Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Pranab Mukhopadhyay

কাঠমান্ডুকে ফের পাশে টানার চেষ্টা প্রণবের

সার্কের দেশগুলির মধ্যে পাকিস্তানকে একঘরে করতে মরিয়া মোদী সরকার নেপালকে পাশে রেখেই চলতে চায়। তিনদিনের সফরে কাঠমান্ডুকে ফের পাশে টানারই সেই চেষ্টা শুরু করে দিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।

প্রণব মুখোপাধ্যায়কে স্বাগত জানাচ্ছেন নেপালের রাষ্ট্রপতি বিধ্যা দেবী ভাণ্ডারী। —নিজস্ব চিত্র।

প্রণব মুখোপাধ্যায়কে স্বাগত জানাচ্ছেন নেপালের রাষ্ট্রপতি বিধ্যা দেবী ভাণ্ডারী। —নিজস্ব চিত্র।

প্রেমাংশু চৌধুরী
কাঠমান্ডু শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০৭
Share: Save:

সার্কের দেশগুলির মধ্যে পাকিস্তানকে একঘরে করতে মরিয়া মোদী সরকার নেপালকে পাশে রেখেই চলতে চায়। তিনদিনের সফরে কাঠমান্ডুকে ফের পাশে টানারই সেই চেষ্টা শুরু করে দিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।

অসিষ্ণুতা নিয়ে দেশ জুড়ে বিতর্কের সময় একাধিক বার তিনি মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, ভারতীয় সংবিধানে সকলকে নিয়ে চলার কথাই বলা হয়েছে। এ বার নেপালে ভারত-বিরোধী মনোভাব দূর করতেও সেই সংবিধানেরই আশ্রয় নিলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।

এত দিন নেপালে সরকার ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত মদেশীয়দের মধ্যে টানাপড়েনে বরাবরই মদেশীয়দের পক্ষ নিয়েছে নয়াদিল্লি। কিন্তু তার ফলে নেপালে ভারত-বিরোধী মনোভাবও তৈরি হয়েছে। যার সুযোগ নিয়েছে বেজিং। কৌশল বদলে এ বার প্রচণ্ড-সরকার ও মদেশীয়দের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করতে চাইছে ভারত। সেই উদ্দেশ্য নিয়েই বুধবার কাঠমান্ডু এসে পৌঁছেছেন রাষ্ট্রপতি। এবং প্রথম দিনেই নেপালের রাষ্ট্রপতি বিধ্যা দেবী ভাণ্ডারী ও প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কুমার দাহাল ‘প্রচণ্ড’-র সঙ্গে বৈঠকে প্রণব তাঁদের জানিয়েছেন, ভারতের সংবিধানে সব জাতি-ধর্ম-বর্ণের মানুষকে একসঙ্গে নিয়ে চলার কথাই বলা হয়েছে। নেপাল যখন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হয়ে ওঠার পথে নতুন সংবিধান পাশ করাতে যাচ্ছে, তখন ভারতের অভিজ্ঞতা থেকে প্রচণ্ডরা শিক্ষা নিতে পারেন।

এক দিকে রাষ্ট্রপতি যখন প্রচণ্ডকে মদেশীয়দের সঙ্গে নিয়ে, তাঁদের দাবিদাওয়া যতটা সম্ভব মেনে চলার কথা বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, তেমনই মদেশীয়দেরও তিনি প্রচণ্ড-সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার প্রয়োজনের কথা বোঝাবেন বলে কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য। নেপালের অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে তাঁর পুরনো সম্পর্ককে কাজে লাগিয়েও একই কথা বোঝানোর চেষ্টা করবেন তিনি। এ দিন নেপালের রাষ্ট্রপতির নৈশভোজে প্রণব বলেন, “ভারত ও নেপালের সম্পর্ক এক সুতোয় বাঁধা। দুই দেশেরই একে অন্যের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে গুরুপূর্ণ অংশীদারি রয়েছে।”

বলা বাহুল্য, নেপালের ভারত-বিরোধী মনোভাব এবং সেই সুযোগে চিনের প্রভাব বিস্তার ঠেকাতে এ ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। গত বছর এপ্রিলে নেপালের ভূমিকম্পের পর নরেন্দ্র মোদী সরকার দরাজ হাতে কাঠমান্ডুর পাশে দাঁড়িয়ে ঋণ-অনুদান মিলিয়ে ১০০ কোটি ডলার অর্থসাহায্যের কথা ঘোষণা করেছিল। কিন্তু তার পরেই নয়া সংবিধান ঘিরে মদেশীয়দের বিক্ষোভের জেরে ভারত থেকে পেট্রোলিয়াম-সহ অন্যান্য অত্যাবশকীয় পণ্য রফতানি বন্ধ হয়ে যায়। নেপালে রটে যায়, মদেশীয়দের মাধ্যমে কাঠমান্ডুকে চাপে রাখার জন্যই ভারত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য রফতানি বন্ধ করেছে। ভারতের বিরুদ্ধে প্রবল বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়ে নেপালে। সে সুযোগ নিতে মাঠে নেমে পড়ে চিন। নয়াদিল্লির কূটনৈতিক ব্যর্থতা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে।

কূটনীতিকরা মানছেন, এই ক্ষত মেরামত প্রণববাবু ছাড়া আর কারও পক্ষে সম্ভব ছিল না। কারণ, প্রণবের সঙ্গে নেপালের সব রাজনৈতিক দলেরই শীর্ষ নেতাদের পুরনো ও মধুর সম্পর্ক। বন্ধুত্বের বার্তা নিয়ে নেপালে আসার জন্য তাই প্রণবেরই শরণাপন্ন হতে হয় নরেন্দ্র মোদী সরকারকে। বস্তুত ১৮ বছর পরে ভারতের কোনও রাষ্ট্রপতি নেপাল সফরে এলেন। শেষ এসেছিলেন কে আর নারায়ণন, ১৯৯৮-তে। বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর বলেন, “রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কারণ এশিয়ার এই অঞ্চলের রাষ্ট্রনেতারা ওঁকে দীর্ঘদিন অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এক জন রাষ্ট্রনেতা হিসেবে দেখেন। নেপালের রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে আজকের বৈঠকেও বার বার সেই কথা উঠে এসেছে”।

মাওবাদী আন্দোলন থেকে রাজনীতির মূল স্রোতে এসে, ভোটে জিতে ২০০৮-এ প্রচণ্ড প্রথম প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসেন। সে সময়ও বিদেশমন্ত্রী হিসেবে প্রণব মুখোপাধ্যায় কাঠমান্ডুতে এসেছিলেন। নেপালের সংবিধান তৈরি নিয়েও সেই সফরে আলোচনা হয়েছিল। তার পর বেশিদিন প্রধানমন্ত্রীর গদিতে থাকেননি প্রচণ্ড। তিন মাস আগে ফের গদিতে ফিরেছেন তিনি। নেপালে গত বছর সংবিধান তৈরির পর মদেশীয়দের বিক্ষোভের জেরে তা পাশ করা যায়নি। নাগরিকত্বে সমানাধিকার, ভাষার অধিকার, তরাইয়ে দু’টি স্বয়ংশাসিত জেলা, সব ক্ষেত্রে জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিনিধিত্ব দাবি করছেন মদেশীয়রা। তরাই মদেশীয় লোকতান্ত্রিক পার্টির নেতা মহেন্দ্র প্রসাদ যাদব বলেন, “আমরা নিজেদের অধিকারের দাবিতে লড়লেও ভারত এতে মদত দিয়ে অশান্তি তৈরি করতে চাইছে বলে দেখানো হয়। এটাই সবথেকে জটিল সমস্যা।”

আরও পড়ুন

মসুলে ঢুকছে ইরাকি বাহিনী, শেষ দুর্গ রক্ষায় তীব্র প্রতিরোধে আইএস

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pranab Mukhopadhyay Nepal Bilateral Ties
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE