E-Paper

ছ’বছরের স্বপ্ন সার্থক, পুজো হবে হ্যানোভারে

এ বার প্রথম পুজো হলেও, বেশ ভালই লোক সমাগমের সম্ভাবনা আছে। কিন্তু আয়োজকের সংখ্যা বেশ কম। ফলে এক জনের কাঁধে একাধিক দ্বায়িত্ব এসে পড়েছে।

অয়না দত্ত

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:২০
An image of Durga Puja

এই প্রতিমাই পূজিত হবেন হ্যানোভারে। —নিজস্ব চিত্র।

জার্মানির বিভিন্ন শহরে বহু বছর ধরে অসংখ্য বাঙালি বসবাস করছেন। কয়েক দশক ধরে এখানে প্রবাসী হলেও আশ্বিনের শারদপ্রাতে জার্মানির মাঠে-ঘাটে ফুটে থাকা কাশফুলের দোলা দেখলে বা নীল আকাশে পেঁজা মেঘ দেখলেই কানে বেজে ওঠে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের গলায় ‘যা দেবী সর্বভূতেষু...’ এবং দুর্গোৎসবের সেই চিরপরিচিত ঢাকের বাদ্যি।

এমনই এক আবেগ থেকে আমাদের হ্যানোভারের দুর্গাপুজোর পরিকল্পনা। গত বছর পর্যন্ত হ্যানোভারবাসী বাঙালিদের দুর্গোৎসবে অংশগ্রহণ করতে হলে ছুটে যেতে হত ব্রেমেন, হামবুর্গ বা বার্লিনে। যাঁরা কোনও রকমে ছুটি পেতেন, তাঁরা পাড়ি দিতেন আরও দক্ষিণে ফ্র্যাঙ্কফুর্ট, মিউনিখ বা এরলাঙ্গেনে অথবা পশ্চিমের কোলোন বা ডুসেলডর্ফে।

কাজ, স্কুল, কলেজ, পরিবার সব কিছু সামলে এত দূরে গিয়ে পুজো দেখা অনেক সময়েই বেশ কষ্টসাধ্য। কিন্তু দিনান্তে যে আমরা বাঙালি! কত দিন আর কলেজে লেকচারের ফাঁকে অষ্টমীর পুষ্পাঞ্জলির মন্ত্র শুনব, আর কত দিনই বা কম্পিউটারের কি-বোর্ডে ঢাকের তাল তোলার চেষ্টা করব!

এই আবেগ থেকেই এ বছর মা দুর্গাকে আমরা স্বগৃহে আনার চেষ্টা শুরু করলাম। আসলে পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল সেই ২০১৭ সালে। হ্যানোভার ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের বাঙালি পরিবারেরা তিলে তিলে অর্থ, সামর্থ্য, সময় সব কিছু ঢেলে এই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করছিলেন। তাঁদের সেই চেষ্টা অনেকটা সফলও হয়েছিল, কিন্তু মাঝের কয়েক বছর কোভিড অতিমারি এসে সব ভাবনা-চিন্তায় জল ঢেলে দিল। অতিমারি সংক্রান্ত বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় এ বছর হ্যানোভারে দুর্গাপুজো করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যাত্রাপথ সোজা ছিল না, কিন্তু মা যে দুর্গতিনাশিনী! তিনি কি কখনও সন্তানের ডাক অগ্রাহ্য করতে পারেন!

জার্মানিতে দুর্গোৎসবের আয়োজন এক প্রকাণ্ড কর্মযজ্ঞ। প্রথমত, পুজোর জায়গা ঠিক করা। পরিধি এবং খরচ সবটাই মনের মতো হতে হবে। মাকে যেমন ঘুপচি জায়গায় আবাহন করা যাবে না, তেমনই অট্টালিকায় ডেকে আপ্যায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করা মুশকিল। শেষ পর্যন্ত একটি জায়গা পছন্দ হয়েছে। আগামী ২২ থেকে ২৪ অক্টোবর সেখানেই দুর্গাপুজো হবে। এরই অনতিদূরে একটি বৃদ্ধাশ্রম আছে। সেখানকার আবাসিকদের কথা ভেবে পুজো ও আনুষঙ্গিক অনুষ্ঠান প্রতিদিন রাত ৮টার মধ্যেই শেষ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। পুজো হবে বেলুড় মঠের দুর্গাপুজোর অনুসরণে।

এ বার প্রথম পুজো হলেও, বেশ ভালই লোক সমাগমের সম্ভাবনা আছে। কিন্তু আয়োজকের সংখ্যা বেশ কম। ফলে এক জনের কাঁধে একাধিক দ্বায়িত্ব এসে পড়েছে। দুর্গোৎসবের আনন্দে মেতে সবাই সব দ্বায়িত্ব হাসিমুখে পালন করছেন, তবুও প্রতি পদে লোকবলের অভাব বোধ হচ্ছে। এ ধরনের নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে, আমরা তৈরি হচ্ছি হ্যানোভারের প্রথম দুর্গাপুজো করার জন্য। আমাদের প্রয়াস, এই দুর্গাপুজোয় আসা সকল দর্শনার্থীর তাঁদের দেশে ফেলে আসা পাড়ার সর্বজনীন পুজোর আমেজ ফিরিয়ে দেওয়া। সেই লক্ষ্যে পুজোর পাশাপাশি একটি সংক্ষিপ্ত আগমনী অনুষ্ঠান, কচিকাঁচাদের নিয়ে ছোট একটি নাটক এবং আরও বেশ কিছু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। আর সবার শেষে ধুনুচি নাচ তো আছেই।

আর এক মাসও নেই। তার পরেই বেজে উঠবে হ্যানোভারে প্রথম দুর্গোৎসবের ঢাক। আমাদের প্রার্থনা, প্রত্যেক আগমনীতে যেন মাকে বরণ করে ঘরে আনতে পারি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Durga Puja 2023 Germany

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy