Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Russia

Russia-Ukraine War: শান্তি বৈঠকের মধ্যস্থতাকারীকে খুন করেছে ইউক্রেন, দাবি করল রাশিয়া

দ্বিতীয় পর্যায়ের শান্তি বৈঠকে রাশিয়া-ইউক্রেন, দু’দেশই কথা দিয়েছিল, যুদ্ধের মাঝে আটকে থাকা নিরীহ মানুষজনকে উদ্ধারের পথ করে দেওয়া হবে।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২২ ০৭:০৬
Share: Save:

অবশেষে ‘যুদ্ধবিরতি’ শব্দটা শোনা গিয়েছিল রাশিয়ার মুখে। আজ সকালে তারা ঘোষণা করেছিল, মস্কোর সময় অনুযায়ী সকাল ১০টা থেকে ইউক্রেনের মারিয়ুপোল ও ভোলনোভকায় বন্ধ রাখা হবে হামলা। সাধারণ মানুষকে উদ্ধারের পথ করে দেওয়া হবে। তা-ই হল। নির্দিষ্ট সময়ে বন্ধ হল গোলাগুলি। অর্ধমৃত মানুষগুলো যুদ্ধের ক্লান্তি নিয়ে বেরিয়ে এল বাঙ্কার থেকে। ঠিক তখনই ফের কানফাটানো আওয়াজ, ...সব কথার কথাই রইল। বরং আরও শক্তি বাড়িয়ে দিনভর চলল রুশ গোলাবর্ষণ। তড়িঘড়ি বন্ধ করে দিতে হল উদ্ধার অভিযান।

দ্বিতীয় পর্যায়ের শান্তি বৈঠকে রাশিয়া-ইউক্রেন, দু’দেশই কথা দিয়েছিল, যুদ্ধের মাঝে আটকে থাকা নিরীহ মানুষজনকে উদ্ধারের পথ করে দেওয়া হবে। এর পরের ২৪ ঘণ্টা এ নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করেনি রাশিয়া। কিন্তু যা তারা বলল, আর যা করল, তাতে স্তম্ভিত গোটা বিশ্ব।

কথার খেলাপ করা বা ভুয়ো তথ্য দেওয়া, যুদ্ধের গোড়া থেকেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে এ ধরনের অসংখ্য অভিযোগ উঠছে। গত কাল তারা একটি রিপোর্টে দাবি করে, দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি। এ-ও জানায়, পোল্যান্ডে রয়েছেন তিনি। আজ সেই দাবি উড়িয়ে দিয়ে ইনস্টাগ্রামে হাজির হন জ়েলেনস্কি। কিভে নিজের অফিসে বসে ভিডিয়ো করে তা পোস্ট করেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। সঙ্গে লেখেন, ‘‘আমি কিভেই আছি। এখানে বসে কাজ করছি। কেউ কোথাও পালিয়ে যায়নি।’’ এর পরে আর তাদের মতামত জানায়নি মস্কো। বরং আজ তারা নতুন খবর দিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি বৈঠকের মধ্যস্থতাকারী ডেনিস কিরিভকে খুন করা হয়েছে। খবর ছড়িয়েছে, রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে তাঁকে খুন করেছে ইউক্রেন।

আজভ সাগরের তীরে ইউক্রেনের মারিয়ুপোল বন্দরটি কৌশলগত ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খেরসেন বন্দরকে দখল করতে পারলেও এটিকে এখনও কব্জা করতে পারেনি রাশিয়া। গত কয়েক দিন ধরে বিধ্বংসী হামলা চলছে এ শহরে। ক্ষোভ উগরে দিয়ে মারিয়ুপোলের মেয়র গত কাল জানান, পরিস্থিতি এমনই, কেউ জখম হলে তাঁকে যে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে, সেই পথটুকু রাখছে না রুশরা। প্রায় একই অবস্থা ভোলনোভকায়। আজ সকালে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ঘোষণা করে, এই দুই শহর থেকে সাধারণ মানুষকে উদ্ধারের জন্য নিরাপদ করিডর করে দেওয়া হবে। যুদ্ধ বন্ধ রাখা হবে। কিন্তু কত ক্ষণের জন্য, তা উহ্য রাখে মস্কো।

কত ক্ষণ রুশ হামলা বন্ধ ছিল, তা স্পষ্ট নয়। তবে যুদ্ধবিরতির খবর প্রকাশ্যে আসার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই ইউক্রেন জানায়, উদ্ধারকাজ চালানো সম্ভব হচ্ছে না। সাধারণ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরে যেতে বলা হচ্ছে। মারিয়ুপোল থেকে জ়াপোরিজিয়া যাওয়ার রাস্তাটিকে মানব করিডর করা হয়েছিল। ওই রাস্তাটিকে নিশানা করেই গোলাবর্ষণ শুরু করে রাশিয়া। যে যেখানে পারে প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয় নেয়। যাঁরা রওনা দিয়েছিলেন, মাঝপথ থেকে তাঁদের অনেকে ফিরে আসেন। তাঁরা জানান, রাস্তায় তত ক্ষণে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে একাধিক লাশ। পরে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের দফতরের উপপ্রধান কিরিলো টিমোশেঙ্কো সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘‘রাশিয়ার পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতি মানা হয়নি। ক্রমাগত হামলা চালানো হয়েছে মারিউপোল ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায়।’’

ভোলনোভকাতেও কথা রাখেনি ক্রেমলিন। উপ-প্রধানমন্ত্রী ইরিনা ভেরেশচুকও সাংবাদিকদের কাছে বলেন, ‘‘হামলা বন্ধ রাখার জন্য আমরা রাশিয়ার কাছে বারবার আবেদন জানাচ্ছি।’’ একটি রুশ দৈনিকের রিপোর্টে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক তাদের জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি চলাকালীন রাশিয়ার সেনাবাহিনীকে নিশানা করে হামলা চালানো হয়েছিল। জ়েলেনস্কি এ দিনও বলেন, ‘‘যা যা করা সম্ভব, করে চলেছি। দেখা যাক, কথা বলে কোনও সমঝোতায় পৌঁছতে পারি কি না।’’

মারিউপোলের পরিস্থিতি ভীষণই শোচনীয়। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে রুশরা। হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় ঘর গরম রাখার উপায় নেই। ফোনের পরিষেবা নেই। খাবার নেই, জল নেই। ওষুধের দোকানগুলোতে ওষুধও নেই। মারিউপোলের মেয়র ভাদিম বয়চেঙ্কো জানান, যুদ্ধবিরতির কথা শুনে শহর ছেড়ে পালাতে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। বাস ছাড়ার জন্য তৈরি হচ্ছিল। এমন সময় হঠাৎই গোলাবর্ষণ শুরু হয়। বয়চেঙ্কো বলেন, ‘‘শহরের সব বাসিন্দার জীবনের দাম আছে। আমরা ঝুঁকি নিতে পারি না। উদ্ধারকাজ বন্ধ করে দিতে হয়েছে।’’

ব্রাসেলসে নেটোর বৈঠকে যোগ দেওয়ার পরে আজ পোল্যান্ডে পৌঁছেছেন আমেরিকার বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। এখানে ইউক্রেনের মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে পারেন তিনি। ইউক্রেনের আকাশপথকে ‘নো-ফ্লাই জ়োন’ ঘোষণা করতে নেটোর কাছে আবেদন জানিয়েছিল কিভ। আকাশপথে রুশ হামলা ঠেকাতেই এই সাহায্য চেয়েছিলেন জ়েলেনস্কি। কিন্তু গত কাল তা প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছে নেটো। তাদের ব্যাখ্যা, ইউক্রেনকে নো-ফ্লাই জ়োন ঘোষণা করা হলে, পরমাণু শক্তিধর দেশ রাশিয়াকে আরও উস্কে দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে যুদ্ধ আরও বড় আকার নিতে পারে ইউরোপে। পরে আজ রাতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নেটোর বক্তব্যের রেশ ধরে বলেন, ‘‘ইউক্রেনের আকাশকে ‘নো-ফ্লাই জ়োন করায় যারা সমর্থন জানাবে, ধরে নেওয়া হবে তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংঘর্ষে নামতে চাইছে। শুধু ইউরোপ নয়, সে ক্ষেত্রে গোটা বিশ্বের জন্য তা বিপর্যয় ডেকে আনবে।’’

ক্ষুব্ধ জ়েলেনস্কি তাঁর বক্তৃতায় নেটো গোষ্ঠীর দেশগুলির উদ্দেশে বলেছেন, “এত মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী আপনারা। আপনাদের দুর্বলতা, অনৈক্যের জন্যই এটা ঘটছে।” জ়েলেনস্কির অভিযোগ, বিমান-হানা অনিবার্য জেনেও ইউক্রেনের আকাশকে ‘নো ফ্লাই জ়োন’ ঘোষণা করেনি নেটো। তিনি বলেন, “আজ নেটোর শীর্ষ বৈঠকে স্পষ্ট হয়ে গেল, ইউরোপের স্বাধীনতাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়টিতেই সবাই একমত নয়।”

রাষ্ট্রনেতারা দ্বিধা-ধন্দে থাকলেও আমেরিকা-ইউরোপের দেশগুলিতে লাগাতার যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ চলছে। এমনকি রাশিয়ার বড় শহরগুলোতেও পথে নামছেন হাজার হাজার বাসিন্দা। ভিডিয়ো-বার্তায় তাঁদের কাছেও সাহায্য চেয়েছেন জ়েলেনস্কি। তিনি বলেন, ‘‘আমরা যদি শেষ হয়ে যাই, আপনারাও হবেন।’’ শোনা যাচ্ছে, ‘ঘরের অশান্তি’ সামলাতে মাঝেমধ্যেই ফেসবুক, টুইটার ব্লক করে দিচ্ছে মস্কো। সরকার-বিরোধী খবর রুখতে মিডিয়াকেও চাপে রাখছে তারা।

যুদ্ধ আজ দশ দিনে পা রেখেছে। নিহতের সংখ্যার কোনও হিসেব নেই। জখম হাজার হাজার মানুষ। যাঁরা দেশ ছেড়ে পালাতে পারেননি বা পালিয়ে যাননি, যুদ্ধে না-মরলেও তাঁরা হয়তো না-খেতে পেয়ে কিংবা ঠান্ডায় মরবেন। ক্রমশ সেই আশঙ্কা প্রকট হচ্ছে। রাষ্ট্রপুঞ্জ আজ জানিয়েছে, অন্তত দেড় কোটি মানুষ সব হারাতে বসেছেন। ইতিমধ্যেই ১৪ লক্ষ মানুষ ইউক্রেন ছেড়ে পালিয়েছেন। কিভের সেন্ট্রাল ট্রেন স্টেশনে আজও আতঙ্কে ভরা মুখের ছড়াছড়ি। তাঁরা যে কোনও উপায়ে হোক পালাতে চান। রাজধানীর বাইরে ৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ রুশ সেনা কনভয় দাঁড়িয়ে। এখনও তাদের ঠেকিয়ে রেখেছে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী। আশঙ্কা, যে কোনও সময় বাঁধ ভাঙবে। এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘আমরা নেটোয় যোগ দিতে চেয়েছিলাম, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হতে চেয়েছিলাম। এটাই অপরাধ! তার জন্য এই দাম দিতে হল!’’ কিভের বাসিন্দা সেনিয়ার কথায়, ‘‘এখন আর কিছু চাই না। শুধু বাঁচতে চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Russia Russia Ukraine War Kyiv ceasefire
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE