আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণহত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সব ধরনের কাজকর্মকে নিষিদ্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুহাম্মদ ইউনূস সরকার। ওই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ। তারা বলেছে, ‘ফ্যাসিস্ট ইউনূস সরকার বাংলার মাটিকে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ও উগ্রবাদী গোষ্ঠীর উর্বর ভূমিতে পরিণত করতে চায়’। তাদের আশা, বাংলাদেশের মানুষ ওই সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করে আওয়ামী লীগের পাশে থাকবেন। সমাজমাধ্যমেও হাসিনার দলের তৎপরতাকে রুখতে কোমর বাঁধছে ইউনূস সরকার।
ইউনূস সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গত কাল রাতেই তীব্র প্রতিবাদ জানায় আওয়ামী লীগ। দলের তরফে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে ফ্যাসিস্ট ইউনূস সরকার বাংলার মাটিকে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ও উগ্রবাদী গোষ্ঠীর উর্বর ভূমিতে পরিণত করতে চায়। বাংলার মাটিতে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ মানে হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, আদর্শ ও মূলবোধকে নির্বাসিত করা এবং স্বাধীনতাবিরোধীদের নগ্ন উল্লম্ফনকে প্রশয় দেওয়া।… এই সিদ্ধান্তকে পদদলিত করে আওয়ামী লীগের পক্ষে রাজপথে সোচ্চার থাকবে বাংলার জনগণ’।
আওয়ামী লীগের কার্যকলাপ বন্ধ করেই ক্ষান্ত থাকছে না বাংলাদেশের অন্তর্বর্তিকালীন সরকার। হাসিনার দলের ফেসবুক পেজ-সহ সাইবার স্পেসে দলটির তৎপরতা বন্ধে পদক্ষেপ করতে চলেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। আজ ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এ কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তের বিজ্ঞপ্তির জন্য অপেক্ষা করছি। তা জারি হলে এ সব পেজ নিষিদ্ধ করতে বিটিআরসির মাধ্যমে মেটা-সহ সব অনলাইন প্ল্যাটফর্মের কাছে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠানো হবে।’’
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক দুনিয়ার প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে প্রশ্ন করা হলে শফিকুল আলম আজ বলেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি না যে বিশ্বের কোনও দেশ আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় তাতে দুঃখ প্রকাশ করবে। গণতান্ত্রিক বিশ্বে এমন কোনও পক্ষ নেই, যারা নির্লজ্জ এই খুনি, গণতন্ত্র-বিরোধী ও দুর্নীতিগ্রস্ত দলের পক্ষে কথা বলবে।’’ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে বিচারের আওতায় আনার উদ্যোগ ও দলের কার্যক্রমের উপরে নিষেধাজ্ঞাকে স্বাগত জানিয়েছেন বিএনপি-র
জাতীয় স্থানীয় কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
গত দু’দিন ধরে ঢাকার শাহবাগ চত্বর-সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেছিল জাতীয় নাগরিক পার্টি(এনসিপি)। শনিবার রাতে আওয়ামী লীগের কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরে এনসিপি, জামায়াতে ইসলাম, আপ বাংলাদেশ-সহ জুলাই আন্দোলনে যুক্ত সংগঠনগুলি শাহবাগ ছেড়ে গেলেও আহতদের এই দলটি অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)