প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এত দিন বলছিলেন, বিএনপি চাইছে না বলেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে পারছে না সরকার। শুক্রবার বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইউনূসের উপদেষ্টা পরিষদের প্রভাবশালী সদস্য তথা ছাত্রনেতা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ঘোষণা করেছেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে চলেছে সরকার। বিএনপি এত দিনে রাজি হওয়ায় তাঁরা ধরে নিচ্ছেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এ বার সরকার আইনি পদক্ষেপ করতে চলেছে।
উপদেষ্টা আসিফের ঘোষণার পরে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, “স্বাধীনতার যুদ্ধের ঐতিহ্য ধারণ করা একটি গণতান্ত্রিক দল হিসাবে আমরা সব সময়ে মানুষের পাশে থেকেছি। বারে বারে আন্দোলনে নেমে আমরা দেশকে গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে এনেছি। সেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা চক্রান্ত নতুন নয়। ইউনূস সরকার এই পথে হাঁটলে প্রমাণ হবে তারা প্রকৃতই পাকিস্তান ও আইএসআই-এর চর।” নাসিম বলেন, “দেশের ১৮ কোটি মানুষ এই অপচেষ্টা মেনে নেবেন না, আমরা নিশ্চিত। তাঁরাই এর উপযুক্ত জবাব দেবেন।”
এ দিন সকালে ঢাকার ৩২ নম্বর ধানমন্ডি রোডে শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক বাড়িটি নিশ্চিহ্ণ করে দেওয়ার কাজ শেষ হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে আর একটি ঐতিহাসিক বাড়ি ১৯৫২’র ভাষা আন্দোলনের সূতিকাগার, ঐতিহ্যবাহী বায়তুল আমান ভবনও শুক্রবারে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে শেখ মুজিব এই বাড়িতে আত্মগোপন করেছিলেন। কিশোরগঞ্জে সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের বাসভবন ভাঙচুর করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গোটা দেশের প্রায় সর্বত্র কোথাও ‘তৌহিদি জনতা’, বা কোথাও ‘ছাত্র-জনতা’-র নামে আওয়ামী লীগ নেতা-মন্ত্রীদের বাড়িঘর লুট করে ধ্বংস করা হয়েছে। রাজশাহিতে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রাক্তন মেয়র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য খায়রুজ্জামান লিটনের বাসভবন।
কোথাও ভাঙচুর ও লুঠতরাজে প্রশাসন বিন্দুমাত্র বাধা না দিলেও ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার বিবৃতি দিয়ে এই কাজের জন্য ভারতকে দায়ী করেছিল। সরকারি ভাবে বলা হয়েছে, ভারত সে দেশ থেকে শেখ হাসিনাকে রাজনীতি করতে দিচ্ছে। হাসিনার উস্কানিমূলক বক্তব্যে রুষ্ট হয়েই দেশের মানুষ ভাঙচুর ও ধ্বংসের পথ নিয়েছে। সুতরাং এর দায় হাসিনা এবং ভারতের। এ দিন দিল্লিতে বাংলাদেশ হাই কমিশনের অস্থায়ী প্রধানকে তলব করে ইউনূস সরকারের এই মন্তব্যের কড়া নিন্দা করেছে দিল্লি। দিল্লি বলেছে, ভারত সর্বাঙ্গীন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার পরেও বারবার এই সরকার ভারতের বিরুদ্ধে নেতিবাচক মন্তব্য করে চলেছে। একান্ত অভ্যন্তরীণ বিষয়েও ভারতকে জড়িয়ে এখন তারা দোষারোপ করছে। বাংলাদেশের দূতকে জানানো হয়, হাসিনা বক্তৃতা দিচ্ছেন তাঁর নিজের সিদ্ধান্তে। ভারত এ বিষয়ে কোনও হস্তক্ষেপ করে না।
জনপ্রিয় সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের অভিনেত্রী স্ত্রী মেহের আফরোজ় শাওনের পরে গোয়েন্দা পুলিশ বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে অভিযান চালিয়ে আটক করে নিয়ে গিয়েছিল আর এক অভিনেত্রী সোহানা সোবাকে। পুলিশ জানিয়েছিল, এঁদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হতে পারে। তার আগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁদের তুলে আনা হয়েছে। সমাজমাধ্যমে নেটিজেনদের অভিযোগ, ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম বইমেলায় শেখ হাসিনার ছবি আঁকা ডাস্টবিনে বাতিল কাগজ ফেলার ছবি তুলে পোস্ট করার প্রতিবাদ জানানোর ফলেই এঁদের আটক করানো হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আটকে রাখার পরে দুই অভিনেত্রীকে গোয়েন্দা পুলিশ ছেড়ে দেয়। মুক্তিযোদ্ধার কন্যা সোহানা সোবা বরাবরই স্বাধীনতা-বিরোধীদের সমালোচনায় সরব ছিলেন। বিশিষ্ট জনেরা নিশ্চিত, দুই অভিনেত্রীকে আটক ও হেনস্থা করে সকলকেই সমঝে দিতে চেয়েছে ইউনূস সরকার।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)