গত মে মাসে সিঁদুর অভিযান করে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। পাকিস্তানের বহাওয়ালপুরে সেই জামা-এ-মসজিদ সুভান আল্লাহ্ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুইমিং পুল খুলে দেওয়া হল। ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ-এ-মহম্মদের। তারাই সমাজমাধ্যমে ছবি পোস্ট করে সেই পুল খোলার কথা জানিয়েছে। মনে করা হচ্ছে, বহাওয়ালপুরের ওই ঘাঁটি পুনরায় সক্রিয় হয়ে ওঠারই ইঙ্গিত দিতে চেয়েছে জইশ।
বহাওয়ালপুরের ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ৬০০ পড়ুয়া রয়েছে। ২০১৯ সালে পুলওয়ামার ঘটনার পরে পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের স্বরাষ্ট্র দফতর দাবি করেছিল, বহাওয়ালপুরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব তারাই নিচ্ছে। সেখানে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা চলবে। উচ্চশিক্ষারও ব্যবস্থা করা হবে। যদিও অভিযোগ, বাস্তবে তেমন কিছুই হয়নি। বিভিন্ন সময়ে বহাওয়ালপুরের ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুলওয়ামা কাণ্ডে জড়িত জইশ জঙ্গিদেরও ব্যবহার করতে দেখা গিয়েছে। সংবাদমাধ্যম ‘দ্য প্রিন্ট’ জানিয়েছে, ‘কর্মস্থল’-এ যাওয়ার আগে এই বহাওয়ালপুরের শিবিরেই দিন কাটায় জঙ্গিরা। সেখানে থাকার সময় ওই পুল ব্যবহার করে তারা।
২০১৯ সালে পুলওয়ামায় সিআরপিএফ জওয়ানদের কনভয় লক্ষ্য করে আত্মঘাতী হামলা চালায় জইশ জঙ্গিরা। কাশ্মীরে সেই অভিযানে যাওয়ার আগে বহাওয়ালপুরের এই শিবিরের পুলেই নেমে নিজেদের ছবি তুলেছিল চার জঙ্গি— মহম্মদ উমর ফারুক, তালহা রশিদ আলভি, মহম্মদ ইসমাইল আলভি, রশিদ বিল্লা। সেই ছবি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়েছে। এ বার সেই পুল খোলার ছবি আবার প্রকাশ করল জইশ।
গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলা হয়। তাতে প্রাণ যায় ২৬ জন জনের। তার পরেই পাকিস্তানের জঙ্গিদের নিকেশ করতে সিঁদুর অভিযান চালায় ভারতীয় বায়ুসেনা। খবর, তাতে ধ্বংস হয় বাহাওয়ালপুরে জইশের জঙ্গি ঘাঁটি। বহাওয়ালপুরের ওই শিবিরের পুল নতুন করে খোলার বিষয়টি কি ‘তাৎপর্যপূর্ণ’? ভারত সরকারের এক আধিকারিক ‘দ্য প্রিন্ট’-কে বলেন, ‘‘সুইমিং পুল খুলে যাওয়ার বিষয়টি সামান্য বলে মনে হলেও তা নয়। বহাওয়ালপুরের গরিব বাচ্চাদের কাছে এটি বড় বিষয়। মনে রাখতে হবে, স্থানীয় ওই গরিব বাচ্চাদেরই জঙ্গিদলে নিয়োগ করে জইশ। এর থেকে একটি বিষয়ই স্পষ্ট হয় যে, জঙ্গি কার্যকলাপ বন্ধ করার কোনও ইচ্ছাই নেই জইশের।’’
আরও পড়ুন:
গত মে মাসে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাতের আবহ তৈরি হয়। তার পরে গত কয়েক দিন ধরে আবার সক্রিয় হতে দেখা গিয়েছে জইশ জঙ্গিদের। সম্প্রতি অযোধ্যার রামমন্দির ধ্বংস করার হুমকি দিয়ে নিজের বক্তব্য প্রকাশ করেছেন এমির মাসুদ আজ়হার আলভি। ভারতের সিঁদুর অভিযানের পরে আজ়হার দাবি করেছিলেন, তাঁর দিদি-জামাইবাবু এবং তাঁদের সন্তানদের শেষকৃত্যের ব্যবস্থা তাঁরা নিজেরাই করেছেন। তার পর থেকে পাকিস্তানের বিভিন্ন জায়গায় মিছিলও করে জইশের সদস্যেরা। জুনের শুরুতে ঘটা করে ধর্মীয় নেতা আবদুল আইজ়াজ ইসারের শেষকৃত্য করেন জইশ নেতারা। এই ইসার ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার ডাক দিয়েছিলেন। গত ৯ জুন জঙ্গিদের ছবি, ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে দিতে নিষেধ করে দেন জইশ নেতৃত্ব। জানান, এটা তাঁদের ধর্মীয় আইনের পরিপন্থী। তবে এই ঘোষণার আগে সাম্প্রতিক সময়ে নিজেদের কার্যকলাপের অনেক ছবিই পোস্ট করেছে জইশ জঙ্গিরা। বহাওয়ালপুরের পুল খোলার কথাও সমাজমাধ্যমেই দাবি করেছে তারা।
প্রসঙ্গত, পুলওয়ামা হামলার পরে পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের প্রশাসন দাবি করেছিল, এই বহাওয়ালপুরের শিবির পরিচালনা করবে সরকার। সেখানে শিক্ষাদান করা হবে। স্থানীয়েরা ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালানোর জন্য অনুদান দিয়েছিলেন বলেও সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়। বহাওয়ালপুরের তৎকালীন ডেপুটি কমিশনার শোজ়েব সইদ দাবি করেন, জইশ জঙ্গিদের সঙ্গে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনও যোগ নেই। ‘দ্য প্রিন্ট’-এর প্রতিবেদন বলছে, ২০১৯ সালেই জামা-এ-মসজিদ সুভান আল্লাহ্ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জমি কিনে নেন আজ়হারের ভাই আবদুল রউফ রশিদ আলভি। প্রায় দেড় কোটি পাকিস্তানি রুপি দিয়ে ওই জমি কেনেন তিনি। প্রসঙ্গত, এই আলভিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল আমেরিকা। খাস পাকিস্তানেই নিষিদ্ধ জইশ। অভিযোগ, তার পরেও সে দেশে সক্রিয় এই জঙ্গি গোষ্ঠী। এ বার ভারতের হামলায় বিধ্বস্ত ‘জঙ্গি ঘাঁটি’ সক্রিয় হওয়ার ইঙ্গিত দিল।