Advertisement
E-Paper

কৃতী ছাত্র খুনি হয়ে গেলেন কী ভাবে? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

ক্যালিফোর্নিয়ার বন্দুকবাজ। এটাই এখন মৈনাক সরকারের পরিচয়। বন্দুক হাতে যিনি একের পর এক উড়িয়ে দিয়েছেন প্রাক্তন স্ত্রী, নিজের অধ্যাপককে। দুটো খুনের মধ্যেই মৈনাকের ভিতর ক্ষোভ স্পষ্ট। কিন্তু এমনটা করলেন শিক্ষিত, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্নে বিদেশে পাড়ি দেওয়া মৈনাক?

প্রমা মিত্র

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৬ ১৭:০৫
এই বাড়িতেই থাকতেন মৈনাক সরকার?

এই বাড়িতেই থাকতেন মৈনাক সরকার?

ক্যালিফোর্নিয়ার বন্দুকবাজ। এটাই এখন মৈনাক সরকারের পরিচয়। বন্দুক হাতে যিনি একের পর এক উড়িয়ে দিয়েছেন প্রাক্তন স্ত্রী, নিজের অধ্যাপককে। দুটো খুনের মধ্যেই মৈনাকের ভিতর ক্ষোভ স্পষ্ট। কিন্তু এমনটা করলেন শিক্ষিত, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্নে বিদেশে পাড়ি দেওয়া মৈনাক? কী কারণে প্রতিশোধ স্পৃহা খুন করতে বাধ্য করল তাকে? এই বিষয় কথা বললেন মনস্তত্ত্ববিদ মোহিত রণদীপ ও প্রাক্তন পুলিশকর্তা সমীর গঙ্গোপাধ্যায়।

মোহিত রণদীপ

উইলিয়াম ক্লুগকে খুন করার কিছু দিন আগে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন ক্লুগ তার ব্যক্তিগত কম্পিউটারের পাসওয়ার্ড হ্যাক করেছিলেন। তবে কি মৈনাকের কোনও গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ করেছিলেন ক্লুগ? সেই কারণেই তাকে খুন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মৈনাক? সোজাসুজি ভাবে দেখলে ব্যাপারটা এ রকমই মনে হয়। কিন্তু সত্যিই কি ক্লুগ মৈনাককে প্রতারণা করেছিলেন? নাকি পুরোটাই মৈনাকের সন্দেহ? এই ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে কিন্তু মৈনাকের পোস্ট ছাড়া আমাদের কাছে আর কোনও তথ্য নেই। তাই এমনটা হতেই পারে যে পুরোটাই মৈনাকের সন্দেহ, ভয় যে কেউ তার ক্ষতি করতে পারে। সাধারণত প্যারালাল স্কিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হলে মানুষ এমন আচরণ করে থাকে। যেখানে কেউ তার ক্ষতি করতে পারে এমন একটা ভ্রান্ত বিশ্বাস তৈরি হয় মনে। মৈনাক এই রোগে আক্রান্ত ছিলেন কিনা তা এত দূর থেকে বলা সম্ভব নয়। কিন্তু যদি তিনি সত্যিই প্রতারিতও হয়ে থাকেন, তাহলে তার কাছে আইনি পথে হাঁটার রাস্তা খোলা ছিল। কিন্তু খুনই কেন বেছে নিলেন তিনি? এমনকী, এটা তার প্রথম খুন নয়। এর আগে প্রাক্তন স্ত্রীকেও খুন করেছিলেন তিনি। তার হিটলিস্টে ছিলেন আরও এক অধ্যাপক। এই দু’জনের প্রতি তার কী অভিযোগ ছিল তা আমাদের জানা নেই। কিন্তু বার বার সমাধান হিসেবে যখন খুন করার পথটাকেই বেছে নিচ্ছিলেন মৈনাক, তখন তিনি যে মানসিক ভাবে পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন না তা বলা যেতে পারে অবশ্যই।

সমীর গঙ্গোপাধ্যায়

আমাদের মস্তিষ্ক ফ্রন্টাল লোব বলে একটা বিশেষ অংশ থাকে। এই অংশের কাজ হল ঠিক, ভুলের বিচার করা। অর্থাত্, আমরা যখন কোনও ঠিক বা ইতিবাচক কাজ করার সিদ্ধান্ত নিই তখন এই অংশ আমাদের সবুজ সঙ্কেত দেয়। আবার কোনও নেতিবাচক বা ক্ষতিকারক সিদ্ধান্ত নিলে এই ফ্রন্টাল লোব আমাদের বাধা দেয়। মৈনাক সরকারের পোস্ট অনুযায়ী উইলিয়াম ক্লুগ তাকে প্রতারণা করেছিলেন। যদিও, তা সত্যি কিনা আমরা জানি না। কিন্তু তিনি যখনআইনি পথে না হেঁটে খুনের সিদ্ধান্ত নিলেন তখন অবশ্যই তার ফ্রন্টাল লোব ঠিকঠাক কাজ করছিল না। কিন্তু কেন এমন হয়ে থাকে? আমাদের মধ্যে কিছু মানুষ রয়েছেন যারা ‘সুপিরিওরিটি কমপ্লেক্সে’ ভোগেন। যারা সব ক্ষেত্রে নিজেদের অন্যদের থেকে উন্নত মনে করেন। আবার কিছু মানুষ রয়েছেন যারা ‘ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স’ বা হীনমন্যতায় ভোগেন। এরা সব ক্ষেত্রেই মনে করেন তিনি যেন অন্যদের সঙ্গে পেরে উঠছেন না। এই দুইয়েরই জন্ম ‘ইগো’ থেকে। যার থেকে তৈরি হয় রাগ ও ঘৃণা। যা থেকে বিচারবুদ্ধি লোপ পেতে শুরু করে। যদি আমরা মৈনাকের বন্দুকের শিকারদের দেখি তাহলে ক্লুগ ছিলেন এমন একজন যার তত্ত্ববধানে তিনি পিএইচডি করতেন। যার প্রতি মৈনাকের অভিযোগ তার গবেষণার তথ্য চুরি করেছিলেন মৈনাক। এটা মৈনাকের ইগোকে সুস্পষ্ট করে তোলে। আবার স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন সেটাও মৈনাকের ইগোকে আঘাত করেছে। এই দু’জনের প্রতি ক্রমাগত জমতে থাকে ঘৃণা ও রাগই ধীরে ধীরে তাকে খুনের ছক কষিয়েছে। কারণ, এই দুই খুনের সিদ্ধান্তই মৈনাক কিন্তু এক দিনে নেননি।

psychologist Mainak Sarkar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy