Advertisement
E-Paper

প্রতিভার স্ফুরণ ‘গৃহবন্দি’ দশাতেও!

১৬৬৫ থেকে ১৬৬৬, এই দু’বছরে এক লক্ষেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল ইংল্যান্ডে।

সংবাদ সংস্থা 

শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২০ ০৪:৫৫
শেক্সপিয়র ও নিউটন।

শেক্সপিয়র ও নিউটন।

মহামারি ছড়াচ্ছে দ্রুত। লন্ডন-সহ ইংল্যান্ডের বিভিন্ন প্রান্তে। কোন জীবাণু থেকে মহামারি, তা জানা না-গেলেও, মহামারি প্রতিরোধে কী কী করা উচিত, তার দিব্য আন্দাজ ছিল তখনও। এখনকার মতোই ঝটপট বন্ধ করে দেওয়া হল স্কুল-কলেজ। তালা ঝুলে গেল কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়েও।

সেটা ১৬৬৫। তখন তিনি বছর কুড়ির তরুণ। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিনিটি কলেজের ছাত্র। তখনও নামের আগে ‘স্যর’ খেতাব বসেনি। চমকদার পরচুলাও মাথায় ওঠেনি। আর না, গাছ থেকে আপেলটাও পড়েনি তখনও। হঠাৎ কলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফিরে গেলেন লিঙ্কনশায়ারে, নিজেদের বাড়ি উলসথর্প ম্যানরে। সেই বাড়িরই বাগানেই বিখ্যাত আপেল গাছ।

বাড়ি ফিরে নিভৃতে পড়াশোনা করার এই সূবর্ণসুযোগ হেলায় হারাননি আইজ়্যাক নিউটন। কলেজের অধ্যাপকেরা যে ধাঁচে পড়াতেন, তা অনেক সময়েই পছন্দ হত না তাঁর। বাড়িতে নিজের মতো করে বিদ্যাচর্চার অফুরন্ত সুযোগ। প্রথমেই বসে পড়েন একটি কঠিন গাণিতিক সমস্যা নিয়ে। কলেজে অনেক দিন ধরে সেটি নিয়ে চর্চা করছিলেন তিনি। সমাধান বেরোয়নি। উলসথর্পে বসে বার করে ফেলেন সমাধান। জন্ম হয় আধুনিক ক্যালকুলাসের। গাণিতিক সমস্যার সমাধান করার পরে তরুণ আইজ়্যাক চর্চা শুরু করেন আলোর তত্ত্ব নিয়ে। কথিত, কয়েকটি প্রিজ়ম নিয়ে নিজের ঘরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটাতেন নিউটন। তাঁর আলোকবিদ্যা সংক্রান্ত তত্ত্বের জন্ম এই সময়েই।

১৬৬৫ থেকে ১৬৬৬, এই দু’বছরে এক লক্ষেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল ইংল্যান্ডে। সেই দু’বছর ‘গৃহবন্দি’ থেকে ১৬৬৭ সালে যখন কেমব্রিজে ফিরলেন নিউটন, তখন তাঁর আস্তিনে গণিত ও আলোকবিদ্যার নতুন তত্ত্ব। ছ’মাসের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ফেলো’ হন নিউটন, দু’বছরের মধ্যে অধ্যাপক।

১৬৬৫-র ভয়াবহ মহামারির আগে প্রায় চারশো বছর ধরে একাধিক বার মহামারি হয়েছে ইংল্যান্ডে। নাট্যকার ও কবি শেক্সপিয়রের জীবদ্দশাতেও বেশ কয়েক বার প্লেগ-আতঙ্ক ছড়ায় এ দেশে। তাঁর জন্মের বছরেই জন্মস্থান স্ট্র্যাটফোর্ডে প্লেগে মারা যান সেখানকার এক-চতুর্থাংশ মানুষ। তারপরে ১৬০৩ সালে লন্ডনে মারাত্মক চেহারা নেয় প্লেগ-সংক্রমণ। রানি এলিজ়াবেথের মৃত্যুর পরে তখন সদ্য ইংল্যান্ডের সিংহাসনে বসেছেন রাজা প্রথম জেমস। মহামারি ঠেকাতে তিনি নানা নির্দেশিকা জারি করেন। তার মধ্যে অন্যতম— শহরের সব থিয়েটার হল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত। ফলে বন্ধ হয়ে যায় শেক্সপিয়রের সব নাটক দেখানো। নাট্যকার বেরিয়ে পড়েন তাঁর নাটকের কলাকুশলীদের নিয়ে, ইংল্যান্ডের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে নাটক দেখানোর জন্য। লন্ডনে ফিরতে না-পেরে তারপরে বেশ কিছু দিনের জন্য থেকে গিয়েছিলেন তাঁর স্ট্র্যাটফোর্ডের বাড়িতে। সে সময়ে তাঁর লেখা তিনটি নাটক— ‘কিং লিয়র’ (১৬০৫), ‘ম্যাকবেথ’ (১৬০৬) এবং ‘অ্যান্টনি অ্যান্ড ক্লিয়োপ্যাট্রা’ (১৬০৭)।

নোভেল করোনাভাইরাসে যখন অনেকটাই থমকে গিয়েছে একুশ শতকের জনজীবন, অনেকেই মনে করিয়ে দিচ্ছেন, প্রতিভার স্ফুরণ ঘটে ‘গৃহবন্দি’ দশাতেও।

William Shakespeare Isaac Newton Pandemic Coronavirus
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy