তখন নাকি দুর্গাপুজোর সময়ে কখনও সখনও বরফ পড়ত। এমন এক সময়ে মায়ের আগমন ঘটেছিল জার্মানির হামবুর্গে। এক কন্যার আবদারে তাঁর পিতা ব্যবস্থা করেছিলেন মাকে বিদেশে পাঠানোর। বিদেশে বাঙালিরা বহু দশক, এমনকি শতক আগে থেকেই নিজেদের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বটে, কিন্তু তাঁদের প্রাণের মা দুর্গার আরাধনার সূচনা কবে হয়েছিল, তা ইতিহাসবিদেরা ভাল বলতে পারবেন। তবে হামবুর্গে প্রচলিত একটি গল্প প্রায় সকলেরই জানা।
সত্তরের দশকের মাঝামাঝি কলকাতার ব্যবসায়ী কে সি দাস তাঁর কন্যা শ্রীমতি অনুভা নাগের আবদারে কুমোরটুলি থেকে একটি দুর্গাপ্রতিমা বিশেষ ভাবে প্রস্তুত করান। বাক্সবন্দি করে সেই প্রতিমাই পৌঁছে দেওয়া হয় জার্মানির হামবুর্গে। এই ঘটনাকেই হামবুর্গে দুর্গাপূজার সূচনা হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রাথমিকভাবে অনুভা দেবীর নিজ গৃহেই পুজোর আয়োজন করা হয়েছিল।
প্রবাসে মাতৃআরাধনার এই উদ্যোগ বাঙালি সমাজের মধ্যে নতুন উৎসাহের জন্ম দেয়। প্রথম দিকে কয়েক জন উৎসাহী ব্যক্তি নিজস্ব উদ্যোগে নিজেদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের অংশ বা ব্যক্তিগত স্থানে দুর্গাপূজার আয়োজন করলেও আশির দশকের গোড়াতেই এ পুজো সংগঠিত রূপ পেতে শুরু করে। হামবুর্গের বাঙালিদের এই সংগঠন দুর্গাপুজোকে সার্বজনীন রূপ দেয়।
তবে জার্মানিতে ক্লাব বা সংগঠন প্রতিষ্ঠার পথ সহজ ছিল না। নানা আইনি জটিলতা ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আশির দশকের শেষের দিকে একটি সংবিধানভিত্তিক বাঙালি ক্লাব আনুষ্ঠানিক ভাবে আত্মপ্রকাশ করে, যার নাম দেওয়া হয় ‘ইন্ডিয়ান ফেস্টিভ্যাল কমিটি হামবুর্গ এ ফাও’। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রতি বছর তিথি মেনে দুর্গাপূজার আয়োজন করা এবং প্রবাসী বাঙালিদের সাংস্কৃতিক বন্ধন দৃঢ় করা। শুধু বাঙালিই নয়, একটা সময় সকল ভারতীয় এবং জার্মানদের মধ্যেও এই দুর্গোৎসব খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
আজও সেই ঐতিহ্য বহমান। ২০২৫ সালেও এলবে নদীর তীরে হামবুর্গের দুর্গাপুজো প্রবাসী বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক হয়ে উঠেছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)