Advertisement
০২ মে ২০২৪
Seikh Hasina

উত্তর-পূর্বের মুখ্যমন্ত্রীদের ঢাকায় আমন্ত্রণ হাসিনার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদ্য সমাপ্ত ভারত সফরে, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। নীতিগত ভাবে এই আমন্ত্রণ স্বীকার করেছে কেন্দ্র।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল চিত্র।

অগ্নি রায়
ঢাকা শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৭:৩০
Share: Save:

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সমস্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের তিন দিনের বাংলাদেশ সফরে আমন্ত্রণ জানিয়েছে শেখ হাসিনা সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদ্য সমাপ্ত ভারত সফরে, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। নীতিগত ভাবে এই আমন্ত্রণ স্বীকার করেছে কেন্দ্র। বিদেশ মন্ত্রকের মাধ্যমে এ বার রাজ্যগুলির সঙ্গে কথা বলে সফরের তারিখ স্থির হবে। পাশাপাশি জানানো হয়েছে, আগামী ৬ মাসের মধ্যে বসবে যৌথ নদী কমিশনের পরবর্তী বৈঠক।

শনিবার ভারতীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে একটি আলোচনা চক্রে এ কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশের বিদেশ প্রতিমন্ত্রী মহম্মদ শাহরিয়র আলম। তাঁর কথায়, “ভারতের ডোনার (উত্তরপূর্বাঞ্চল) বিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক খুবই আশাব্যঞ্জক হয়েছে। আমরা উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের তিন দিনের বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। উত্তর-পূর্বের সঙ্গে সরাসরি বাণিজ্যের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে তা নিয়ে আমরা আলোচনা করব।” তাঁর কথায়, অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা মাঝে মাঝেই বাংলাদেশ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে থাকেন ঠিকই! কিন্তু তিনিই আবার বলেন বাংলাদেশে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী রয়েছেন বলে উত্তর-পূর্বাঞ্চল শান্ত রয়েছে। ফলে ও নিয়ে ভেবে লাভ নেই। বাংলাদেশের বিদেশ প্রতিমন্ত্রীর কথায়, বাণিজ্যের পাশাপাশি নিরাপত্তা নিয়েও কথা হবে তাঁদের সঙ্গে।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও দিল্লিতে দেখা করতে চেয়েছিলেন হাসিনা। কিন্তু মমতাকে সে সময় দিল্লিতে ডাকা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে শেখ হাসিনা তখন বলেন, “মমতা আমার বোনের মতো। ও যখন চাইবে আমার সঙ্গে দেখা করতে পারে।” আজ অবশ্য এই নিয়ে মন্তব্য করে বিতর্ক বাড়াতে চাননি শাহরিয়র আলম। শুধু বলেছেন, “পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে আমাদের সব সময়েই যোগাযোগ রয়েছে।”

হাসিনার ভারত সফরকে সাম্প্রতিক কালের মধ্যে ‘সেরা’ বলেই মনে করছেন বাংলাদেশের মন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, “২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সব ভারত সফর এবং শীর্ষ বৈঠকে আমি প্রতিনিধি হিসাবে থাকার সুযোগ পেয়েছি। এ বারের বৈঠক খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ কোভিড থেকে উঠতে না উঠতেই রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা আন্তর্জাতিক অর্থ ব্যবস্থাকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করে তুলেছে। কিন্তু আমার মতে, এই সফর সফলতম। ৭টি চুক্তিপত্র সই এবং ৬টি প্রকল্পের উদ্বোধন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী জানিয়েছেন, বাংলাদেশের যা প্রয়োজন আমরা করব। এই ভাষায় তাঁকে বলতে আগে আমরা শুনিনি।” ভুটান এবং নেপালে ভারতের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ভাবে পৌঁছে যাওয়ার বিষয়টিকে ঢাকার জন্য অত্যন্ত মূল্যবান বলে মনে করছেন তিনি। শাহরিয়র বলেন, “জয়পুর থেকে অজমের যাওয়ার রাস্তাই বলে দিয়েছে সম্পর্কের গভীরতা কতটা। রাস্তা জুড়ে মৈত্রীর প্ল্যাকার্ড। লাখ লাখ মানুষে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে হাত নেড়েছেন, সংযুক্ত হতে চেয়েছেন।”

বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারতের অন্যান্য প্রদেশ থেকে পণ্য রফতানি যেমন সহজতর এবং কম খরচসাপেক্ষ হল, তেমনই তা বাংলাদেশের জন্যও লাভজনক। বাংলাদেশ থেকেও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সরাসরি বাণিজ্যের যে বিপুল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ যেমন বাড়াবে, তেমনই বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্যও কার্যকরী হবে। চা, সুতি, সিনথেটিক কাপড়, বিভিন্ন কৃষিপণ্য বাংলাদেশ উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে আমদানি করতে পারবে সহজেই। আবার বাংলাদেশ থেকে বস্ত্র, সুতির চাদর, সোয়া তেল বিভিন্ন খাদ্যপণ্য সরাসরি রফতানিও করতে পারবে।

রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা নিয়ে এ বারের সফরে ‘ইতিবাচক আলোচনা’ হয়েছে বলে আজ জানিয়েছেন বাংলাদেশের মন্ত্রী। যৌথ বিবৃতি উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “মায়নমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে দশ লাখের বেশি তাড়া খাওয়া মানুষকে যে ভাবে বাংলাদেশ আশ্রয় এবং মানবিক সহায়তা দিয়েছে, ভারত তার প্রশংসা করেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ এবং মায়ানমার উভয় দেশের একমাত্র সাধারণ প্রতিবেশী হিসাবে ভারত জানিয়েছে, এই উদ্বাস্তু শরণার্থীরা যাতে নিরাপদে দ্রুত এবং স্থায়ী ভাবে দেশে ফিরতে পারেন তার জন্য নয়াদিল্লি সহায়তা বজায় রাখবে। এত স্পষ্ট ভাবে ভারত এ কথা আগে কখনও বলেনি।”

ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে বয়ে যাওয়া ৫৪টি নদীর জল বণ্টন নিয়েও আশাবাদী ঢাকা। শাহরিয়র আলম বলেছেন, “গঙ্গাচুক্তির পঁচিশ বছর পরে আবারও একটা জলবণ্টন চুক্তি (কুশিয়ারা) হল। বারো বছর পর যৌথ নদী কমিশনের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকও হল। এর ফলে একটা নতুন উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। আমাদের কাজ একে ধরে রাখা। কারণ আগের গতিতে চললে ৫৪টি নদীর সমাধান করতে কয়েকশো বছর লেগে যাবে! আমরা ছ’মাসের মধ্যেই আবার নদী কমিশনের বৈঠক করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Seikh Hasina Bangladesh India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE