জন যাত্রী আহত হয়ে পড়েন। তাঁরা কামরা থেকে বেরোতে পারেননি। নোমান বলেন, ‘‘প্রথমে ওদের ট্রেন থেকে নেমে আসার নির্দেশ দেওয়া হল। যখন ওরা বেরোতে পারল না, বন্দুকধারীরা আবার কামরার ভিতরে ঢুকল এবং ওদের সবাইকে গুলি করে মেরে দিল।’’

সংবাদ সংস্থা এএফপিকে আর এক যাত্রী মুহাম্মদ নভীদ জানিয়েছেন, প্রত্যেকের পরিচয়পত্র দেখতে চাইছিলেন বালোচ বিদ্রোহীরা। কাদের হত্যা করা হবে, তা বাছাই করা হচ্ছিল। নভীদের কথায়, ‘‘ওরা আমাদের এক এক করে ট্রেন থেকে নেমে আসতে বলল। মহিলাদের আলাদা করে সরে যেতে বলল। বয়স্কদেরও আলাদা করা হল। ওরা বলেছিল, কারও কোনও ক্ষতি করবে না। ১৮৫ জন যাত্রী ট্রেন থেকে নেমে বাইরে দাঁড়িয়েছিলেন। পরিচয়পত্র দেখে বেছে বেছে তাঁদের মধ্যে অনেককে মেরে ফেলা হল।’’

৩৮ বছর বয়সি বাবর মাসিহ্‌ জানিয়েছেন, তাঁর পরিবারের এক সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য জাফর এক্সপ্রেসে উঠেছিলেন। অনেক ক্ষণ ধরে অনুরোধ করায় বিদ্রোহীরা তাঁদের ছেড়ে দেন। তাঁর কথায়, ‘‘মহিলারা অনেক করে অনুরোধ করেছিল। আমাদের যেতে দিল। বলল, দৌড়ে ওই এলাকা ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হবে। পিছন ফিরে তাকালে চলবে না। আমরা দৌড়তে দৌড়তে দেখলাম, আরও অনেকে আমাদের সঙ্গেই ছুটছে।’’

কোয়েটা থেকে পেশোয়ার যাওয়ার পথে বালোচিস্তানের বোলানে জাফর এক্সপ্রেস আটকান বিদ্রোহীরা। ট্রেন অপহরণ করে নেওয়া হয়। ৪৫০ জন যাত্রী ছিলেন ওই ট্রেনে। পাক নিরাপত্তা বাহিনী বিদ্রোহীদের সঙ্গে গুলির লড়াই শুরু করে মঙ্গলবার রাত থেকেই। বুধবার রাতে প্রায় ৩০ ঘণ্টার অভিযানের পর পাক সেনা জানায়, সব বিদ্রোহী নিহত হয়েছেন। যাত্রীদের উদ্ধার করা হয়েছে।

Train Hijacked Pakistan Balochistan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy