ইরানের তিন পরমাণুকেন্দ্র লক্ষ্য করে শনিবার গভীর রাতে হামলা চালায় আমেরিকা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি, তিন পরমাণুকেন্দ্রই ‘মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে। ইরানের তরফে বিশেষ ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে দাবি করা হলেও, একের পর এক পোস্টে বার বারই তা নস্যাৎ করে দিয়েছেন ট্রাম্প। উপগ্রহচিত্রেও মিলেছে তেমনই ইঙ্গিত। সেই আবহেই মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্সের এক মন্তব্য নতুন করে উস্কে দিল জল্পনা।
ইরানের সংগৃহীত বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম কি এখনও অক্ষত? এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেননি মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট। আমেরিকা বা ইরান— এখনও পর্যন্ত কোনও তরফেই এ বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য তথ্যপ্রমাণও মেলেনি। তবে ভান্সের বক্তব্যে ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে, ইরানের সংগৃহীত ইউরেনিয়াম অক্ষতই রয়েছে। রবিবার ভান্স সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজ়কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘মনে হয় ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত কিংবা নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। ওদের পরমাণু কর্মসূচিও ব্যাপক ভাবে পিছিয়ে পড়েছে।’’ এর পরেই ভান্সকে প্রশ্ন করা হয়, ইরানের প্রায় ৯০০ পাউন্ড বিশুদ্ধ ইউরেনিয়ামের বর্তমান অবস্থা কী? উত্তরে ভান্স বলেন, ‘‘আগামী সপ্তাহগুলিতে ওই জ্বালানি দিয়ে কিছু একটা করার কথা ভাববে ট্রাম্প প্রশাসন। এ বিষয়ে ইরানের সঙ্গে আলোচনাতেও বসবে আমেরিকা।’’ বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত, এই মন্তব্যের পরেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, আমেরিকার হামলায় পরমাণুকেন্দ্রগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ইরানের সংরক্ষিত বিশুদ্ধ ইউরেনিয়ামে সে ভাবে কোনও আঁচ পড়েনি।
আরও পড়ুন:
-
মাটির গভীরে গিয়ে ‘লক্ষ্যভেদ’! ইরানে ‘সফল হামলার’ প্রশংসায় আবার পঞ্চমুখ ট্রাম্প, বললেন, মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে
-
ইজ়রায়েল জুড়ে বাজছে সাইরেন! বিস্ফোরণের শব্দ জেরুসালেমে, ইরান থেকে ছুটে আসছে ঝাঁকে ঝাঁকে ক্ষেপণাস্ত্র
-
দু’সপ্তাহ সময় দিয়ে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আক্রমণ! কখন হামলার সিদ্ধান্ত নেন ট্রাম্প? জানালেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ভান্স
ইজ়রায়েল-ইরানের সংঘাতে ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকা সরাসরি অস্ত্র ধরবে কি না, সে বিষয়ে দু’সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু সেই মন্তব্যের মাত্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই শনিবার গভীর রাতে ইরানের ফোরডো, নাতান্জ় এবং ইসফাহান পরমাণুকেন্দ্র লক্ষ্য করে হামলা চালায় মার্কিন বাহিনী। উল্লেখ্য, পরমাণু গবেষণা সংক্রান্ত যাবতীয় কর্মকাণ্ড শুরু থেকেই গোপন রেখেছে ইরান। তাদের সবচেয়ে সুরক্ষিত পরমাণুকেন্দ্রটি রয়েছে পাহাড়ের নীচে, মাটি থেকে ৩০০ ফুট গভীরে। দীর্ঘ দিন পর্যন্ত যার অস্তিত্বই জানা ছিল না কারও। ফলে ইরান এই সংক্রান্ত গবেষণায় কতটা এগিয়েছে, তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) রিপোর্ট বলছে, ইরানের পরমাণুকেন্দ্রগুলিতে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম রয়েছে, যা উদ্বেগের। এ ভাবে চলতে থাকলে অচিরেই পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী হয়ে উঠবে তারা। এর মাঝে রবিবার দুই ইজ়রায়েলি শীর্ষ আধিকারিককে উদ্ধৃত করে ‘নিউ ইয়র্ক টাইম্স’ জানিয়েছে, ফোরডো ধ্বংস হয়নি, তবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সূত্রের খবর, বেশির ভাগ ইউরেনিয়াম আগেভাগেই সরিয়ে ফেলেছিল ইরান। তাঁদের দাবি, ইরানের কাছে ৮৮০ পাউন্ড ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুত ছিল, যা হামলার আগেই সরিয়ে ফেলা হয়েছে। অন্য দিকে, ইরানের তরফেও জানানো হয়েছে, পরমাণুকেন্দ্রে হামলা হলেও এখনও পর্যন্ত কোনও তেজস্ক্রিয় বিকিরণের খবর মেলেনি। ফলে চিন্তার কোনও কারণ নেই!