রাতের অন্ধকারে ইরানে ঢুকে তাদের তিন পরমাণুকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে আমেরিকা। ইরানের ফোরডো, নাতান্জ় এবং ইসফাহান পরমাণুকেন্দ্রে ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আমেরিকার ‘বি২ বম্বার’ বোমারু বিমান সেই বোমা বহন করে নিয়ে গিয়েছিল।
রবিবার ভোরে (ভারতীয় সময় অনুযায়ী) হামলার পর খোদ ট্রাম্পই বলেন, “ফোরডো, নাতানজ় এবং ইসফাহান পরমাণুকেন্দ্রে আমাদের হামলা সফল। আমেরিকার সব ক’টি বিমান এখন নিরাপদে ইরানের আকাশসীমা থেকে বেরিয়ে এসেছে। এ বার শান্তি!” প্রেসিডেন্টের এই বিবৃতির কয়েক ঘণ্টা পরে আমেরিকার প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ পেন্টাগনে সাংবাদিকদের বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশে কাল রাতে ইরানের পরমাণু কেন্দ্রগুলি লক্ষ্য করে নিখুঁত ভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী হামলা চালানো হয়েছে। এই হামলার নাম ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’।’’
প্রতিরক্ষা সচিবের বয়ান অনুযায়ী, এই হামলায় প্রায় দেড়শোটি বোমারু বিমান ব্যবহার করা হয়েছে। গোপনীয়তা বজায় রাখতে বোমারু বিমানগুলির গতিপথ নিয়ে ইচ্ছাকৃত ভাবেই কিছুটা বিভ্রান্তি ছড়ানো হয় বলে খবর। নজর ঘোরাতে বিমানগুলির একটি দল মিসৌরি থেকে উড়ে গিয়েছিল পশ্চিমে, গুয়ামে আমেরিকান ঘাঁটির দিকে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বোমা নিয়ে সাতটি বি-২ বোমারু বিমান তখন পূর্বে উড়ে গিয়েছিল ইরানের দিকে।
আরও পড়ুন:
-
ইরানের বিশুদ্ধ ইউরেনিয়ামের সংগ্রহ কি এখনও অক্ষতই? তেমনই ইঙ্গিত মিলল মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের বক্তব্যে
-
ফোরডোয় ‘পাতালঘরে’ বড়সড় ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল! কতটা খারাপ অবস্থা, তা এখনই বলা যাচ্ছে না: রাষ্ট্রপুঞ্জের সংস্থা
-
আমেরিকার হামলার পরে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত ইরানের নাতান্জ় পরমাণুকেন্দ্র? খামেনেই সরকারের উল্টো কথাই বলছে উপগ্রহচিত্র
আমেরিকা কী ভাবে হামলা চালাল ইরানে, রইল তার ঘটনাপরম্পরা:
শুক্রবার রাত ১২.০১ (আমেরিকার স্থানীয় সময়)
মিসৌরির হোয়াইটম্যান বায়ুসেনা ঘাঁটি থেকে পূর্বে ইরানের দিকে উড়ে যায় সাতটি বি-২ স্টেল্থ বিমান। অতলান্তিক মহাসাগরের উপর দিয়ে প্রায় ১৭ হাজার মাইল ওড়ে বিমানগুলি। মাঝ-আকাশে সেগুলিতে একাধিক বার জ্বালানিও ভরা হয় বিভিন্ন ট্যাঙ্কার বিমান থেকে।
শনিবার বিকেল ৫.০০ (আমেরিকার স্থানীয় সময়)
১৭ ঘণ্টা ওড়ার পর পশ্চিম এশিয়ায় প্রবেশ করে মার্কিন বোমারু বিমান। সেগুলির সঙ্গে বেশ কিছু যুদ্ধবিমানও ছিল। যদি কোনও ভাবে বোমারু বিমানের উপর হামলা হয়, সেই পরিস্থিতিতে প্রত্যাঘাতের জন্য ওই বিমানগুলিকে রাখা হয়েছিল। ঠিক সেই সময়েই ইরানের ইসফাহান পরমাণুকেন্দ্রকে লক্ষ্য করে এক ডজনেরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে মার্কিন ডুবোজাহাজ।
শনিবার সন্ধ্যা ৬.০০ (আমেরিকার স্থানীয় সময়)
ইরানের আকাশসীমায় পৌঁছোল আমেরিকার সাত বি-২ স্টেল্থ বিমান। তখন ইরানে রাত ২টো।
শনিবার সন্ধ্যা ৬.৪০-৭.০৫ (আমেরিকার স্থানীয় সময়)
বোমারু বিমানের হামলা শুরু হয় ফোরডো এবং নাতান্জ়ে। এই দু’টি পরমাণুকেন্দ্রে সব মিলিয়ে ৭৫টি বোমা ফেলা হয়েছে। তার মধ্যে ১৪টি বাঙ্কার বাস্টার বোমা। ওই সময়ে ইসফাহানেও চলতে থাকে ডুবোজাহাজ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা।
শনিবার সন্ধ্যা ৭.৩০ (আমেরিকার স্থানীয় সময়)
ইরানের আকাশসীমা ছেড়ে আমেরিকার উদ্দেশে রওনা দেয় মার্কিন বোমারু বিমানগুলি।
শনিবার সন্ধ্যা ৭.৫০ (আমেরিকার স্থানীয় সময়)
ইরানের তিন পরমাণুকেন্দ্রে হামলার খবর সমাজমাধ্যমে ঘোষণা করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
শনিবার রাত ১০.০০ (আমেরিকার স্থানীয় সময়)
হোয়াইট হাউসে সাংবাদিক সম্মেলন করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। জানালেন, ইরানের তিন পরমাণুকেন্দ্রই নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে।