বাংলাদেশের মাটিতে ভারত এবং পাকিস্তানপন্থী রাজনীতির কোনও ঠাঁই নেই! নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (ন্যাশনাল সিটিজেনস পার্টি বা এনসিপি)-র আত্মপ্রকাশের মঞ্চ থেকে এমনই ঘোষণা করলেন আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। শুধু তা-ই নয়, তাঁর কথায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের উন্নতির প্রসঙ্গও। তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ এবং দেশবাসীর স্বার্থকে সামনে রেখে আমরা কাজ করব।’’ নাহিদের দাবি, বাংলাদেশকে নতুন করে নির্মাণ করবে তাঁর দল।
শুক্রবার ঢাকার মানিক মিয়াঁ অ্যাভিনিউয়ের মঞ্চে আত্মপ্রকাশ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি। কোরান, গীতা, বাইবেল পাঠ করে নতুন রাজনৈতিক দলের পথ চলা শুরু হয় বাংলাদেশে। সেই দলের আহ্বায়ক হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে নাহিদকে। তাঁকে সামনে রেখে নতুন দলে ১৫১ জন সদস্যের কমিটির কথা ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন দলে মোট শীর্ষ পদের সংখ্যা ১০টি। সেই দলের মঞ্চ থেকেই বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ার আহ্বান জানান নাহিদ। বাংলাদেশের জুলাই আন্দোলনে শহিদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে নিজের বক্তৃতা শুরু করেন তিনি। তাঁর বক্তৃতার পরতে পরতে ছিল বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা।
ঢাকার মানিক মিয়াঁ অ্যাভিনিউয়ের মঞ্চ থেকে নাহিদ বলেন, ‘‘আমরা সামনের কথা বলতে চাই। ইতিহাস পেরিয়ে সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের কথা জানাতে চাই। বাংলাদেশকে কখনওই ভাগ করা যাবে না।’’ নাহিদের বক্তৃতায় জায়গা পেয়েছে প্রায় ২০০ বছর ব্রিটিশ শাসনকালে পরাধীনতার কথা। উঠে এসেছে ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতা এবং পাকিস্তানের জন্ম। তার পর মুক্তিযুদ্ধ এবং ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের কথাও নাহিদ তুলে ধরেছেন নিজের বক্তৃতায়।
তার পরই শেখ হাসিনার শাসনকাল নিয়ে সরব হয়েছেন নাহিদ। তাঁর কথায়, ‘‘গত ১৫ বছর দেশে একটি নিষ্ঠুর ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা কায়েম হয়েছিল, যেখানে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থে বেপরোয়া ভাবে ব্যবহার করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছে।’’ সেই অরাজকতার পতন ঘটিয়েছে ‘জুলাই বিপ্লব’, দাবি নাহিদের। তাঁর দাবি, এনসিপি হবে একটি গণতান্ত্রিক, সমতাভিত্তিক ও জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দল। দেশ এবং সমাজে সকল প্রকার বিভেদ ঘুচিয়ে ঐক্যের পরিবেশ তৈরি করাই তাঁদের লক্ষ্য। নাহিদের কথায়, ‘‘আমরা এমন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশ চাই, যেখানে প্রতিশোধের বদলে ন্যায়বিচার এবং পরিবারতন্ত্রের বদলে মেধা ও যোগ্যতার মানদণ্ড প্রতিষ্ঠিত হবে।’’ বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে বলেও আশাবাদী নাহিদ।
আরও পড়ুন:
জুলাইয়ের গণ অভ্যুত্থানের জেরে গত ৫ অগস্ট হাসিনার সরকারের পতন হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং তার পরবর্তী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ধাক্কায় ক্ষমতাচ্যুত হন হাসিনা। সেই ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন নাহিদ। তাঁর মুখেই সেই সময় শোনা গিয়েছিল ‘তুমি কে, আমি কে, বিকল্প, বিকল্প’ স্লোগানটি। শুক্রবার নাহিদ জানান, সেই বিকল্পের জায়গা থেকেই জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশ।