E-Paper

চিন্ময়কৃষ্ণ জেলে, রণক্ষেত্র চট্টগ্রামে নিহত আইনজীবী

ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ইসকন-এর পুণ্ডরীক ধামের এই অধ্যক্ষের জামিনের আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠায়। তার পরেই রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে চট্টগ্রাম আদালত চত্বর।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ০৭:৪৩
পুলিশের গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে। মঙ্গলবার বাংলাদেশের চট্টগ্রামে।

পুলিশের গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে। মঙ্গলবার বাংলাদেশের চট্টগ্রামে। ছবি: পিটিআই।

২৬ নভেম্বর: ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম নিয়ে গিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে তোলা হল বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ মঞ্চের আহ্বায়ক চিন্ময়কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে। রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় সোমবার ঢাকা বিমানবন্দর থেকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেফতার করেছিল তাঁকে। ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ইসকন-এর পুণ্ডরীক ধামের এই অধ্যক্ষের জামিনের আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠায়। তার পরেই রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে চট্টগ্রাম আদালত চত্বর। সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাস ছোড়ার পরে পুলিশের লাঠির আঘাতে বহু সংখ্যালঘু আহত হন। এক আইনজীবী রহস্যজনক ভাবে নিহত হন। ‘চিন্ময়স্বামীর সমর্থকেরা’ এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করা হয়। এর পরে জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম এবং বিএনপির কর্মীরা বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘুদের উপরে চড়াও হয়। অন্তত দু’টি উপাসনালয় আক্রান্ত হয়। রাতে চট্টগ্রাম আদালতের পিছনের হরিজন বস্তিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বুধবার মহানগর দায়রা জজ আদালতে ফের চিন্ময়কৃষ্ণের জামিনের আবেদনের শুনানি হবে।

চট্টগ্রামের লালদিঘি মাঠে ২৫ অক্টোবর সনাতনী জোটের সভার দিন বন্দরনগরীর একটি মোড়ে বাংলাদেশের পতাকার দণ্ডে কেউ একটি গেরুয়া পতাকা লাগিয়ে দেয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে জোটের মুখপাত্র চিন্ময়কৃষ্ণের বিরুদ্ধে স্থানীয় এক বিএনপি নেতা পুলিশের কাছে দেশদ্রোহের মামলা করে। বিএনপি পর দিন ওই নেতাকে বহিষ্কার করলেও পুলিশ মামলা চালিয়ে যায়। সোমবার বিকেলে চট্টগ্রাম আসার জন্য ঢাকা বিমানবন্দরে ঢোকার মুখে গোয়েন্দা পুলিশ চিন্ময়কৃষ্ণকে জোর করে কালো গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। পরে পুলিশ জানায়, দেশদ্রোহের সেই মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যা থেকেই বাংলাদেশ জুড়ে বিক্ষোভ শুরু করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। ঢাকার শাহবাগ ও জগন্নাথ হলে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা সংখ্যালঘুদের উপরে হামলা করে বলে অভিযোগ। রংপুর, সাতক্ষীরা ও অন্যত্রও আক্রান্ত হন বিক্ষোভকারীরা।

ইসকন-এর আন্তর্জাতিক শাখা এবং বাংলাদেশ শাখা যেমন মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের কাছে চিন্ময়কৃষ্ণের দ্রুত মুক্তি এবং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে, উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সংগঠন। এ দিনই ডেভিড ল্যামির নেতৃত্বে ব্রিটিশ এমপি-দের একটি দল সে দেশের বিদেশমন্ত্রীর কাছে বাংলাদেশে ইসলামি চরমপন্থার বাড়বাড়ন্ত নিয়ে রিপোর্ট পেশ করেছে। হাসিনা সরকারের পতনের পরে ইউনূস সরকারের আমলে বাংলাদেশে চরমপন্থী ইসলামিদের হাতে আক্রান্ত হওয়ার দু’হাজারের বেশি ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে এই রিপোর্টে। বলা হয়েছে, বিচারবিভাগকে প্রতিশোধের অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে বাংলাদেশের নতুন শাসকেরা। কমনওয়েলথ এবং অন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাকে এ বিষয়ে সক্রিয় করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ব্রিটিশ সরকারকে।

সোমবার চট্টগ্রামের ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সংখ্যালঘু ধর্মগুরুর জামিন খারিজ করে জেলে পাঠানোয় অন্য আদালতে ফের শুনানির দাবি জানান চিন্ময়স্বামীর আইনজীবীরা। কিন্তু তা না শুনে তাঁকে জেলে পাঠানোর জন্য প্রিজ়ন ভ্যানে তোলার পরে কয়েক হাজার সমর্থক পথে আটকে দাঁড়ান, কয়েক জন ভ্যানের সামনে শুয়ে পড়েন। হাওয়া বার করে দেওয়া হয় ভ্যানের চাকার। প্রায় দু’ঘণ্টা অবরোধ চলার পরে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। বেপরোয়া লাঠিচার্জ করে। ৭ জনকে মাথায় লাঠির আঘাতের কারণে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্তত ৩০ জনকে চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এর পরে অন্য গাড়িতে চিন্ময়স্বামীকে জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রিজ়ন ভ্যানের ভিতর থেকে চিন্ময়স্বামী বলেন, তাঁদের আন্দোলন রাষ্ট্র বা সরকারের বিরুদ্ধে নয়। বাংলাদেশ গঠনের পরে সংখ্যালঘুদের সঙ্গে যে বৈষম্য করা হচ্ছে, তার প্রতিবিধান করতে হবে। বলেন, “আমাকে জেলে পোরা হলেও সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যেন ঐক্যবদ্ধ ভাবে অহিংস পথে এই আন্দোলন
চালিয়ে যান।”

তবে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস বা তাঁর সরকারের সমর্থক বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী নেতৃত্ব গোটা পর্বকে ‘দেশি-বিদেশি’ চক্রান্ত বলছেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায়চৌধুরী বলেন, “সবে গুছিয়ে ওঠার চেষ্টা করা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্তের অংশ এই ঘটনা। তবে সংখ্যালঘুদের আশঙ্কার কারণ দেখছি না। বিএনপি তাঁদের নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করতে পরামর্শ দিয়েছে সরকারকে। তেমন করা হচ্ছে
বলেই খবর পেয়েছি।” জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানও ‘চক্রান্ত মোকাবিলায়’ সকলকে শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। নিহত আইনজীবী তাঁর ‘দলীয় সহকর্মী’ ছিলেন জানিয়ে বিচার দাবি করেছেন শফিকুর। বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়টি অন্তর্বর্তী সরকার গুরুত্ব
দিয়ে দেখছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

dhaka arrest Jail

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy