প্রতীকী ছবি।
এই সুদূর নর্ডিক দেশ সুইডেনে এসেছি ২০০৮ সালে, কাজের সূত্রে। গত ১৪ বছর উপসালা শহরে। খুব শান্ত জায়গা। তবে ভারতীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান খুবই বিরল। আমেরিকা বা ব্রিটেনের সঙ্গে তুলনা করতে বসলে একেবারে হাতে গুনে ফেলা যায়। আমার যতদূর স্মৃতি, মাঝে কয়েকটা বলিউডের ছবি আর কিছু দক্ষিণ ভারতীয় ছবির প্রিমিয়ার হয়েছিল এ দেশের রাজধানী স্টকহলমের গুটিকয় সিনেমা হলে। তার উপরে এই রকম নাস্তিক দেশে কোনও বাঙালির পক্ষে দুর্গাপুজোর প্রত্যাশা করাটাই কঠিন।
আসার বেশ কিছু দিন পরে আমাদের বন্ধুবৃত্ত থেকে জানতে পারলাম, উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক দম্পতি দুর্গাপুজো শুরু করবেন। প্রথম দিকে আমাদের বাঙালি বন্ধুবৃত্তে যারা আছি, তারাই যেতাম। খুব ছোট প্রতিমা। কিছু ফল আর এখানকার এক ধরনের ফুল দিয়ে পুজো হত। ইন্টারনেট থেকে মন্ত্র চালিয়ে দেওয়া হত অঞ্জলি। পুজোর পরে সবার রান্না করে আনা খাবার এক সঙ্গে সবাই মিলে খাওয়া। তার পরে গান-বাজনা— রবীন্দ্রসঙ্গীত। বেশ ভালই কাটত সপ্তাহের শেষটা। সাধারণত পুজোর-দিনে এই পুজো হয় না। হয় তার পরের শনি-রবিবারে। কুড়ি-তিরিশ জনের ভাল একটা মজলিশ বলা চলে। পুজো এখন আরও বড় হয়েছে ‘সান্যাল বাড়ি’ নামে। লোকজনও বেড়েছে।
স্টকহলম সর্বজনীন পুজোয় গিয়েছিলাম পরে এক বার। সেখানে দর্শনার্থী আরও বেশি। দশ বছরেরও বেশি পুরনো প্রবাসী বাংলাদেশি এবং ভারতীয় বাঙালিদের পুজো। প্রায় তিন-চারশো লোক হয়। প্রতি তিন বছর অন্তর দুর্গা প্রতিমা আসে ভারত থেকে। প্রত্যেক বাঙালি পরিবার অক্লান্ত পরিশ্রম করে পুজোর ভোগের ব্যাবস্থা করে, যেটা খুবই তারিফ করার মতো একটা ব্যাপার! থাকে শিশুদের বসে আঁকো প্রতিযোগিতা আর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও।
গত বছর আর একটা দুর্গাপুজোয় গিয়েছিলাম। ‘উৎসব কুলটুরফোরেনিং উপসালা’ সেটার আয়োজন করে সপ্তাহের শেষে, মাঝারি মাপের প্রতিমা এনে। এখানেও প্রবাসী বাংলাদেশি ও কলকাতার বাঙালিরাই। এ বার বাঙালির দুর্গাপুজো ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের সম্মান পেয়েছে। খুবই ভাল লাগে, দু’-পার বাংলার মানুষ এক হয়ে এখানেও মায়ের আরাধনা করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy