জোড়া আন্দোলনের জেরে অস্বস্তিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। দাবিপূরণ না-হলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সে দেশের সরকারি কর্মচারীরা। টানা চার দিন ধরে ঢাকায় সরকারি সচিবালয়ের ভিতর বিক্ষোভ মিছিল করছেন বিভিন্ন দফতর এবং বিভাগের কর্মচারীরা। মঙ্গলবারও অনুরূপ কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে আগেভাগেই সতর্ক থাকতে চাইছে মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার।
‘প্রথম আলো’-র প্রতিবেদন অনুসারে, মঙ্গলবার সকাল থেকেই সচিবালয়ের ভিতর সেখানকার কর্মচারী ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না, এমনকি সাংবাদিকদেরও নয়। মূল প্রবেশপথের সামনে মোতায়েন করা হয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং বিশেষ বাহিনী সোয়াটকে। তা ছাড়া আঁটসাঁট নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে সচিবালয়, ইউনূসের সরকারি বাসভবন ‘যমুনা’ এবং সংলগ্ন এলাকাকে। এই এলাকায় মিটিং-মিছিল, সভা করার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।
কিন্তু কেন সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলনে নেমেছেন বাংলাদেশের সরকারি কর্মচারীরা? এর নেপথ্যে রয়েছে ইউনূস সরকারের একটি সিদ্ধান্ত। সম্প্রতি শেখ হাসিনার আমলের ‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’ সংশোধন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারি আইন সংক্রান্ত আইনের সংশোধিত অধ্যাদেশ (অর্ডিন্যান্স)-এর খসড়া অনুমোদিত হয়। এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই আন্দোলনে নামেন সে দেশের সরকারি কর্মীদের বড় একটি অংশ। আন্দোলনের মধ্যেই গত রবিবার নয়া অধ্যাদেশ কার্যকর করার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। আন্দোলনের গতি আরও বাড়ে।
নয়া অধ্যাদেশ অনুসারে, বাংলাদেশের সরকারি কর্মচারীরা যদি এমন কোনও কাজ করেন, যা সরকার বা প্রশাসনের প্রতি আনুগত্যের পরিপন্থী, তা হলে তাঁদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হতে পারে। তা ছাড়া যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া ছুটি নিলে, সহকর্মীকেও এই কাজে প্ররোচিত করলে কিংবা নির্দিষ্ট কাজ করতে ব্যর্থ হলেও সরকারি কর্মচারীদের চাকরি যেতে পারে বলে জানানো হয়েছে নয়া অধ্যাদেশে। অধ্যাদেশ অনুসারে, উপরিউক্ত সব ক’টি কারণই অপরাধ। কোনও কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তাঁকে সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হবে। কোনও কর্মচারী দোষী সাব্যস্ত হলে কেন তাঁকে শাস্তি দেওয়া হবে না, তা জানাতে সাত দিন সময় দেওয়া হবে। শাস্তি পেলে সেই কর্মচারী ৩০ দিনের মধ্যে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবেন। তবে রাষ্ট্রপতির আদেশের বিরুদ্ধে আদালতে আপিল করা যাবে না।
এই সংশোধিত অধ্যাদেশকে কালো অধ্যাদেশ বলে দাবি করে আন্দোলনে নেমেছেন একাধিক কর্মচারী সংগঠনের সদস্যেরা। তাঁদের বক্তব্য, এই অধ্যাদেশ সম্পূর্ণ ভাবে প্রত্যাহার করা না-হলে আন্দোলন চলবে। ইউনূস সরকার এখনও পর্যন্ত এই আন্দোলনরত কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কোনও দমনমূলক পদক্ষেপ করার পথে হাঁটেনি। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম সমর্থক, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা ছাত্রদের দল ন্যাশনাল সিটিজ়েন পার্টির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ সরকারি কর্মচারীদের সমালোচনা করেছেন। হুঁশিয়ারির সুরে জানিয়েছেন, আন্দোলনরত কর্মীদের অন্যত্র বদলি করা হতে পারে।
অন্য দিকে, বেতনবৃদ্ধির দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করেছেন বাংলাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তাঁরা পুনরায় কাজে যোগ না-দিলে প্রাথমিক স্তরে পঠনপাঠন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত জুলাইয়ে গণবিক্ষোভের জেরে গদিচ্যুত হতে হয়েছিল হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারকে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ইউনূস। সে দেশে দ্রুত নির্বাচন ঘোষণা করা নিয়ে ক্রমশ অন্তর্বর্তী সরকারের উপর চাপ বৃদ্ধি করছিল বিএনপি-র মতো বড় দলগুলি। সেনার তরফেও দ্রুত নির্বাচন ঘোষণার কথা বলা হয়। এ হেন পরিস্থিতিতে এ বার জোড়া আন্দোলন মোকাবিলার পথ খুঁজতে হচ্ছে ইউনূস প্রশাসনকে।