E-Paper

যুদ্ধ আরও প্রবল, উত্তর গাজ়ায় ঢুকল ইজ়রায়েলি বাহিনী

সত্যিই কি দক্ষিণে গেলে আর বিপদ নেই! গাজ়া একটা ছোট্ট ভূখণ্ড। তাতে ২৩ লক্ষ মানুষের বাস। বিশ্বের সবচেয়ে ঘন জনবসতি এখানে। এই সব মানুষকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে দক্ষিণের দিকে।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:২৫
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

তেল আভিভ, ২৮ অক্টোবর: প্রবল যুদ্ধ শুরু হয়েছে গাজ়ায়। ভূখণ্ডের এক-একটা করে অংশ ধরছে ওরা, সাফ করছে, আবার এগোচ্ছে। এই রণকৌশলই নিয়েছে ইজ়রায়েলি বাহিনী। ইন্টারনেট, ফোনের নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। ফলে ওই ‘কয়েদখানার’ ভিতরে কী হচ্ছে, তা একেবারেই অস্পষ্ট। এর মধ্যেই স্থানীয় সংবাদমাধ্যম মারফত বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু খবর ভেসে আসছে। গাজ়ার এক সাংবাদিক বলেছেন, ‘‘নৃশংস...। ভাবিনি আজকের সকালটা দেখতে পাব। একের পর এক বোমা বিস্ফোরণ, খোলা রাস্তায়, সরকারি ভবনে, মাঠে-ময়দানে, সমুদ্র সৈকতে... সর্বত্র।’’ ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, গাজ়ার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে ইজ়রায়েলি বাহিনী। তিনি বলেন, ‘‘এ যুদ্ধ দীর্ঘ ও কঠিন হবে। তবে আমরা জিতবই।’’

ইজ়রায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, যুদ্ধের গতি যে বাড়বে, তারা আগে থেকে সে বিষয়ে গাজ়ার বাসিন্দাদের সতর্ক করেছিল। আকাশ থেকে প্রচারপত্র ছড়ানো হয়েছিল, রেডিয়োতে ঘোষণা করা হয়েছিল, ইন্টারনেটে জানানো হয়েছিল। অনুরোধ করা হয়েছিল, উত্তর গাজ়া থেকে সরে দক্ষিণে চলে যেতে। সেই মতো বহু মানুষই দক্ষিণের শরণার্থী শিবিরগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। খান ইউনিসের জনসংখ্যা ৪ লক্ষ থেকে বেড়ে রাতারাতি ১২ লক্ষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সেখানে হামলা চলছে না, এমন নয়। বসতি অঞ্চলেও বোমা ফেলছে ইজ়রায়েল। আইডিএফ-এর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারির বক্তব্য, এ বিষয়ে তাঁদের কিছু করার নেই। কারণ হামাস বসতি অঞ্চলগুলিকে ঢাল করছে। আবাসন, হাসপাতাল, ধর্মস্থানে অস্ত্র লুকিয়ে রাখছে। সম্প্রতি একটি হাসপাতালে হামলার ঘটনা নিয়ে বিতর্ক বেধেছিল। ইজ়রায়েল বলেছিল, হামাসেরই ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে হাসপাতালে পড়েছে। এ বারে তারা দাবি করল, ওটি হামাসের ঘাঁটি ছিল। গাজ়াবাসীর জন্য হাগারির সতর্কবার্তা, ‘‘সময় ফুরোচ্ছে। আপনাদের ভালর জন্যই বলছি, দক্ষিণের দিকে চলে যান।’’

সত্যিই কি দক্ষিণে গেলে আর বিপদ নেই! গাজ়া একটা ছোট্ট ভূখণ্ড। তাতে ২৩ লক্ষ মানুষের বাস। বিশ্বের সবচেয়ে ঘন জনবসতি এখানে। এই সব মানুষকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে দক্ষিণের দিকে। কিন্তু তার পর কী হবে? গাজ়ার বাসিন্দারা বলছেন, এই ভূখণ্ডের কোনও অংশ আর নিরাপদ নেই। মিশর রাফা সীমান্ত বন্ধ করে রেখেছে। সে দেশে পালানোর উপায় নেই। আর এক দিকে ভূমধ্যসাগর... তা-ও নিরাপদ নয়। সমুদ্রে ইজ়রায়েলি যুদ্ধজাহাজ থেকে ধেয়ে আসছে গোলা। গাজ়া স্ট্রিপের উত্তরে বেট হানুনে প্রবল যুদ্ধ চলেছে কাল। সেখান থেকে ক্রমে একটু-একটু করে দক্ষিণের দিকে এগোনোর লক্ষ্য। ইজ়রায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে, কাল রাত থেকে স্থলবাহিনী আরও ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে গাজ়া ভূখণ্ডে। হামাসও স্বীকার করছে পরিস্থিতি। তারা জানিয়েছে, শুধু সীমান্ত নয়, গাজ়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ইজ়রায়েলি সেনার সঙ্গে সম্মুখ সমর শুরু হয়েছে। হাগারির কথায়, ‘‘হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার স্মৃতি ইজ়রায়েল ভুলবে না।’’

গাজ়ার ভিতর থেকে কোনও খবরই সে ভাবে বাইরে আসছে না। স্বাভাবিক ভাবেই তাই গুজব ছড়াচ্ছে। গাজ়ার বাসিন্দাদের অনেকের কাছে ইজ়রায়েলের ফোন নম্বর রয়েছে। তাঁদের থেকে কিছুটা খবর পাওয়া যাচ্ছে। তেমনই এক জন জানান, উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিমের বাসিন্দাদের থেকে জানা গিয়েছে, ইজ়রায়েলি বাহিনী স্থল অভিযান শুরু করেছে। বসতি এলাকায় এখনও ট্যাঙ্ক ঢোকেনি, তবে সীমান্তের চারপাশে টহল দিচ্ছে ইজ়রায়েলি ট্যাঙ্ক। সেই সঙ্গে একটানা বিমানহানা চলছে। লোকজন বলছেন, তাঁরা বহু বছর ধরে যুদ্ধ দেখছেন, কিন্তু এখন গাজ়া একেবারে ‘নরক’।

গাজ়ার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, মৃতের সংখ্যা ৭৭০৩ ছাড়িয়েছে। তবে গত কালের একটানা বিমান হানায় কত জন প্রাণ হারিয়েছেন, তার হিসেব নেই। গাজ়ায় দু’শোরও বেশি ইজ়রায়েলি হামাসের হাতে বন্দি রয়েছে। আইডিএফের দাবি, ওদের ফিরিয়ে আনাই এই অভিযানের মূল লক্ষ্য। হামাস জানিয়েছে, প্যালেস্টাইনি বন্দিদের মুক্তি দিলে তবেই ইজ়রায়েলিদের
ছাড়া হবে। সংবাদ সংস্থা

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

hamas israel

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy