বহু ভারতীয় এইচ-৪ ভিসা নিয়ে অভিভাবকের সঙ্গে নাবালক বয়সে আমেরিকা পাড়ি দিয়েছিলেন। তাঁদের অভিভাবকেরা গিয়েছিলেন এইচ১-বি ভিসায়। এইচ-৪ ভিসায় আমেরিকায় বসবাসকারী যে ভারতীয়দের বয়স এখন ২১ বছর হয়েছে বা হতে চলেছে, তাঁরাই বিপাকে পড়েছেন। আমেরিকার নতুন ভিসা নীতির কারণে তাঁদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। যে কোনও সময়ে সে দেশ ছাড়তে হতে পারে বলে আশঙ্কায় ভুগছেন তাঁরা। এর আগে এইচ-৪ ভিসায় আমেরিকায় বসবাসকারীরা ২১ বছরে পা দেওয়ার পরেও হাতে দু’বছর সময় পেতেন। সেই দু’বছরে নতুন ভিসার আবেদন করে তা পেতে পারতেন। চাকরির চেষ্টাও করতে পারেন। নতুন অভিবাসন নীতির কারণে এখন সেই সুযোগ সঙ্কুচিত হতে চলেছে।
নতুন এই অভিবাসন নীতির কারণেই আমেরিকায় এইচ-৪ ভিসায় বসবাসকারীদের একটা বড় অংশ সমস্যায় পড়েছেন। যাঁদের বয়স ২১ হয়েছে বা হতে চলেছে, তাঁদের অনেকেই কানাডা বা ব্রিটেনের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন। আমেরিকার তুলনায় ওই দেশের ভিসা নীতি তুলনামূলক শিথিল হওয়ার কারণে তাঁরা সেখানেই বসবাস করতে শুরু করেছেন বা ভাবছেন। আমেরিকায় গ্রিন কার্ডের জন্য এখন বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। সে কারণে তাঁরা ঝুঁকি না নিয়ে অন্য দেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন।
২০২৬ অর্থবর্ষের এইচ১-বি ভিসার জন্য নাম নথিভুক্তকরণের সময়সীমা শুরু হচ্ছে, ঘোষণা করেছে আমেরিকা সিটিজ়েনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস (ইউএসসিআইএস)। ৭ মার্চ শুরু হবে নথিভুক্তকরণের প্রক্রিয়া। চলবে ২৪ মার্চ পর্যন্ত। এই এইচ১-বি ভিসার মাধ্যমেই আমেরিকার সংস্থাগুলি বিদেশি প্রশিক্ষিত কর্মীদের নিয়োগ করে। বিশেষত তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের। প্রতি বছর ৬৫ হাজার এইচ১-বি ভিসা দেয় আমেরিকা। সঙ্গে আমেরিকায় স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হওয়া ২০ হাজার জনকেও সে দেশে চাকরি করার জন্য দেওয়া হয় এই ভিসা। এইচ১-বি ভিসার জন্য যোগ্য বাছাইয়ের পদ্ধতির পরিবর্তন করেছে ইউএসসিআইএস। তাদের দাবি, জালিয়াতি রুখতেই এমনটা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত হিসেব বলছে, ১.৩৪ লক্ষ ভারতীয় তরুণ-তরুণী তাঁদের ডিপেন্ডেন্ট ভিসা হারাতে চলেছে। ওই তরুণ-তরুণীরা সকলেই অভিভাবকের সঙ্গে আমেরিকায় গিয়েছিলেন। তাঁদের অভিভাবকেরা গ্রিন কার্ড হাতে পাওয়ার আগেই তাঁরা ২১ বছরে পা দেন। আমেরিকায় গ্রিন কার্ড পাওয়ার জন্য অপেক্ষার সময় দীর্ঘ হয়েছে। কারণ, প্রচুর আবেদন জমা পড়ছে। সূত্রের খবর, গ্রিন কার্ডের জন্য যাঁরা আবেদন করেছেন, তাঁদের সেই আবেদন পূরণ হতে ১২ থেকে ১০০ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। সম্প্রতি টেক্সাসের আদালতের রায়ের কারণে চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এইচ-৪ ভিসায় আমেরিকায় থাকা ভারতীয় তরুণ-তরুণীরা ২১ বছরে পা দেওয়ার পরে আরও দু’বছর হাতে সময় পেতেন। ওই সময়ে তাঁরা আমেরিকায় নাগরিকত্ব বা নতুন ভিসার আবেদন করতে পারতেন, পাশাপাশি চাকরির আবেদনও করতে পারতেন। কিন্তু আদালতের রায়ে এখন ওই সময়ে নতুন করে আর চাকরির আবেদন করতে পারছেন না তাঁরা।
এইচ১-বি ভিসা নীতির সমালোচনা করেছেন মার্কিন সেনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তাঁর মতে, এই ভিসার মাধ্যমে আসলে ‘সেরা এবং উজ্জ্বল’ কর্মী নিয়োগ নয়, কম খরচে বিদেশ থেকে কর্মী আনা হচ্ছে। এর ফলে বিপাকে পড়েন আমেরিকার নাগরিকেরা।