আমেরিকার হামলায় কতটা ক্ষতি হয়েছে ইরানের তিনটি পরমাণুকেন্দ্রে, সেই নিয়ে এখনও জল্পনা রয়েছে। ইরান দাবি করেছে, জনগণ নিরাপদে রয়েছে। তেজস্ক্রিয় বিকিরণ হচ্ছে না। ম্যাক্সারের উপগ্রহচিত্র অন্য কথা বলছে! ইরানের নাতান্জ় পরমাণুকেন্দ্রের একটি উপগ্রহচিত্র প্রকাশিত হয়েছে। সেই চিত্র বিশ্লেষণ করে সংবাদসংস্থা এপি দাবি করেছে, আমেরিকার রবিবারের হামলার পরে অন্তত একটি গহ্বর দেখা গিয়েছে নাতান্জ় পরমাণুকেন্দ্রে।
রবিবার আমেরিকার হামলার পরে নাতান্জের যে ছবি ‘ম্যাক্সার টেকনোলজিস’ এবং ‘প্ল্যানেট ল্যাবস পিবিসি’ তুলেছে, তাতে দেখা গিয়েছে, সেখানে প্রায় ১৬ ফুট (পাঁচ মিটার) গভীর গর্ত তৈরি হয়েছে। এমনটাই জানিয়েছে সংবাদসংস্থা এপি। তারা আরও জানিয়েছে, পরমাণুকেন্দ্রের ভূগর্ভস্থ অংশে এই গহ্বর দেখা দিয়েছে।
এর আগে ইজ়রায়েলও এই নাতান্জ় পরমাণুকেন্দ্র লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল। তখন সেখানে মাটির উপরে যে ‘সেন্ট্রিফিউজ় হল’ ছিল, তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই প্রযুক্তি বিভিন্ন ঘনত্বের জিনিস একে অপরের থেকে পৃথক করে। বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সেনার হামলায় এই পরমাণুকেন্দ্রের বিদ্যুৎ প্রকল্পও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে কেন্দ্রে বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন হয় বলে মনে করা হয়েছিল।
তেহরান থেকে ২২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে ইরানের কেন্দ্রীয় মালভূমিতে রয়েছে নাতান্জ পরমাণুকেন্দ্র। এই ঘাঁটির একটি বড় অংশ মাটির নীচে রয়েছে। বাকি অংশ রয়েছে মাটির উপরে। নাতান্জ় পরমাণুকেন্দ্রকে ইরানের ‘ইউরেনিয়াম বিশুদ্ধকরণের মুকুট’ বলা হয়। এই কেন্দ্রেও ইউরেনিয়াম ৬০ শতাংশ পরিশুদ্ধ করা যায়। এতে সামান্য তেজস্ক্রিয় স্তরে পৌঁছোয় ইউরেনিয়াম, কিন্তু পরমাণু বোমা তৈরির জন্য তা যথেষ্ট নয়।
ইরানের নাতান্জ়, ফোরডো এবং ইশফাহান পরমাণুকেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে রবিবার ভোরে (ভারতীয় সময়)। এর আগে ইরানের ফোরডো পরমাণুকেন্দ্রের একটি উপগ্রহচিত্র প্রকাশ্যে এসেছে। সেই ছবি থেকে মনে করা হচ্ছে, ওই পরমাণুকেন্দ্রের একাধিক প্রবেশপথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে! ইরানে হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সমাজমাধ্যমে লেখেন, ‘‘ফোরডো শেষ!’’ ফোরডো হল ইরানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি পরমাণুকেন্দ্র। সেখানেও ক্ষতি হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। ‘প্ল্যানেট ল্যাবস পিবিসি’ একটি উপগ্রহচিত্র প্রকাশ্যে এনেছে। সেই ছবি বিশ্লেষণ করে সংবাদসংস্থা এপি দাবি করে, এই উপগ্রহচিত্রটি ফোরডোর। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, এক সময়ের বাদামি রঙের পাহাড়ের কিছু অংশ ধূসর হয়ে গিয়েছে। হামলার আগের উপগ্রহচিত্রের থেকে যা কিছুটা আলাদা। এই ছবিই ইঙ্গিত দেয়, বিস্ফোরণের ফলে ঘটনাস্থলের চারপাশে ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে পড়েছে। বাতাসে হালকা ধূসর ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ারও ইঙ্গিত মিলেছে।
যদিও তিনটি পরমাণুকেন্দ্রের কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা এখনও পর্যন্ত জানায়নি ইরান। তারা শুধু জানিয়েছে, আমেরিকার হামলার পর ফোরডো, ইসফাহান এবং নাতান্জ়ের পরমাণুকেন্দ্রগুলির কাছে দূষণের কোনও খবর নেই। ওই এলাকায় জনগণের চিন্তার কোনও কারণও নেই বলে দাবি ইরানের।