২০০৩ সাল থেকে ট্রেক করতে প্রতিবেশী নেপালে আমার যাতায়াত। ফলে দেশটা বহু দিনের চেনা। কিন্তু সেই দেশেই ট্রেক করতে এসে যে এমন পরিস্থিতিতে পড়ব, দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি। অশান্ত নেপালের পোখরায় আটকে পড়েছি আমরা চার জন। কবে বাড়ি ফিরতে পারব, জানি না।
নেপালের দামোদর কুণ্ড হয়ে সারিবুং পাস ট্রেক করতে গত ২৯ অগস্ট ব্যারাকপুরের বাড়ি থেকে যাত্রা শুরু করেছিলাম। সঙ্গী পার্থসারথি মৌলিক, অজয় চক্রবর্তী এবং দীপন সরকার। ট্রেক আগেভাগে শেষ হয়ে যাওয়ায় মঙ্গলবার বিকেলের দিকে পোখরা এসে পৌঁছই। তার আগে নেপালে কী অস্থিরতা চলছে, সেই খবর পাইনি। বিকেলে পোখরা ঢোকার আগেই দেখলাম, রাস্তায় জ্বলছে টায়ার। আর শহরে তাণ্ডব চলেছে— ভাঙচুর, আগুন জ্বালানো, গাড়ি পোড়ানো। আইনশৃঙ্খলাহীন অবস্থা। পুরো পোখরা শহর আলো-জলহীন, নেই দমকল, পুলিশেরও দেখা নেই। আমাদের গাড়ির চালক ও গাইড তো ভীতসন্ত্রস্ত্র। কোনও রকমে আমাদের হোটেলে ঢুকিয়ে দিয়ে সেই যে চলে গিয়েছেন, আর আসেননি।
এ দিকে, সন্ধ্যার দিকে আমাদের হোটেলের থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরের পাঁচতারা হোটেল চোখের সামনে জ্বালিয়ে দিল বিক্ষোভকারীরা। আমাদের হোটেলের উপরের তলা থেকে দেখছি, দাউ দাউ করে জ্বলছে পড়শি হোটেলটি। এ দিকে আলো জ্বালানোর উপায় নেই। মোমের আলোয় কাজ চালাতে হচ্ছে। ফোনে চার্জ দেওয়ার উপায়ও নেই। ফোন রিচার্জও করতে পারব কি না, জানা নেই। ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে ওয়টস্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। জানিয়েছি যে, আগামী ১৩ তারিখ রক্সৌল থেকে আমাদের কলকাতার ট্রেন ধরার কথা রয়েছে। তাই তার আগে কোনও রকমে এ দেশ ছেড়ে বেরোতে চাই। কিন্তু সেটা কবে এবং কী ভাবে, বুঝতে পারছি না। দূতাবাস থেকেও অবশ্য এখনও কোনও উত্তর আসেনি। কিছু নেপালি টাকা আমাদের সঙ্গে রয়েছে, তাই রক্ষে! রাতের অন্ধকার বারান্দায় বসে দেখছি, পোখরা শহরে এখনশুধুই ধোঁয়া।
যা খবর পাচ্ছি, তাতে প্রশাসনের কেউ হাল না ধরলে এই পরিস্থিতি আরও জটিল হবে। যাঁরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, তাঁদের অধিকাংশেরই বয়স ১৪ থেকে ২২ বছরের মধ্যে। অর্থাৎ নেপালের অতি তরুণ প্রজন্মের হাতেই এখন রয়েছে পরিস্থিতির রাশ। আর ওঁরা বেছে বেছে নিশানা করছেন নেতামন্ত্রীদের বাড়ি-হোটেল, প্রশাসনিক ভবনগুলিকে। এ যেন গত বছরের অগস্টের বাংলাদেশের মতোই পরিস্থিতি। তাই অন্য ভয়ও করছে। কোনও ভাবে গাড়ির ব্যবস্থা করে এখান থেকে রক্সৌল পৌঁছতে চাই। না পৌঁছনো পর্যন্ত আতঙ্কে রয়েছি।
অনুলিখন: স্বাতী মল্লিক
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)