E-Paper

‘জুলাই শহিদের’ বাড়ির প্রশ্ন, আমাদের কী হবে?

মৃত আবুল হোসেনের স্ত্রী লাকী আখতার। দুই সন্তানকে নিয়ে এখন অথৈ জলে! হাসিনার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পরে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল আনন্দবাজার।

অনির্বাণ দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:৩১

—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, কিন্তু লাকী আখতারের কী হবে! তাঁর এবং তাঁর সন্তানদের ভবিষ্যৎ তো এখনও গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে!

যে সব অভিযোগে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে, তার অন্যতম আশুলিয়ায় ছ’জনকে হত্যা এবং তাঁদের মৃতদেহ পুড়িয়ে দেওয়া চেষ্টা। সাজ্জাদ হোসেন সজল, আস সাবুর, তানজীল মাহমুদ সুজয়, বায়েজিদ বুসতামি ও আবুল হোসেনকে হত্যা করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। আর এক জনের পরিচয় জানা যায়নি।

মৃত আবুল হোসেনের স্ত্রী লাকী আখতার। দুই সন্তানকে নিয়ে এখন অথৈ জলে! হাসিনার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পরে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল আনন্দবাজার। বললেন, ‘‘যা করেছে, তাতে ওঁর (শেখ হাসিনা) ফাঁসিই হওয়া উচিত। কিন্তু আমাদের কী হবে?’’ ওই হত্যাকাণ্ডের ১৫ মাস পরেও কিন্তু সরকারি ‘জুলাই শহিদের’ তালিকায় তাঁর স্বামীর নাম ওঠেনি। লাকী জানান, প্রথমে তাঁর স্বামীকে শনাক্ত করা যায়নি। হাত এবং টি-শার্ট দেখে শনাক্ত করেন তিনি। ডিএনএ পরীক্ষা হয় শনাক্ত করতে। তার পরে সচিবালয় থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতাদের দরজায় ঘুরেছেন লাকী। কিন্তু ফল হয়নি। তাঁর কথায়, ‘‘সরকারের থেকে কিছু পাইনি। সচিবালয় থেকেও আশার খবর পাইনি। ডিসি অফিস থেকে কিছু টাকা দিয়েছিল। ওই পর্যন্তই।’’ তবু লাকীর আশা, ‘‘এ বার হয়তো পাব।’’

ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী দিয়েছেন লাকী ও তাঁর শাশুড়ী (নিহত আবুলের মা)। সেই সময় উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের সঙ্গেও তারা দেখা করেন। লাকী জানান, তিনি দেখা করেছিলেন তাঁদের পাশের গ্রামের ছেলে, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সঙ্গেও। তবুও গেজেটে নাম ওঠেনি তাঁর স্বামীর। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছিলেন আবুল। তাঁর মৃত্যু পরিবারের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। ১২ বছরের এবং ২০ মাসের দুই সন্তানকে নিয়ে অকূল পাথারে লাকী। কখনও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাপের বাড়িতে, আবার কখনও কুমিল্লায় শ্বশুরবাড়িতে দুই সন্তান নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন তিনি।

লাকীর মতো এমন নিদারুণ অবস্থা নয় লীনা আক্তারের। আশুলিয়ায় নিহত বায়েজিদ বুসতামির স্ত্রী। জানালেন, ক্ষতিপূরণ হিসেবে সরকারের তরফে ১০ লক্ষ টাকা এবং জুলাই ফাউন্ডেশনের থেকে ৫ লক্ষ টাকা পেয়েছেন। হাসিনার সাজা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে গলায় এক রাশ হতাশা। বলছিলেন, ‘‘সবই তো হল, আমার কী হবে! পোশাক কারখানায় চাকরি করতাম। স্বামীর মৃত্যুর পরে তা ছাড়তে হয়। কারণ দেড় বছরের ছেলেটাকে কে দেখবে!’’ লীনার উৎকণ্ঠা, বসে থাকলে তো ওই টাকাও এক দিন শেষ হবে। তখন কী হবে! লাকীর স্বামীর মতোই লীনার স্বামীও কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। স্রেফ আর পাঁচ জনের কথায় আন্দোলন করতে গিয়েছিলেন মাত্র।

নিহত সাজ্জাদ হুসেন সজল, তানজীল মাহমুদ সুজয়, আস সাবুরদের পরিবার সরকার এবং জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন। পরিবারগুলির একটাই কথা, যা ক্ষতি হয়েছে, তা অর্থ দিয়ে পূরণের নয়। সজলের মা সাহিনা বেগম বলছিলেন, ‘‘ভেবেছিলাম ছেলেটা ইঞ্জিনিয়ার হবে। পরিবারের মুখ উজ্জ্বল হবে। সব শেষ হয়ে গেল।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bangladesh Sheikh Hasina Muhammad Yunus

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy