শিয়ার টেনিস খেলোয়াড় মিরা আনদ্রিভা সবে বেসলাইনের উপরে দাঁড়িয়ে বলটা সার্ভ করতে যাবেন, তখনই ঝুপ করে আলো নিভে গেল। মাদ্রিদ ওপেন টেনিস টুর্নামেন্টের গোটা স্টেডিয়াম মিশকালো অন্ধকার। এক এক করে জ্বলে উঠছে দর্শকদের মোবাইলের আলো। তবে শুধু স্টেডিয়ামই নয়, স্পেন, পর্তুগাল ও ফ্রান্সের একাধিক অংশ ততক্ষণে মুখোমুখি এই হঠাৎ বিদ্যুৎ বিভ্রাটের। অবশেষে প্রায় ১৮ ঘণ্টা পরে ধীরে ধীরে ফিরছে বিদ্যুৎ। যদিও বিভ্রাটের যথাযথ কারণ শত মাথা ঘামিয়েও বের করতে পারছে না এই তিন দেশের প্রশাসন। ঠিক কী কারণে এই বিভ্রাট ঘটল, তা নিয়ে ক্রমশ গভীর হচ্ছে ধোঁয়াশা।
স্পেনের বিদ্যুৎ সংস্থা জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে সে দেশের ৯৯ শতাংশেরও বেশি এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হয়েছে। ফলে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন মানুষ। চালু হয়েছে গণপরিবহণও। পর্তুগালের বিদ্যুৎ সংস্থা জানিয়েছে, দেশের বিদ্যুতের পরিস্থিতি এখন যথেষ্ট স্থিতিশীল।
সোমবার হঠাৎ করেই অন্ধকারে ডুবে যায় স্পেন ও পর্তুগাল। বিদ্যুতের সমস্যা দেখা যায় ফ্রান্সের একাংশেও। স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে কাজ করা বন্ধ করে দেয় ট্রাফিক সিগনাল। প্রবল যানজটে গাড়ি ও মানুষের চলাচল কার্যত স্থব্ধ হয়ে যায়। বাতিল করতে হয় একাধিক বিমান। বন্ধ হয়ে যায় ট্রেন চলাচল, ফলে স্টেশনে ও ট্রেনের মধ্যেই আটকে পড়েন বহু যাত্রী। স্পেনের প্রশাসন এই অবস্থাকে জরুরিকালিন অবস্থা বলে ঘোষণা করে দাবি করেছে, ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ বিদ্যুৎ বিভ্রাট এটি। এই বিভ্রাটের ফলে হাসপাতালে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগীরা।
এ দিকে একই অবস্থা হয় মাদ্রির ওপেনের স্টেডিয়ামেরও। অন্ধকার হয়ে যেতেই মোবাইলের আলো জ্বালাতে বাধ্য হন দর্শকেরা। ব্রাজ়িলের টেনিস খেলোয়াড় ফার্নান্দো রম্বলি জানিয়েছেন, বিভ্রাটের সময় তিনি এলিভেটরে ছিলেন। বেশ কিছু ক্ষণ অন্ধকারে আটকে থাকতে হয় তাঁকে। অবশ্য এর পরে সমস্ত খেলাই এক দিনের জন্য বাতিল করেন কর্তৃপক্ষ।
আচমকা এই বিদ্যুৎ বিভ্রাটে বিঘ্নিত হয়েছে স্পেন ও পর্তুগালের মেট্রো পরিষেবাও। দুটি স্টেশনের মাঝের সুড়ঙ্গে দাঁড়িয়ে পড়ের একের পর এক ট্রেন। বিপাকে পড়েন যাত্রীরা। শেষ পাওয়া তথ্য অনুসারে, বেলজিয়ামেরও বেশ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল।
পরিস্থিতি সামাল দিতে সোমবারই জরুরি বৈঠকের ডাক দিয়েছিল স্পেন সরকার। সোমবার রাতে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেড্রো স্যাঞ্চেজ় বলেন, “মাত্র পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যে ১৫ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ হারিয়েছে স্পেনের গ্রিড। বিষয়টি নিয়ে বিশদে তদন্ত চলছে।” তবে পর্তুগালের আধিকারিকদের দাবি, এর পিছনে সাইবার হানার ভূমিকা নেই। একই দাবি স্পেনের প্রশাসনেরও।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)