পশ্চিম এশিয়ায় ক্রমেই বাড়ছে উত্তেজনা। এরই মধ্যে শনিবার গভীর রাতে ইরান-ইজ়রায়েল সংঘাতে সরাসরি যোগ দিয়েছে আমেরিকা। ইরানের তিন পরমাণুকেন্দ্র লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালিয়েছে তারা। সেই হামলার কড়া নিন্দা করেছে রাশিয়া। তা হলে রাশিয়া কেন ইরান-ইজ়রায়েল দ্বন্দ্বে যোগ দিচ্ছে না? এ বার তার ব্যাখ্যা দিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
ইরানে আমেরিকার আকস্মিক হামলার পর রবিবারই এক সাক্ষাৎকারে ইরান-ইজ়রায়েল সংঘাতে মস্কোর ভূমিকা স্পষ্ট করেছেন পুতিন। সেন্ট পিটার্সবাগে ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক ফোরামের বৈঠকে পুতিন জানান, পশ্চিম এশিয়ার মিত্রদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে রাশিয়ার। পুতিন বলেন, ‘‘আপনাদের জ্ঞাতার্থে জানাই, প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং তৎপরবর্তী রাশিয়ার প্রায় কুড়ি লক্ষ মানুষ ইজ়রায়েলে বাস করেন। একে প্রায় রুশ ভাষাভাষী দেশ বললেও ভুল বলা হবে না! রাশিয়ার সমসাময়িক ইতিহাসে নিঃসন্দেহে একে আমরা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করি।’’ পুতিন আরও জানিয়েছেন, রাশিয়ার জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ মুসলিম ধর্মাবলম্বী। এ ছাড়াও, রাশিয়া ‘অর্গানাইজ়েশন অফ ইসলামিক কো-অপারেশন’-এর পর্যবেক্ষক। ফলে গত কয়েক দশক ধরেই পশ্চিম এশিয়ায় একটি ভারসাম্যমূলক ভূমিকা পালন করে আসছে রাশিয়া।
আরও পড়ুন:
রুশ প্রেসিডেন্ট জানান, ইরানের সঙ্গে রাশিয়ার সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, বুশেহরে ইরানের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণেও সহায়তা করেছিল রাশিয়া। কিন্তু ইজ়রায়েলের সঙ্গেও রাশিয়ার সম্পর্ক খারাপ নয়। পুতিন বলেন, ‘‘ইরানের সঙ্গে মস্কোর যেমন শক্তিশালী অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক রয়েছে, তেমনই উষ্ণ সম্পর্ক রয়েছে ইজ়রায়েলের সঙ্গেও।’’ ফলে ইরানের পাশে দাঁড়ালেও রাশিয়া যে ইরান-ইজ়রায়েলের সংঘাতে এখনই সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে অবতীর্ণ হচ্ছে না, পুতিনের বার্তা থেকেই তার খানিক আঁচ পাওয়া গিয়েছে।
তবে ইরানে আমেরিকার হামলার তীব্র নিন্দা করেছে রাশিয়া। মস্কো জানিয়েছে, এই হামলা শুধু ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ই নয়, বরং আন্তর্জাতিক আইনেরও বিরোধী। রবিবার রাশিয়ার বিদেশ মন্ত্রকের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, ‘‘এত দিনে এটা স্পষ্ট যে, ভয়াবহ উত্তেজনা বৃদ্ধি শুরু হয়ে গিয়েছে, যা আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাকে আরও বিঘ্নিত করে। আমেরিকার এই হামলা দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং এতে আন্তর্জাতিক আইনও লঙ্ঘিত হয়েছে।’’ গত সপ্তাহে ইজ়রায়েল-ইরান সংঘাতের অবসানে মধ্যস্থতা করতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন পুতিন। তিনি বলেছিলেন, মস্কো এমন একটি মীমাংসা আলোচনায় সাহায্য করতে পারে যা তেহরানকে শান্তিপূর্ণ ভাবে পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেবে এবং একই সঙ্গে নিরাপত্তা নিয়ে ইজ়রায়েলের উদ্বেগও প্রশমিত করবে। কিন্তু তার আগেই ইরানে হামলা চালায় আমেরিকা। তবে পুতিন এখনই সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে না এলেও এই পরিস্থিতিতে ‘বন্ধু’ রাশিয়াকে পাশে চাইছে ইরান। সোমবারই মস্কো পৌঁছেছেন ইরানের বিদেশমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। বিকেলে পুতিনের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসবেন তিনি।