বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর ৫০ বছর উপলক্ষে বাংলাদেশের কোথাও কেউ কর্মসূচি করতে গেলেও যে তাঁদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সে কথা আগেই জানিয়েছিলেন অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, শুক্রবার দুপুর এবং শনিবার সকাল মিলিয়ে সাতক্ষীরার কলারোয়ায় দু’দফায় শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি ভাঙা হয়। অন্য দিকে গত কাল মুজিবরকে শ্রদ্ধা জানানোয় সাংস্কৃতিক ও গণমাধ্যমের দুনিয়ার কয়েক জন ব্যক্তিত্বকে ‘সাংস্কৃতিক ফ্যাসিস্ট’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একাংশ। তাঁদের ছবিতে জুতো ছোড়া হয়েছে। একই কর্মসূচি পালিত হয়েছে চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড় মোড়ে।
কলারোয়া থানার ওসি সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতে কলারোয়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে থাকা মুজিবুরের প্রতিকৃতিতে ফুল-মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন দু’জন। দু’জনেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী বলেই সূত্রের খবর। তবে শুক্রবার এ কথা জানাজানি হতেই উত্তেজনা ছড়ায়। শুক্রবার দুপুরে প্রথম দফায় প্রতিকৃতি ভাঙা হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। শনিবার সকালে আবারও প্রতিকৃতিটি ভাঙা হয়। যাঁদের ফুল-মালা দিতে দেখা গিয়েছে, তাঁদের এখনও আটক করা হয়নি বলেও জানা গিয়েছে।
মুজিবুরের প্রতিকৃতি ভাঙা নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাতক্ষীরা শাখার প্রাক্তন আহ্বায়ক আরাফাত হোসাইন সমাজমাধ্যমে একটি পোস্টে লিখেছেন, ‘‘কলারোয়ায় মুজিব প্রতিকৃতি ভাঙতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বাধা দিয়েছেন। বাহ, বাহ, ইউএনও বাহ! ডিসি (জেলাশাসক) মোস্তাক আহমেদ কি আওয়ামী পুষছে? ইউএনও কী ভাবে মুজিবের প্রতিকৃতি রেখে অফিস করত? এ জুলাই বিপ্লবের পরেও তিনি কী ভাবে বলেন- ভাঙার দরকার নেই, এখানে আমরা অন্য কিছু বানাব।’’
ইউএনও মো জহরুল ইসলাম বলেন, ‘‘বর্তমানে আমি ছুটিতে আছি, কলারোয়ায় নেই। এক জন ছাত্র প্রতিনিধি পরিচয়ে আমাকে ফোন করলে আমি তাকে বলেছিলাম স্থাপনাটি ভেঙো না, আমরা ওখানে কলারোয়া উপজেলার ম্যাপ লাগিয়ে দেব। প্রতিকৃতি ভাঙার ব্যাপারে কোনও বাধা দেওয়া হয়নি।’’অন্য দিকে গত কাল মুজিবরকে শ্রদ্ধা জানানোয় আজ ‘সাংস্কৃতিক ফ্যাসিস্ট’ অ্যাখ্যা দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃতি জগতের ৩০ জন ব্যক্তিত্বের ছবিতে জুতো ছোড়া হয়েছে। ওই ৩০ জনের মধ্যে রয়েছেন কণ্ঠশিল্পী লিঙ্কন, রাহুল আনন্দ, সিয়াম, জাহের আলভি, অরুণা বিশ্বাস প্রমুখ। অন্য দিকে চট্টগ্রামের চেরাগী মোড়ে শেখ হাসিনা-সহ আওয়ামী লীগের নেতাদের ছবি ছিল। সঙ্গে ছিল জয়া আহসান, চঞ্চল চৌধুরী, শম্পা রেজা, শাকিব খান, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক সাকিব আল হাসান-সহ অনেকের ছবি। সেখানেও ছবিতে জুতো ছোড়া হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রামের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আরমান শাহরিয়ার বলেন, তাঁরা স্বাধীনতা সংগ্রামে শেখ মুজিবর রহমানের ভূমিকা অস্বীকার করেন না। কিন্তু তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীকে ঘিরে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে আওয়ামীপন্থী সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা ‘আওয়ামীপন্থী ফ্যাসিজম’কে স্বাভাবিক রূপ দিতে চাইছেন।
মুজিবুরের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলায় আয়োজিত একটি প্রার্থনা সভা থেকে আটক করা হয়েছে তিন জনকে। মনে করা হচ্ছে, প্রার্থনা সভার একটি ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে ওই তিন জনকে আটক করেছে পুলিশ। এ ছাড়াও, মুজিবুরের মৃত্যুবার্ষিকীতে ধানমন্ডি ৩২-এ শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে এসে যে রিকশাচালক মারধরের শিকার হয়েছিলেন, এ বার তাঁর বিরুদ্ধেই খুনের চেষ্টার মামলা করে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)