বাংলাদেশের অন্তর্বর্তিকালীন সরকার তরুণ সমাজকে আগ্নেয়াস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেছে। আপাতত অন্তত ৮ হাজার তরুণ-যুবককে প্রশিক্ষিত করার কাজ চলছে বলে খবর। সরকারের যুক্তি, এটি ‘রিজ়ার্ভ ফোর্স’-কে শক্তিশালী করার উদ্যোগ মাত্র। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, অত্যন্ত গোপনীয়তার মধ্যে বিপুল সংখ্যক যুবককে সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার এই অস্বচ্ছ প্রক্রিয়া দেশের স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তাঁদের মতে, এই উদ্যোগ যদি বাস্তবায়িত হয়, তা হলে চিন্তার কারণ রয়েছে নয়াদিল্লিরও।
বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম উপদেষ্টা আসিফ মহামুদ সজীব ভুঁইঞা দিন চারেক আগে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ৮৮৫০ জন তরুণ-যুবককে নিয়োগ করে অস্ত্র প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। তিনি জানিয়েছিলেন, তাইকোন্ড, জুডো, মার্শাল আর্ট যেমন শেখানো হচ্ছে, তেমনই দেওয়া হচ্ছে আগ্নেয়াস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণও। সূত্রের খবর, এই ধরনের শিবিরের কথা ভারতের বিদেশ মন্ত্রককে মাস কয়েক আগে জানিয়েছিল দেশের বিভিন্নগোয়েন্দা সংস্থা।
সম্প্রতি প্রকাশিত সরকারি তথ্য অনুযায়ী, সরকার বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের (বিএনসিসি) মাধ্যমে ৪০ হাজার তরুণ-তরুণীকে আগ্নেয়াস্ত্র ও ক্যারাটে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। প্রথম দফায় ৮৮৫০ জনকে এই প্রশিক্ষণে দেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, দেশের সাতটি শিবিরে ওই ৮৮৫০ জনকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন পাকিস্তানপন্থী বলে পরিচিত সেনা অফিসারেরা।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের দাবি, গণভবন এবং বিভিন্ন থানা থেকে লুট হওয়া ভারী অস্ত্র চালানোর জন্য প্রশিক্ষিত বাহিনী তৈরি করছে সরকার। সাধারণত এই ধরনের সামরিক প্রশিক্ষণ গোপনে দেওয়া হয়। কিন্তু প্রশিক্ষণের খবর ফাঁস হয়ে সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানোর ঝুঁকি এড়াতে সরকার এখন ‘যুব প্রশিক্ষণ কর্মসূচির’ নামে প্রকাশ্য ও বৈধ উপায়ে এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে।
সমর বিশেষজ্ঞ এবং কূটনীতিকদের একাংশের যুক্তি, বেশ কয়েক মাস ধরেই কিছু ইসলামি দল এবং তাদের ঘনিষ্ঠ কিছু প্রাক্তন সেনা অফিসার ইসলামিক সশস্ত্র বাহিনী (মিলিশিয়া) তৈরির চেষ্টা করছে। সম্ভবত এটি তার প্রথম পদক্ষেপ। কারণ, ওই দলগুলি যদি বেসরকারি উদ্যোগে অস্ত্র প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করত, তা হলে গোপনীয়তা বজায় রাখতে হত। এক বার তা প্রকাশ হয়ে গেলে দেশজুড়ে হইচই হত, ব্যবস্থা নিতে হত প্রশাসনকে। তার বদলে সরকারের দিয়ে আইনি কাঠামোর মধ্যে এই কাজ করিয়ে নিতে পারছে উগ্র কট্টরবাদী দলগুলি। সে ক্ষেত্রে শিবিরগুলিতে তরুণ নিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের কথাই শেষ কথা হবে। কারণ, অভিজ্ঞ মহলের মতে, ইউনূস সরকার জামায়াতে ইসলামী ও কট্টরবাদীদের ‘হাতের পুতুল’ মাত্র।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এক প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট অফিসার নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেছেন, ‘‘সেনার বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন অফিসারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এক দিকে সেনাবাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে, তেমনই মিলিশিয়া তৈরির সমান্তরাল চেষ্টা চলছে। অনেকটা ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের মতো। বাংলাদেশকে ওই ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী দিয়ে ইসলামিক রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা হতে পারে।’’
এই প্রক্রিয়ায় ভারতের উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন কূটনীতিকদের একাংশ। তাঁরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, সম্প্রতি নিউ ইয়র্কে জামায়াত ইসলামীর নেতা সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেছেন যে ৫০ লক্ষ জামায়াত যুবা ভারতের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রস্তুত। ভারত যদি বাংলাদেশে প্রবেশ করে, তা হলে ওই ৫০ লক্ষের একাংশ গেরিলা যুদ্ধ করবে, বাকিরা ভারতের ভিতরে ছড়িয়ে ‘গজওয়া-এ-হিন্দ’ (ভারত বিজয়) কার্যকরের চেষ্টা করবে। অতএব যদি সত্যিই ওই ইসলামি সশস্ত্র বাহিনী বাংলাদেশে তৈরি হয়, তা হলে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা এবং ভারতের ভিতরে উগ্রপন্থী কার্যকলাপ বৃদ্ধির সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না কূটনীতিকেরা।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)