Advertisement
E-Paper

৭/৭-এর সকাল পাল্টে দিয়েছে বেঁচে থাকার মানে, বলছেন হাসু

৬ জুলাই: দশ বছর আগের সেই সকালটার কথা আজও স্পষ্ট মনে আছে তাঁর। ৭ জুলাই, ২০০৫। অন্য দিনের মতোই রয়্যাল লন্ডন হাসপাতালের বহির্বিভাগের রোগীদের দেখতে যাচ্ছিলেন হাসু পটেল। দীর্ঘদিন ওই হাসপাতালেরই শল্য চিকিৎসক হিসেবে কাজ করছেন হাসু। হঠাৎই শোনেন, দুর্ঘটনা এব‌ং আপৎকালীন বিভাগে একের পর এক রোগী আসা শুরু হয়েছে। ঠিক কী ঘটেছে, শোনার আগেই অপারেশন থিয়েটারে দৌড়েছিলেন।

শ্রাবণী বসু

শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৫ ০২:২১
চিকিৎসক হাসু পটেল

চিকিৎসক হাসু পটেল

৬ জুলাই: দশ বছর আগের সেই সকালটার কথা আজও স্পষ্ট মনে আছে তাঁর। ৭ জুলাই, ২০০৫।
অন্য দিনের মতোই রয়্যাল লন্ডন হাসপাতালের বহির্বিভাগের রোগীদের দেখতে যাচ্ছিলেন হাসু পটেল। দীর্ঘদিন ওই হাসপাতালেরই শল্য চিকিৎসক হিসেবে কাজ করছেন হাসু। হঠাৎই শোনেন, দুর্ঘটনা এব‌ং আপৎকালীন বিভাগে একের পর এক রোগী আসা শুরু হয়েছে। ঠিক কী ঘটেছে, শোনার আগেই অপারেশন থিয়েটারে দৌড়েছিলেন। ভাবেননি, কী সাংঘাতিক সব দৃশ্য অপেক্ষা করে রয়েছে তাঁর জন্য। এর পরের কয়েকটা দিন কেটেছিল হাসপাতালের ওটিতেই। একের পর এক রক্তাক্ত রোগীর অস্ত্রোপচার করেছেন। কারও হাত কাটা গিয়েছে। কারও বা দু’টো পা। কারও বা পাল্টাতে হয়েছে পুরো মুখটাই। অক্লান্ত পরিশ্রম সত্ত্বেও দিনের পর দিন নিজের কাজটা করে গিয়েছেন হাসু।
লন্ডন বিস্ফোরণের দশ বছর পূর্তি হচ্ছে কাল। ২০০৫ সালের ৭ জুলাই ধারাবাহিক বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল ইংল্যান্ডের রাজধানী। পাতাল রেল, ডবল ডেকার বাসে পর পর জঙ্গি হামলায় প্রাণ গিয়েছিল ৫২ জনের। আহত হয়েছিলেন সাতশোরও বেশি মানুষ। সেই সময় যে সব রোগীকে রয়্যাল লন্ডন হাসপাতালে আনা হয়েছিল, তাঁদের বেশির ভাগেরই চিকিৎসার দায়িত্বে ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত চিকিৎসক হাসু পটেল। প্রচারের আলো থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকা সেই চিকিৎসক মুখ খুলেছেন এত দিনে। সংবাদমাধ্যমের কাছে জানিয়েছেন সে দিনের অভিজ্ঞতার কথা। তাঁর চিকিৎসায় সেরে ওঠা রোগীরা এখনও কী ভাবে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, বলেছেন সেই সব কথাও। জানিয়েছেন, ওই একটা দিন কী ভাবে বদলে দিয়েছে তাঁর গোটা জীবনটা।

হঠাৎ এত বছর বাদে মুখ খোলার সিদ্ধান্ত কেন? হাসু বলেছেন, ‘‘আজ বুঝতে পারি, মারাত্মক সব আঘাত নিয়েও আজ আমার রোগীরা কী ভাবে সাধারণ মানুষের মতো জীবন কাটাচ্ছে। সাহস আর মর্যাদার সঙ্গে।’’

৯/১১-র পরে ৭/৭। লন্ডনবাসীর কাছে আতঙ্কের দিন। গোটা বিশ্বের কাছেও। সে দিনের সন্ত্রাসবাদী হামলায় বিধ্বস্ত বহু মানুষের জীবন নতুন করে গড়তে সাহায্য করেছেন হাসু। লন্ডনের বাসিন্দা মার্টিন রাইটের দু’টো পা-ই খোয়া গিয়েছিল অল্ডগেট স্টেশনের বিস্ফোরণে। সেই মার্টিনই কিন্তু ২০১২ সালের প্যারা অলিম্পিকে ভলিবল খেলায় অংশ নিয়েছেন। তাঁর বিয়েতে গেস্ট অব অনার হিসেবে নাম ছিল শুধুমাত্র হাসু পটেলের। কারণ হাসুই পেরেছেন মার্টিনের জীবনের হাসি ফিরিয়ে দিতে।

তবে মার্টিন তো শুধু একটা নাম। বিস্ফোরণে হাত হারিয়েছিলেন এক জন। পরে হাসুর চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠে বরফ রাজ্যে স্কি করার ছবিও পাঠিয়েছেন সেই রোগী। প্রতি বছর ৭ জুলাই এই সব রোগীই নৈশভোজে আমন্ত্রণ করেন হাসুকে। নিয়ম করে। নতুন জীবন উপহার দেওয়া চিকিৎসককে ধন্যবাদ জানানোর কোনও সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না তাঁরা। হাসু জানিয়েছেন, গত বছর শরীর ভাল না থাকায় বাড়ি থেকে বেরোতে পারেননি তিনি। তাই খাবার-দাবার নিয়ে প্রাক্তন রোগীরাই সে দিন তাঁর লন্ডনের ফ্ল্যাটে হাজির হয়ে গিয়েছিলেন।

৭/৭-এর সেই সকালে হাসু কিন্তু প্রথমে জানতেন না, ধারাবাহিক বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছে গোটা লন্ডন। ভেবেছিলেন, কোনও দুর্ঘটনায় হয়তো আহত হয়েছেন এত মানুষ। সন্ত্রাসবাদী হামলার কথা যখন জানতে পারেন, তখন দুপুর গড়িয়ে গিয়েছে। ‘‘আসলে অন্য কোনও দিকে তাকানোর সময় ছিল না তখন। পরে যখন জঙ্গি হামলার কথা কানে আসে, ভীষণ রাগ হয়েছিল। আঘাতগুলো ছিল মারাত্মক। কিন্তু তার পরই ভাবলাম, এ সব ভেবে কোনও লাভ নেই। আমার এখন কাজ হল রোগীদের যথা সম্ভব দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। এমন অনেক রোগী সে সময় এসেছিলেন, যাঁদের খুব দ্রুত পুনর্গঠনমূলক অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন। আমি তখন ঠিক সেই কাজটাই করেছি,’’ বললেন হাসু।

হামলার পরে মাসের পর মাস কাগজ পড়েননি হাসু পটেল। দেখেননি কোনও খবরের চ্যানেল। ওই সব রক্তাক্ত ছবি দেখতে ভাল লাগত না তাঁর। বলেছেন, ‘‘আসলে সন্ত্রাসের কথা ভাবা মানে সময়ের অপচয়।’’ সেই সময়টা অপচয় করেননি বলেই হয়তো এত মানুষকে জীবনে ফিরিয়ে এনেছেন হাসু। তাঁর রোগীরা বলেন, ‘‘উনি শুধু আমাদের শারীরিক ক্ষত আর বিকৃতি সারাননি। সারিয়েছেন আমাদের মনটাও।’’

আর হাসু বলেন, ‘‘ওই সব রোগীর সঙ্গে যখনই দেখা হয়, ভীষণ ভাল লাগে। বুঝতে পারি ওঁরাই জানেন, জীবনের মূল মন্ত্রটা আসলে কী।’’

shrabani basu hasu patel 7 tenth anniversary 10th anniversary terror memory london terror attack london terror victim
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy