Advertisement
E-Paper

করাত এনে কেউ কাটছেন রড, কেউ তুলে নিচ্ছেন ইট, ইউনূসের বার্তার পরেও লুট চলছেই মুজিবের বাড়িতে

প্রথমে এই নিয়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণকে দুষলেও পরে ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার কড়া পদক্ষেপ করার কথা বলেছে। কিন্তু তার পরেও শুক্রবার সকালে মুজিবের বাড়িতে লুট থামেনি।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৪:৩১
মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার কড়া পদক্ষেপ করার কথা বললেও মুজিবের ধানমন্ডির বাড়িতে লুট থামেনি।

মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার কড়া পদক্ষেপ করার কথা বললেও মুজিবের ধানমন্ডির বাড়িতে লুট থামেনি। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িটি। বেরিয়ে পড়েছে লোহার কঙ্কাল। সেই কাঠামো থেকেই লোহার রড কেটে নিয়ে যাচ্ছেন লোকজন। এমনকি ভেঙে পড়া সেই বাড়ির ইটও। বুধবার রাতে বাড়ির একাংশ ভেঙে ফেলার পরে আসবাবপত্র, দরজা তুলে নিয়ে গিয়েছেন স্থানীয়েরা। এ বার ঢালাইয়ের লোহা, ইটও খুলে নেওয়া হচ্ছে। প্রথমে এই নিয়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণকে দুষলেও পরে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার কড়া পদক্ষেপ করার কথা বলেছে। কিন্তু তার পরেও শুক্রবার থামেনি মুজিবের বাড়িতে লুট। এমনটাই দাবি করল বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’।

‘প্রথম আলো’-র প্রতিবেদন জানিয়েছে, এক ব্যক্তি শুক্রবার বেলা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু মুজিবের বাড়ি থেকে প্রায় ছয় কেজি লোহার রড কেটে নিয়ে গিয়েছেন। সঙ্গে করাত এনেছিলেন। সেই করাত দিয়ে সারা সকাল ধরে রড কেটেছেন তিনি। এত রড তিনি কেন কেটেছেন, তা-ও জানিয়েছেন সংবাদমাধ্যমকে। তাঁর দাবি, মুজিবের বাড়ি থেকে কেটে নিয়ে যাওয়া রড বাজারে বিক্রি করবেন। সেই টাকায় পরিবারের সকলকে একটু ভালমন্দ খাওয়াবেন পেশায় দিনমজুর ওই ব্যক্তি। আর এক মহিলা একটি ব্যাগ নিয়ে এসে তাতে ভরেছেন ভাঙা লোহার টুকরো। তিনি জানিয়েছেন, দোকানে ওই টুকরোগুলি বিক্রি করবেন। কেউ কেউ আবার ভগ্নস্তূপ থেকে খুঁজে বার করছেন গোটা ইট। সেগুলি জড়ো করে নিয়ে যাচ্ছেন।

মুজিবের সেই বাড়ির সামনে উৎসুকদের ভিড়ও কম নেই। অনেকেই ভাঙা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে নিজস্বী তুলছেন। অনেকে আবার বাড়ির সামনে রাস্তা দিয়ে গাড়িতে চেপে যাওয়ার সময় থামিয়ে দিচ্ছেন গাড়ি। তার পরে নেমে একটু ঘুরে দেখছেন বাড়ির ভগ্নস্তূপ। তার সামনে উপড়ে পড়ে রয়েছে সাজানো বাগানের শৌখিন গাছ।

বুধবার রাত থেকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িটি ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালেও তা চলেছে। ‘প্রথম আলো’ জানিয়েছে, ছ’তলা ভবনে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে ঢুকে পড়েছিলেন বিক্ষোভকারীরা। সেই জাদুঘরও ভাঙা হয়। সূত্রের খবর, অনেক মূল্যবান এবং দুষ্প্রাপ্য বই ওই জাদুঘরে ছিল। সে সব তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সংবাদমাধ্যমের দাবি, কেউ কেউ রিকশা ডেকে বইয়ের বড় বড় কার্টন তুলে নিয়ে গিয়েছেন। মুজিবের স্মৃতিবিজড়িত বই ছাড়াও তাঁর পরিবারের সদস্যদের লেখা বইও জাদুঘরে ছিল। সেগুলিও তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

বৃহস্পতিবার বিকেল নাগাদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার প্রথমে একটি বিবৃতি দিয়ে এই ঘটনার সমালোচনা করলেও হাসিনাকেই দুষেছিল। ওই বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছিল, হাসিনার ‘সহিংস আচরণের প্রতিক্রিয়াতেই’ ভাঙচুর করা হয়েছে মুজিবের বাড়িতে। আরও দাবি করা হয়, ‘ভারতে বসে’ হাসিনা জুলাইয়ের গণআন্দোলন নিয়ে যে ‘প্ররোচনামূলক’ মন্তব্য করেছেন, তারই প্রভাব পড়েছে মানুষের উপর। হাসিনা যাতে ভারত থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বক্তৃতা করতে না-পারেন, নয়াদিল্লিকে তা নিশ্চিত করতে লিখিত অনুরোধও করে ঢাকা। তলব করা হয় ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় উপরাষ্ট্রদূতকেও। তবে বৃহস্পতিবার রাতেই দ্বিতীয় বিবৃতি দিয়ে নিজেদের কড়া অবস্থানই স্পষ্ট করতে চেয়েছে ইউনূসের সরকার। সমাজমাধ্যমে ইউনূসের অ্যাকাউন্টে সেই বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘‘অন্তর্বর্তী সরকার গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে, কতিপয় ব্যক্তি এবং গোষ্ঠী দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালানো এবং অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করছে। এই ধরনের কর্মকাণ্ড সরকার শক্ত হাতে প্রতিহত করবে।’’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘‘বাংলাদেশের নাগরিকদের প্রাণ এবং সম্পত্তি রক্ষায় প্রস্তুত অন্তর্বর্তী সরকার। উস্কানিমূলক কাজের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা হলে তার জন্য দায়ী ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ করবে আইনশৃঙ্খলারক্ষী বাহিনী। দোষীদের বিচারপ্রক্রিয়ার মুখোমুখি দাঁড় করানো হবে।’’ যদিও সেই কড়া বার্তাই সার বলে মনে করছেন ধানমন্ডির বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁদের দাবি, এই বার্তার পরেও মুজিবের বাড়ি থেকে লুট চলছেই।

গত বছরের ৫ অগস্ট বাংলাদেশে হাসিনার সরকারের পতন হয়। সেই সময়েও বিক্ষুব্ধ জনতা ভাঙচুর করেছিল মুজিবের ধানমন্ডির এই বাড়ি। তার পর থেকে বাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থাতেই পড়েছিল। বুধবার হাসিনার সরকারের পতনের ছ’মাসের মাথায় আবার বিক্ষোভকারীরা তাণ্ডব চালালেন সেই বাড়িতে। এই বাড়িতেই পাঁচ দশক আগে গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিলেন মুজিবুর এবং তাঁর স্ত্রী, তিন পুত্র, দুই পুত্রবধূ।

Sheikh Hasina Bangabandhu Sheikh Mujibur Muhammad Yunus
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy