তেলের ব্যবসা লাটে ওঠার জোগাড়। যুদ্ধে পিছু হঠতে হঠতে হঠতে হাতছাড়া হচ্ছে একের পর এক তেলের খনি। তেল বিক্রি থেকে আসা আয় এতটাই কমেছে যে এখন ইসলামিক স্টেট (আইএস) ঠিক মতো বেতন দিতে পারছে না সৈনিকদের। বেতন কমানো হয়েছে। তা সত্ত্বেও তহবিলে তুমুল টানাটানি। তাই এ বার মাছের ব্যবসা শুরু করেছে আই এস। সঙ্গে গাড়ির ডিলারশিপ।
ইরাকের এক-তৃতীয়াংশ দখলে চলে এসেছিল আবু বকর আল বাগদাদির। দখলে এসেছিল সিরিয়ার অংশবিশেষও। তার পরেই প্রতিষ্ঠিত হয় আইএসআইএস-এর ‘খালিফেট’। নিজেকে খলিফা অর্থাৎ ইসলাম ধর্মের প্রধান ঘোষণা করে দেন নিজেই। ইরাক এবং সিরিয়ার অনেকগুলি তেলের খনি তখন আইএস-এর দখলে। খনিজ তেল বিক্রি করে হাতে আসা বিপুল অর্থ দিয়ে বিশাল সেনাবাহিনী চালাতে কোনও অসুবিধাই হচ্ছিল না বাগদাদির। বিশ্বজুড়ে জেহাদের ডাক, নতুন নতুন এলাকা দখলের জন্য হামলা চালানো, বিভিন্ন দেশে নাশকতার জাল বিছিয়ে দেওয়া— সবই চলছিল জোরকদমে। কিন্তু ন্যাটো এবং রাশিয়া আইএস বিরোধী অভিযান শুরু করার পর থেকে ক্রমশ পিছু হঠেছে বাগদাদির সেনা। বিধ্বংসী হামলায় প্রবল ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীনও হতে হচ্ছে রোজ।
সৈনিকের মৃত্যু বা পরিকাঠামো ধ্বংস হওয়া সামলে নিতে পারত আইএস, যদি তেলের ব্যবসা আগের মতো থাকত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৪ সালে যখন খালিফেট প্রতিষ্ঠা হল, তখনও বছরে আইএস-এর আয় ছিল অন্তত ২৯০ কোটি ডলার। এই বিপুল অর্থের অনেকটাই উদ্বৃত্ত থেকে যেত। কারণ বাগদাদির খালিফেট কোনও সরকারের মতো নাগরিক পরিষেবা দেয় না। বেতন দিয়ে সেনাবাহিনী পোষে। সেই সেনাবাহিনীর সাহায্যে প্রশাসন চালায় এবং দাপট দেখিয়ে শাসন কায়েম রাখে। সেনাবাহিনীর বেতন আর থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা এবং যুদ্ধাস্ত্র কেনাই মূল খরচ। অন্যান্য খাতে আইএস এর খরচ ছিল নামমাত্র। উদ্বৃত্ত বিপুল টাকায় শীর্ষ কম্যান্ডারদের ফুর্তি ছিল অবাধ।
একের পর এক তেলের খনি হাতছাড়া হওয়ায় আইএস-এর সেই অতুল ঐশ্বর্য এখন অতীত। কোষাগারে টান পড়েছে এতই যে সৈনিকদের বেতন অনেকটা কমিয়ে দিতে হয়েছে বলে খবর। তাতেও সামাল দেওয়া যাচ্ছে না পরিস্থিতি। তাই উপার্জনের অন্য পথ খুঁজতে হয়েছে।
আইএস-এর বিকল্প আয়ের উৎস কী?
ইরাকের সেন্ট্রাল কোর্ট অফ ইনভেস্টিগেশন-এর এক বিচারককে উদ্ধৃত করে তৈরি হওয়া এক রিপোর্টেই জানা গিয়েছে আইএস-এর নতুন আয়ের উৎসের কথা। পেট্রোলিয়াম ব্যবসায়ী থেকে হঠাৎ এখন মাছ বিক্রেতা হয়ে উঠেছে কুখ্যাত জঙ্গি সংগঠন আইএস। ইরাকের রাজধানী বাগদাদের উত্তরে এখনও অনেকটা এলাকাই আইএস-এর দখলে। সেই এলাকায় শ’য়ে শ’য়ে হ্রদ রয়েছে। সেই সব হ্রদে মাছের চাষ দীর্ঘকাল ধরেই চলে আসছে। আইএস এখন সেই সব হ্রদের দখল নিয়েছে। হ্রদগুলির মালিকরা হয় পালিয়ে গিয়েছেন। না হলে আইএস-এর কথা মতো কাজ করতে রাজি হয়ে গিয়ে প্রাণটুকু নিয়ে টিকে রয়েছেন। ওয়াকিবহাল মহল বলছে, এই সব হ্রদের মাছ বিক্রি করে প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় হচ্ছে আইএস-এর। তবে ন্যাটো এবং রুশ হানায় যে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি রোজ হচ্ছে, শুধু এই আয়ে তা সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। তাই নিজেদের দখলে থাকা এলাকায় যে সব সরকারি কলকারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, সেগুলি চালু করে আয় বাড়ানোর চেষ্টা করছে আইএস। গাড়ির ডিলারশিপ নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:
বিতর্কিত কৃত্রিম দ্বীপ বাঁচাতে সমুদ্রে পরমাণু কেন্দ্র ভাসাচ্ছে চিন!
এ ছাড়া কৃষিজমির উপর কর বসিয়ে, পোলট্রি ফার্মের উপার্জনে ১০ শতাংশ কর চাপিয়ে অতিরিক্ত আয়ের চেষ্টা হচ্ছে। আইএস-এর এলাকায় বাইরে থেকে যে সব মালপত্র আমদানি হয়, তার উপরেও কর বসানো হয়েছে।
এতেও কিন্তু পরিস্থিতি শোচনীয়। ২০১৪ সালে যে আইএস-এক বাৎসরিক আয় ছিল বছরে ২৯০ কোটি ডলার, সেই আইএস এখন মাসে ৫৬ লক্ষ ডলার উপার্জন করে। অর্থাৎ বছরে ৭ কোটি ডলারের কাছাকাছি।
ইরাক এবং সিরিয়ার সরকার তো বটেই, ন্যাটো বাহিনীও আইএস-এর তীব্র অর্থ সঙ্কটকে ইতিবাচক মনে করছে। এক দিকে ন্যাটোর আক্রমণে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি, অন্য দিকে পর্যাপ্ত অর্থের অভাব— দ্বিমুখী সঙ্কটে তবে কি ধুঁকতে শুরু করল বাগদাদির খালিফেট? উত্তর মিলতে পারে খুব তাড়াতাড়িই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy