—ফাইল চিত্র।
রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার পরিষদ থেকে বেরিয়ে যেতে হল রাশিয়াকে। ৪৭ সদস্যের এই পরিষদে ১৪টি আসন শূন্য হয়েছিল। সেই সব আসনে আগামী তিন বছরের জন্য কোন কোন দেশের প্রতিনিধিরা বসবেন, তা নির্ধারণ করতে ভোটাভুটি হয় রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায়। নির্বাচনে রাশিয়া পরাজিত হয়েছে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে অংশ নিয়ে রুশ সেনা যে ভাবে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বাহিনীকে সমর্থন করছে, তাতে রাশিয়ার গায়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তকমা লাগতে পারে বলে অনেক দিন ধরেই জল্পনা চলছিল। জল্পনা সত্যি করে ভোটাভুটিতে হার হল রাশিয়ার।
রাষ্ট্রপুঞ্জের যে শাখা গোটা বিশ্বে মানবাধিকার সুরক্ষিত রাখতে কাজ করে, সেই রাষ্ট্রপুঞ্জ মানবাধিকার পরিষদে রাশিয়া ২০০৬ সাল থেকে একটানা ২০১২ সাল পর্যন্ত সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়ে এসেছে। তার পর ২০১৩ সালে ফের রাশিয়া ৩ বছরের জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জ মানবাধিকার পরিষদের সদস্য হয়। সেই মেয়াদ এ বছরই শেষ হয়েছিল। রাশিয়া ছাড়াও আরও ১৩ দেশের মেয়াদও একই সঙ্গে শেষ হয়েছিল। সেই ১৪টি শূন্য আসনের জন্য নতুন সদস্য বেছে নিতে ১৯৩টি দেশ শুক্রবার ভোটাভুটিতে অংশ নেয়। রাশিয়া ১১২টি ভোট পেয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিল হাঙ্গেরি এবং ক্রোয়েশিয়া। তারা রাশিয়ার চেয়ে বেশি ভোট পেয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জ মানবাধিকার পরিষদে নির্বাচিত হয়েছে।
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে রাশিয়া সরাসরি জড়িয়ে পড়ার পর থেকেই রাষ্ট্রপুঞ্জ মানবাধিকার কমিশন থেকে রাশিয়াকে বহিষ্কারের দাবি তুলতে শুরু করেছিল বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন। কিন্তু রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সে সবে গুরুত্ব দেননি। রুশ সেনা সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বাহিনীকে সব রকম ভাবে সাহায্য করতে থাকে। বিদ্রোহীদের হাত থেকে আলেপ্পো শহর পুনর্দখলের জন্য প্রেসিডেন্ট আশাদ সাধারণ নাগরিকদের জীবন যে ভাবে বিপন্ন করে তুলেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন তার তীব্র প্রতিবাদ করছে বহু দিন ধরে। যুদ্ধবিধ্বস্ত আলেপ্পোয় এখন প্রায় পৌনে তিন লক্ষ মানুষ আটকে রয়েছেন। কিন্তু বিদ্রোহীদের দুর্বল করতে প্রেসিডেন্ট আশাদের নির্দেশে ঘন বসতিপূর্ণ আলেপ্পোর উপর নির্বিচারে বোমা বর্ষণ চলছে। আশাদের গায়ে যুদ্ধাপরাধী এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীর তকমা বহু দিন আগেই লেগেছে। তাঁর সাহায্যকারী হিসেবে রাশিয়াও একই অভিযোগে অভিযুক্ত হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞ মহল অনেক দিন ধরেই সতর্কবার্তা দিচ্ছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট পুতিন আশাদকে সাহায্য করা বন্ধ করেননি। ফলে প্রায় ৮৭টি মানবাধিকার সংগঠন রাষ্ট্রপুঞ্জ মানবাধিকার পরিষদে রাশিয়ার পুনর্নির্বাচন রুখতে ময়দানে নামে। ভোটাভুটির ফল বলছে, মানবাধিকার সংগঠনগুলি সফলই হয়েছে।
আরও পড়ুন: দলাই লামা অরুণাচলে পা রাখলে ফল ভাল হবে না, ভারতকে শাসানি দিল চিন
রাশিয়ার মতো ভারতও ২০০৬ সাল থেকেই রাষ্ট্রপুঞ্জ মানবাধিকার পরিষদের সদস্য। ২০১০ সাল পর্যন্ত একটানা ওই পরিষদের সদস্য ছিল ভারত। তার পর ২০১১-২০১৪ এবং ২০১৪-২০১৭ সালের জন্যও ভারত ফের নির্বাচিত হয়েছে। অর্থাৎ আগামী বছরের প্রায় শেষের দিক পর্যন্ত ভারত রাষ্ট্রপুঞ্জ মানবাধিকার পরিষদের সদস্যপদে থাকছে। ৪৭ সদস্যের সংগঠনে প্রতি বছর এক-তৃতীয়াংশের কাছাকাছি সদস্যপদ খালি হয়। এ বছর ১৪টি আসন খালি হয়েছিল। ২০১৭ সালে ১৮টি আসন খালি হবে এবং সেই সব আসনের জন্য নতুন সদস্যরা নির্বাচিত হবেন। একই ভাবে ২০১৮ সালে ১৫টি আসনের জন্য নির্বাচন হবে।
রাশিয়া এই পরাজয়কে অবশ্য গুরুত্বহীন হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। রুশ দূত ভিতালি চুরকিন বলেছেন, ‘‘হাঙ্গেরি এবং ক্রোয়েশিয়া জিততে পেরেছে কারণ তাদের আকারের কারণে আন্তর্জাতিক কূটনীতির ঝড়-ঝাপটা তাদের গায়ে লাগে না।’’ আগামী বছরের নির্বাচনে রাশিয়া ফের জয়ী হবে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy