Advertisement
E-Paper

মায়ানমারের নীচে ১২০০ কিমির ফাটল! দুই পাতের জোরালো সংঘর্ষ, ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের কারণ ব্যাখ্যা করলেন ভূতত্ত্ববিদ

ভূমিকম্পের ফলে মায়ানমারে অন্তত ১৬০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। জোরালো এই কম্পনের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন ভারতের ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিস্‌মোলজির ডিরেক্টর ওমপ্রকাশ মিশ্র।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২৫ ১২:০২
The Sagaing Fault that caused earthquake in Myanmar explained

শুক্রবার সকালে ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে মায়ানমার। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

৭.৭ মাত্রার তীব্র ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে ভারতের প্রতিবেশী দেশ মায়ানমার। কম্পন অনুভূত হয়েছে পশ্চিমে দিল্লি, উত্তরে চিন এবং পূর্বে তাইল্যান্ড পর্যন্ত। ভূমিকম্পের ফলে মায়ানমারে অন্তত ১৬০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আমেরিকার জিওলজিক্যাল সার্ভের অনুমান, মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে যেতে পারে ১০ হাজারের গণ্ডিও। কিন্তু কেন এমন বিধ্বংসী ভূমিকম্প? ভূগর্ভস্থ কোন পাতের কয়েক মুহূর্তের নড়াচড়া মায়ানমারকে তছনছ করে দিল? ব্যাখ্যা করেছেন ভারতের ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিস্‌মোলজির ডিরেক্টর ওমপ্রকাশ মিশ্র। পরিবেশ বিষয়ক সাময়িকপত্র ‘ডাউন টু আর্থ’-কে একটি সাক্ষাৎকারে মায়ানমারের অবস্থান এবং ভূমিকম্পের খুঁটিনাটি জানিয়েছেন তিনি।

ওমপ্রকাশ জানিয়েছেন, মায়ানমারে শুক্রবারের ভূমিকম্পের নেপথ্যে রয়েছে সাগাইং ফল্ট। সাধারণত, ভূত্বকের মধ্যেকার ফাটলকে ভূবিজ্ঞানের ভাষায় ‘ফল্ট’ বলা হয়ে থাকে। মায়ানমারের সাগাইং প্রদেশের নীচে ভূত্বকে যে ফাটল রয়েছে, তা ১২০০ কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ। একেই সাগাইং ফল্ট বলা হয়ে থাকে। চওড়ায় এই ফাটলটি প্রায় ১০০ কিলোমিটার। ভূত্বকের এই ধরনের ফাটল সাধারণত ভূমিকম্পের জন্ম দেয়। এই অংশে দু’টি পাথুরে পাত একে অপরের সাপেক্ষে চলাচল করতে পারে। সাগাইং ফল্টে এর আগেও একাধিক জোরালো ভূমিকম্প হয়েছে, রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৭-এর বেশি।

উদাহরণ হিসাবে ১৯১২, ১৯৪৬, ১৯৫৬ এবং ১৯৯১ সালের ভূমিকম্পের কথা বলেছেন ওমপ্রকাশ। প্রতি ক্ষেত্রেই কম্পনের মাত্রা ৭-এর উপরে ছিল। ১৯৪৬ সালের দু’টি ভূমিকম্প ছিল সবচেয়ে জোরালো— ৭.৮ এবং ৭.৯। শুক্রবার মায়ানমারের যে অংশে ভূমিকম্পের উৎপত্তি, ১৯১২ এবং ১৯৫৬ সালের ভূমিকম্পের উৎস তার খুব কাছে ছিল। ওমপ্রকাশের কথায়, ‘‘সাগাইং ফল্টই মায়ানমারে ভূমিকম্পের কারণ। এর বিভিন্ন অংশে প্রচুর পরিমাণে ভূকম্পীয় শক্তি সঞ্চিত রয়েছে। শুক্রবারের কম্পনের ফলে এই ফাটল আরও কয়েক কিলোমিটার বেড়ে গিয়েছে। যে কারণে ব্যাঙ্কক পর্যন্ত কম্পন এত জোরালো হয়েছে।’’

ভারতের পূর্বের প্রতিবেশী দেশটির অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ওমপ্রকাশ বলেন, ‘‘মায়ানমার এমন একটি জায়গায় রয়েছে, যা মোট চারটি টেকটনিক প্লেট বা ভূকম্পীয় পাতের সংযোগস্থল। উত্তরে রয়েছে ভারতীয় পাত এবং ইউরেশীয় পাত। ভারতীয় পাত ক্রমশ আরও উত্তরে এগিয়ে ইউরেশীয় পাতের সঙ্গে ধাক্কা খাচ্ছে। ইউরেশীয় পাতের একটি ছোট অংশ আলাদা হয়ে বর্মা বা মায়ানমার পাত নাম নিয়েছে। ভারতীয় পাতটি আসলে এই পাতের নীচে প্রবেশ করছে। এ ছাড়া, সাগাইং ফল্টের ঠিক পূর্বে রয়েছে সুন্ডা পাত। ভারত এবং সুন্ডা পাত আনুভূমিক ভাবে একে অপরের দিকে এগোচ্ছে। এর ফলে প্রচুর পরিমাণ শক্তি নির্গত হচ্ছে।’’

অতীতে মায়ানমারের যাবতীয় জোরালো ভূমিকম্পের নেপথ্যে এই সাগাইং ফল্ট ছিল বলে জানিয়েছেন ওমপ্রকাশ। তবে নব্বইয়ের দশকের পর থেকে এমন ভূমিকম্প এই অঞ্চলে হয়নি। তাঁর কথায়, ‘‘নব্বইয়ের দশকের পর থেকে মায়ানমার অঞ্চলে এত বড় ভূমিকম্প হয়নি। হতে পারে, সাগাইং ফল্ট আবার নতুন করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।’’ তা যদি হয়, তবে এই অংশে আরও ঘন ঘন ভূমিকম্প হতে পারে। সে বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন ভূবিজ্ঞানীরা। মার্কিন বিশেষজ্ঞ জেস ফিনিক্স একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, শুক্রবারের ভূমিকম্পে ৩৩৪টি পরমাণু বোমার সমান শক্তি নির্গত হয়েছে। এখনও ভারতীয় এবং ইউরেশীয় পাত একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা খাচ্ছে। ফলে ভূমিকম্পের ‘আফটারশক’ কয়েক মাস ধরে চলতে পারে।

Myanmer Myanmar Earthquake earthquake
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy