Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

এল নিনোর কোপে খরা, বন্যা, অনাহারের অশনি সঙ্কেত ২০১৬তে

আবহাওয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী এল নিনোর কবলে পৃথিবী। এত উষ্ণ এল নিনো আগে দেখেনি এই গ্রহ। প্রশান্ত মহাসাগরের এই খামখেয়ালিপনা এত দীর্ঘস্থায়ী ক’বার হয়েছে, তাও হাতে গোনা যায়। ফলে ২০১৬ সালে ব্যাপক খরা এবং খাদ্যসঙ্কটের মুখোমুখি হতে চলেছে বিশ্ব।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৬:১৫
Share: Save:

আবহাওয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী এল নিনোর কবলে পৃথিবী। এত উষ্ণ এল নিনো আগে দেখেনি এই গ্রহ। প্রশান্ত মহাসাগরের এই খামখেয়ালিপনা এত দীর্ঘস্থায়ী ক’বার হয়েছে, তাও হাতে গোনা যায়। ফলে ২০১৬ সালে ব্যাপক খরা এবং খাদ্যসঙ্কটের মুখোমুখি হতে চলেছে বিশ্ব। শুধু আফ্রিকা মহাদেশেই ৩ কোটি ১০ লক্ষ মানুষ অনাহারের মুখে পড়বেন। সতর্কবার্তা দেওয়া শুরু করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।

এল নিনো আবহাওয়ার একটি বিশেষ পর্যায়। ২ বছর থেকে ৭ বছরের মধ্যে ফিরে ফিরে আসে এল নিনো। প্রশান্ত মহাসাগরের খামখেয়ালিপনাতেই এল নিনোর জন্ম হয়। ওই মহাসাগরের মাঝামাঝি এলাকায় জলভাগ উষ্ণ। সেই উষ্ণ জল যখন বড় এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে তখন এল নিনোর জন্ম হয়। মধ্য প্রশান্ত মহাসাগর থেকে প্রসারিত হয়ে উষ্ণ জল উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের দিকে অনেকটা এগিয়ে যায়। এর প্রভাব পড়ে গোটা বি‌শ্বের আবহাওয়ার উপরেই। ঋতু পরিবর্তনের স্বাভাবিক গতি বাধা পায়। বন্যা এবং খরার প্রবণতা বাড়তে থাকে। ফলে চাষও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্রান্তীয় অঞ্চলে অবস্থিত দেশগুলিকেই এল নিনোর আঘাত সবচেয়ে বেশি সইতে হয়। কখনও কখনও টানা এক বছর এল নিনো স্থায়ী হয়। ঠিক যেমনটা এ বার হয়েছে। ২০১৫ সালে শুরু হওয়া এল নিনো ২০১৬ সালকেও ভোগাবে, পূর্বাভাস আবহাওয়াবিদদের।

গোটা বছরের গড় তাপমাত্রার হিসেব কষে দেখা গিয়েছে, ২০১৫ সাল হল বিশ্বের ইতিহাসে উষ্ণতম বছর। শীতকাল এ বছর অপেক্ষাকৃত অনেকটাই উষ্ণ। ক্রান্তীয় অঞ্চলে বৃষ্টিপাতও হয়েছে অনেক কম। ওই অঞ্চলের অনেক দেশেই বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের চেয়ে ২০-৩০ শতাংশ কম হয়েছে। ইন্দোনেশিয়া করাল ইতিমধ্যেই খরার কবলে। ভারতে বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের চেয়ে ১৫ শতাংশ কম। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, ব্রাজিল এবং অস্ট্রেলিয়াতেও বৃষ্টিপাত কম হবে।

এর জেরে অনেকগুলি দেশেই বন্যা এবং খরার প্রবণতা দেখা গিয়েছে। ভারতেও কোনও এলাকা অতিবৃষ্টির শিকার। কোথাও আবার বৃষ্টির অভাবে খরার পরিস্থিতি। ফসল মার খাচ্ছে। তবে এল নিনোর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর গ্রাসে আফ্রিকা মহাদেশ। ব্রিটেনের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সমীক্ষা বলছে, খরার জেরে ২০১৬ সালে ভয়াবহ খাদ্যসঙ্কটের মুখে পড়তে চলেছে আফ্রিকা মহাদেশ। ৩ কোটি ১০ লক্ষ মানুষ অনাহারের মুখে পড়বেন। ইথিওপিয়ার অবস্থা হতে চলেছে সবচেয়ে করুণ। এমনিতেই ইথিওপিয়া খরাক্লিষ্ট। তার মধ্যে ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী এল নিনোর কবলে পড়ায় খাবারের অভাব মারাত্মক আকার নিয়েছে সে দেশে। ২০১৬ সালেও বেশ কিছুটা সময় জুড়ে এল নিনোর প্রভাব থাকতে চলেছে। ফলে ইথিওপিয়ার অনাহারের পরিস্থিত আরও ভয়ঙ্কর হবে।

আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি এখন থেকেই গোটা বিশ্বকে সতর্ক করতে শুরু করেছে। ভয়ঙ্কর খাদ্যসঙ্কটের খাঁড়া ঝুলছে ক্রান্তীয় অঞ্চলের উপর। তার মোকাবিলায় এখন থেকেই ত্রাণের ব্যবস্থা না করলে একুশ শতকের পৃথিবীতেও স্রেফ না খেয়ে মরতে হতে পারে কয়েক কোটি মানুষকে। তাও শুধু এক বছরের মধ্যেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE