কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা। বিতর্কের অন্যতম মুখ। ছবি: এএফপি।
তথ্য ফাঁস, বিভিন্ন দেশের নির্বাচন প্রভাবিত করার মতো মারাত্মক সব অভিযোগে এই মুহূর্তে বেকায়দায় ফেসবুক। অবস্থা সামলাতে অবশেষে মাঠে নেমেছেন খোদ জুকেরবার্গ। ভুল স্বীকার করে ফেসবুকে একটি দীর্ঘ প্রবন্ধই লিখে ফেলেছেন সংস্থার কর্ণধার। কিন্তু যে সংস্থার বিরুদ্ধে ফেসবুকের তথ্য হাতানোর এবং অপব্যবহারের অভিযোগ, সেই কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার সঙ্গে ঠিক কী চুক্তি হয়েছিল ফেসবুকের? কী ভাবেই বা সামনে এল এই তথ্য ফাঁসের ঘটনা?
২০১৩ সালে ধনকুবের ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প (বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট)-এর তত্কালীন চিফ স্ট্র্যাটেজিস্ট স্টিভ ব্যাননের তত্ত্বাবধানে তৈরি হয় কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা। এই ব্রিটিশ সংস্থাটিকে প্রায় দেড় কোটি ডলার অর্থ সাহায্য করেন রিপাবলিকান সমর্থক রবার্ট মের্কের। সম্প্রতি অ্যানালিটিকার এক প্রাক্তন কর্মীর মাধ্যমে সংস্থা ঠিক কী ভাবে কাজ করে তা সামনে আসে। এবং কেঁচো খুড়তে কেউটের মতো বেরিয়ে পড়ে কী ভাবে ফেসবুকের বিশাল তথ্য ভাণ্ডারকে কাজে লাগিয়ে মার্কিন নির্বাচনে প্রভাব খাটিয়েছে তারা।
অ্যানালিটিকার কাজ নিয়ে বিশদে জানতে একটি স্টিং অপারেশন করে চ্যানেল ফোর। সংস্থার প্রাক্তন সিইও আলেকজান্ডার নিক্সের সঙ্গে দেখা করে চ্যানেলের প্রতিনিধি জানান, তাঁরা শ্রীলঙ্কার ব্যবসায়ী, দেশের নির্বাচনে অ্যানালিটিকার সাহায্য চান। ছদ্মবেশী সাংবাদিকদের মক্কেল ভেবে একেবারে ঝাঁপি উপুড় করে দেন নিক্স।
আরও পড়ুন: তথ্য ফাঁস: ভুল স্বীকার করলেন জুকেরবার্গ
চ্যানেল ফোর-এ দেখানো স্টিংয়ের ভিডিও ক্লিপিংসে দেখা যায় নিক্স ব্যাখ্যা করছেন, কী ভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তারা প্রভাব খাটিয়েছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের সাহায্য নেয় বলেও দাবি করেন তিনি। নিক্সের সেই তালিকায় এ দেশের বিজেপি, কংগ্রেস, জেডি(ইউ)-এর মতো দলগুলির নামও রয়েছে।
অ্যানালিটিকার কর্ণধার আলেকজান্ডার নিক্স। ছবি: রয়টার্স।
কিন্তু এর সঙ্গে ফেসবুকের যোগটা কোথায়?
জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালে ফেসবুকে একটি কুইজ-অ্যাপ বানান ইউনিভার্সিটি অফ কেমব্রিজ-এর শিক্ষক আলেকজান্ডার কোগান। কুইজে অংশ নিলে সেই ইউজার তো বটেই, তার ফেসবুক ফ্রেন্ডদের যাবতীয় তথ্যও চলে আসত অ্যাপের ডেটাবেসে। মাত্র ২ লক্ষ ৭০ হাজার ফেসবুক ইউজার এই কুইজে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু তার মাধ্যমেই প্রায় ৫ কোটি মানুষের তথ্য চলে আসে ডেটাবেসে। অ্যানালিটিকার এক কর্মী ক্রিস উইলির দাবি, অর্থের মাধ্যমে এই বিশাল তথ্য ব্যবহারের সুযোগ পায় অ্যানালিটিকা। যে বিশাল ইউজারদের বেশির ভাগই ছিলেন মার্কিন। পরবর্তীতে এই তথ্য ভান্ডারকে কাজে লাগিয়েই ট্রাম্পের স্বপক্ষে প্রচার চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন উইলি।
আরও পড়ুন: নির্বাচনে ফেসবুকের তথ্য কাজে লাগিয়েছে কংগ্রেস-বিজেপিও!
ফেসবুকের অবশ্য দাবি, কোগান যে অ্যাপের মাধ্যমে তাদের ইউজারদের তথ্য নিচ্ছেন, তা তারা জানতেন না। জানার পর, ২০১৫ সালে ওই অ্যাপ ডিলিট করে তারা। তথ্য মুছে ফেলার জন্য নির্দেশও দেওয়া হয় ফেসবুকের তরফে। কিন্তু তার পরেও যে কিছু তথ্য থেকে গিয়েছিল, তা সম্প্রতি জানিয়েছে ফেসবুক নিজেই। যা নিয়ে সরকারের পাশাপাশি নিজেরাও তদন্তে নেমেছে বলে জানিয়েছে ফেসবুক।
কী ভাবে এই তথ্য ভাণ্ডারকে কাজে লাগাত অ্যানালিটিকা? উদাহরণটা দেওয়া যাক মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে। আমেরিকার একটা বড় অংশ বরাবরই রাশিয়া বিরোধী। ফেসবুকের এই তথ্য ভাণ্ডারকে কাজে লাগিয়ে রাশিয়া বিরোধী এই ইউজারদের ওই সংক্রান্ত বিভিন্ন খবর জানাতো অ্যানালিটিকা। হিলারি ক্লিন্টন এবং রাশিয়াকে জড়িয়ে একাধিক খবর সেই সময় প্রচারিত হয়, যেগুলির বেশির ভাগই ফেক বা জাল বলে পরে জানা যায়।
ঘটনাটি সামনে আসার পর অবশ্য বেশ কিছু দিন চুপচাপই ছিল ফেসবুক। কিন্তু শেয়ারের দামে বিপুল ধস নামা এবং সামগ্রিক ভাবে ইউজারদের বিশ্বাস চলে যাওয়ার আশঙ্কা তীব্র হওয়ায় অবশেষে মুখ খুলতে হয়েছে মার্ক জুকেরবার্গকেও। ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘‘তথ্য ফাঁস ঠেকাতে আমরা বহু আগেই ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। তবুও ভুল হয়েছেই। ভুল শুধরে নেওয়ার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’’ কোনও দেশের নির্বাচনে ফেসবুক নাক গলায়নি বলে দাবি করে জুকেরবার্গ বলেন, ‘‘ভারত-সহ কোনও দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করার কোনও অভিপ্রায় ফেসবুকের নেই। সামনেই ভোট রয়েছে ভারতে। ভোটের প্রহর গুনছে ব্রাজিলও। ফেসবুকের তথ্য ভান্ডার ব্যবহার করে যাতে কোনও দেশে ভোটকে প্রভাবিত করা না যায়, সেই দিকে আমরা নজর দেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy