Advertisement
E-Paper

ছবি পরে, আগে বাচ্চাগুলো বাঁচুক

রোজকার কাজের দিনের মতোই শুরু হয়েছিল সেই শনিবারটা। কিন্তু শেষটা হল একেবারে অন্য রকম। গত ১৫ এপ্রিল। পেশার তাগিদে সিরিয়ার আলেপ্পোয় ছবি তুলতে গিয়েছিলেন আব্দ আলকাদের হাবাক। হঠাৎই শুনলেন, বিস্ফোরণ হয়েছে শরণার্থীদের বাসের কনভয়ে। এ হল গত সপ্তাহের সেই হামলা, যেখানে নিহতের সংখ্যা ছুঁয়েছিল ১২৬।

• শোকার্ত: ভেঙে পড়েছেন চিত্রসাংবাদিক হাবাক। টুইটারে ছবিটি দিয়েছেন এক সহকর্মী।

• শোকার্ত: ভেঙে পড়েছেন চিত্রসাংবাদিক হাবাক। টুইটারে ছবিটি দিয়েছেন এক সহকর্মী।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৭ ০২:০৩
Share
Save

রোজকার কাজের দিনের মতোই শুরু হয়েছিল সেই শনিবারটা। কিন্তু শেষটা হল একেবারে অন্য রকম।

গত ১৫ এপ্রিল। পেশার তাগিদে সিরিয়ার আলেপ্পোয় ছবি তুলতে গিয়েছিলেন আব্দ আলকাদের হাবাক। হঠাৎই শুনলেন, বিস্ফোরণ হয়েছে শরণার্থীদের বাসের কনভয়ে। এ হল গত সপ্তাহের সেই হামলা, যেখানে নিহতের সংখ্যা ছুঁয়েছিল ১২৬। খবর পেয়েই সাংবাদিকের মন জানান দিয়েছিল, ‘ভাল’ ছবি চাই।

ঘটনাস্থলে গিয়ে হাবাক নাকি ক্যামেরা অন করেও ফেলেছিলেন। কিন্তু ছবি তোলা হয়ে ওঠেনি। অন্তত ৬৮ জন শিশু প্রাণ হারিয়েছিল ওই বিস্ফোরণে। পরে হাবাক বলেছেন, ‘‘ভয়াবহ দৃশ্য! বাচ্চাগুলো কাতরাচ্ছে। কেউ কেউ নিথর। তাকাতে পারছিলাম না।’’ তিনি ঠিক করে ফেলেন, ছবি পরে হবে। আগে বাচ্চাগুলো বাঁচুক। কিন্তু যে বাচ্চাটিকে প্রথম ছুঁয়ে দেখেন, সে-ই তো মৃত! ছুটে যান আর এক জনের দিকে। এক জন চেঁচিয়ে বলে, ‘‘ও দিকে যাবেন না। বাচ্চাটা বেঁচে নেই।’’ হাবাক শোনেননি। তাঁর যেন মনে হয়, ছোট্ট বুকটা একটু ওঠানামা করছে। এক ঝটকায় কোলে তুলে নেন শিশুটিকে।

হাবাক পরে বলেছেন, ‘‘সর্বশক্তি দিয়ে আমার বাঁ হাতটা আঁকড়ে ছিল বাচ্চাটা। চোখ দু’টো আমার চোখের দিকে।’’ হাবাক যখন শিশুটিকে নিয়ে আসছেন, তখন তাঁর ছবি তোলেন সতীর্থ মহম্মদ আলরাগেব। তিনি কেন যাননি বাচ্চাদের উদ্ধারে? আলরাগেব বলছেন, ‘‘ভাবলাম পরে যদি বিতর্ক হয়! তাই সব রেকর্ড করা থাক। বন্ধুর কাজে গর্বিত।’’

ছ’সাত বছরের ছেলেটাকে অ্যাম্বুল্যান্সে পৌঁছে দিয়েছিলেন হাবাক। তার পরে আবার ছুটে গিয়েছিলেন অন্যদের সাহায্যে। এখনও জানেন না ছেলেটা কেমন আছে। আদৌ বেঁচে আছে কি না। সে দিন প্রাণ খুঁজে ফিরতে ফিরতে একটা সময়ে ভেঙে পড়েন তরুণ চিত্রগ্রাহক। সহকর্মীদের তোলা ছবিতে দেখা গিয়েছে, একটি শিশুর দেহের পাশে হাঁটু মুড়ে বসে হাউহাউ করে কাঁদছেন হাবাক। নামানো হাতে নিজের ক্যামেরাটা তখনও ধরা। অনেকের মতে, আগাগোড়া অন থাকায় হাবাকের ওই ক্যামেরাতেও সম্ভবত ধরা পড়ে গিয়েছে মর্মান্তিক কিছু ছবি।

খবর জোগাড় বা ছবি তোলার সময়ে সব আবেগকে দূরে ঠেলে রাখাই দস্তুর সংবাদ জগতে। অনেক সময় সাংবাদিক ও চিত্র সাংবাদিকদের এ জন্য সমালোচিত হতে হয়। বিপর্যয় যা-ই ঘটুক, পেশার তাগিদ ছাপিয়ে আর্তের পাশে দাঁড়ানো যায় কি? এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। দু’বছর আগে তুরস্কের সৈকতে নিষ্প্রাণ আলান কুর্দির ছবি ফের উস্কে দিয়েছিল সেই বিতর্ক। সে বছরেই হাঙ্গেরির রোজস্কে সীমান্তে পুলিশি ঘেরাটোপ টপকে ঢুকে পড়া, বাচ্চা কোলে এক শরণার্থীর ছবি তুলতে লাথি মেরে তাঁকে ফেলে দেন এক মহিলা ক্যামেরা অপারেটর। শেষমেশ চাকরি খোয়ান পেত্রা লাজলো নামে ওই মহিলা। হাবাক কিন্তু অন্য গল্প লিখলেন— মানবতার।

Mr Habak Syria Aleppo

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}