Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ইস্টারের ভিড়ে মানববোমা লাহৌরে, নিহত ৬৯, জখম প্রায় তিনশো

সন্ত্রাসের কোনও দেশ হয় না। ব্রাসেলসে বিস্ফোরণের আতঙ্ক কাটতে না কাটতেই লাহৌরে এক আত্মঘাতী হামলা ফের সে কথাটাই বুঝিয়ে দিল। তখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধে নামছে। একে রবিবার, তার উপরে ইস্টারের ছুটি। সব মিলিয়ে বেশ ভিড় জমেছিল শহরের অভিজাত গুলশন-ই-ইকবাল অ্যামিউজমেন্ট পার্কে। শিশুদের নিয়ে এসেছিলেন মায়েরা। হুইল চেয়ারে ঠেলে অশক্ত বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদেরও এনেছিলেন কেউ কেউ।

আহত শিশু কোলে হাসপাতালের পথে। লাহৌরে রবিবার। ছবি: এএফপি

আহত শিশু কোলে হাসপাতালের পথে। লাহৌরে রবিবার। ছবি: এএফপি

সংবাদ সংস্থা
লাহৌর শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৬ ০৩:৫৭
Share: Save:

সন্ত্রাসের কোনও দেশ হয় না। ব্রাসেলসে বিস্ফোরণের আতঙ্ক কাটতে না কাটতেই লাহৌরে এক আত্মঘাতী হামলা ফের সে কথাটাই বুঝিয়ে দিল।

তখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধে নামছে। একে রবিবার, তার উপরে ইস্টারের ছুটি। সব মিলিয়ে বেশ ভিড় জমেছিল শহরের অভিজাত গুলশন-ই-ইকবাল অ্যামিউজমেন্ট পার্কে। শিশুদের নিয়ে এসেছিলেন মায়েরা। হুইল চেয়ারে ঠেলে অশক্ত বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদেরও এনেছিলেন কেউ কেউ। হঠাৎ প্রচণ্ড বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে পার্ক। কয়েক মুহুর্ত পরে দেখা যায়, পার্ক জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ছিন্নভিন্ন দেহ। গভীর রাতে এলাকার পুলিশ সুপার মুস্তানসার ফিরোজ জানান, নিহতের সংখ্যা ৬০ ছাড়িয়েছে। জখম প্রায় তিনশো। নিহতদের বেশির ভাগ খ্রিস্টান শিশু ও মহিলা বলে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে।

এর আগেও পাকিস্তানে জঙ্গি হানার শিকার হয়েছে শিশুরা। ২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর পেশোয়ারের একটি সেনা স্কুলে তালিবান হামলায় নিহতের সংখ্যা দেড়শো ছাড়িয়েছিল। তাদের মধ্যে শিশুই ছিল ১৩৫ জন। আজকেও যেখানে হামলা চালানো হয়েছে সেটি একটি বাচ্চাদের অ্যামিউজমেন্ট পার্ক। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, পার্কের গাড়ি রাখার জায়গায় বিস্ফোরণটি ঘটে। তার খুব কাছেই ছিল বাচ্চাদের দোলনা। যেখানে কিছু ক্ষণ আগেই খেলা করছিল বাচ্চারা, সেখানটা মুহূর্তে ভরে যায় বারুদ আর রক্তের গন্ধে। মৃতদেহের ভিড়ে আর আতঙ্কের আর্তনাদে পাঁচিল ঘেরা পার্ক হয়ে ওঠে মারণফাঁদ। এক প্রত্যক্ষদর্শী কথায়, ‘‘গেটের বাইরে বেরোনোর জন্য তখন হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছে। মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়েছে শিশু। পায়ে পিষেই কত জন মরেছে কে জানে!’’ পার্কে হাঁটতে যাবেন বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন বছর ত্রিশেকের হাসান ইমরান। তাঁর কথায়, ‘‘তখনও পার্কে পৌঁছইনি। দূর থেকেই শুনি বিস্ফোরণের বিকট শব্দ। দেখলাম চতুর্দিকে আগুনের শিখা লকলক করছে। ছিটকে পড়ছে দেহ।’’

এখনও পর্যন্ত তেহরিক-ই-তালিবান বা অন্য কোনও জঙ্গি এই হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে লাহৌরের ডিআইজি হায়দর আশরফ জানিয়েছেন, ঘটনাস্থল থেকে এক আত্মঘাতী জঙ্গির দেহের উপরের অংশ পাওয়া গিয়েছে। তার মুখটি প্রায় অবিকৃত থাকায় তাকে চিহ্নিত করা সহজ হবে বলে ধারণা পুলিশের। শহর জুড়ে জারি করা হয়েছে বাড়তি সতর্কতা। হাসপাতালগুলোতে আক্রান্তদের চিকিৎসা চলছে।

নরেন্দ্র মোদী থেকে ইমরান খান— লাহৌরের এই হামলার নিন্দা করেছেন সকলেই। ভারতের প্রধানমন্ত্রী এক টুইটে জানান, ‘‘আক্রান্তদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।’’ প্রাক্তন ক্রিকেটার এবং তেহরিক-ই-ইনসাফ প্রধান ইমরান বলেন, ‘‘নিরপরাধ শিশু ও মহিলাদের উপর এই হামলার তীব্র নিন্দা করছি।’’ ওয়াশিংটন এই হামলার নিন্দা করে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘‘পাকিস্তানের এই দুঃসময়ে আমরা তাদের পাশে রয়েছি।’’ আর নোবেলজয়ী কিশোরী মালালা ইউসুফজাইয়ের কথায়, ‘‘প্রতিটি মূল্যবান জীবন বাঁচাতে পাকিস্তানের সঙ্গে সারা পৃথিবীকে এক হয়ে লড়াই চালাতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lahore blast Suicide bomber kills 69 Lahore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE