E-Paper

পরিবেশ আইনে বদল চান ট্রাম্প

‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনসারভেশন অব নেচার’-এর ২০২৪ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী— বদলাতে থাকা জলবায়ু, মানুষের গাফিলতি এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সিদ্ধান্তে ৪৭ হাজারের বেশি প্রজাতির প্রাণী এখন বিলুপ্তির দিকে।

মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৭:৩৯
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। — ফাইল চিত্র।

মনার্ক প্রজাপতি এখনকার পৃথিবীতে বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী বলে চিহ্নিত হয়েছে। মিল্কউইড ফুলের পরাগ তাদের খাদ্য। তাই আমেরিকার বিভিন্ন প্রদেশের বহু জায়গায় লাগানো হচ্ছে এই গাছ, যাতে কমতে থাকা এই বিশেষ প্রজাতির প্রজাপতিকে রক্ষা করা যায়। এই প্রজাপতির মতো আরও অনেক বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীকে বাঁচিয়ে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা চলে আমেরিকায় এবং সারা বিশ্বে।

‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনসারভেশন অব নেচার’-এর ২০২৪ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী— বদলাতে থাকা জলবায়ু, মানুষের গাফিলতি এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সিদ্ধান্তে ৪৭ হাজারের বেশি প্রজাতির প্রাণী এখন বিলুপ্তির দিকে। এ ধরনের পরিস্থিতির মোকাবিলায় এ দেশে রয়েছে ‘এন্ডেনজার্ড স্পিসিস অ্যাক্ট’। কিন্তু বর্তমান আমেরিকান সরকার এই আইনে যে নিয়ন্ত্রণবিধি আছে, সেগুলির বেশ খানিকটা তুলে নেওয়ার ঘোষণা করেছেন। প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলির ফলে অর্থনৈতিক দিক থেকে এই স্থানগুলির মূল্য কতটা বেশি বা কম, সেটাই ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে প্রধান বিবেচ্য বিষয় হবে, গুরুত্ব কমে যাবে বিপন্ন প্রাণীগুলির আবাসস্থল ও বিচরণের জায়গা হিসেবে এদের অস্তিত্ব। যার ফলে, অদূর ভবিষ্যতে জলবায়ু সঙ্কটের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এই প্রাণীগুলির সুরক্ষা ব্যবস্থা তেমন থাকবে না। বিপন্ন ও প্রায় বিলুপ্ত প্রজাতির প্রাণীরা যে নিরাপত্তা আর রক্ষণাবেক্ষণ পেত, সেটাও বন্ধ করে দেওয়া হবে। এবং যে সব মানুষ এই ক্ষেত্রগুলিতে কাজ করেন, তাঁদের চাকরিরও নিরাপত্তা থাকবে না।

১৯৭৩ সালে প্রেসিডেন্ট নিক্সনের সময়ে চালু হয়েছিল ‘এনডেঞ্জার্ড স্পিসিস অ্যাক্ট’। ট্রাম্প তাঁর প্রথম টার্মে সেই আইনের পরিধি অনেক সীমিত করে দিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট হয়ে জো বাইডেন সেগুলি আবার ফিরিয়ে আনেন। কিন্তু এখন আবার সময় এসেছে বিপরীত ধারার। আমেরিকার স্বরাষ্ট্র সচিব ডাগ বার্গমের দাবি, “বিভিন্ন প্রাণীদের রক্ষা করা যেমন দরকার, তেমন এই ভূমির উপরে নির্ভরশীল মানুষদের জীবন নির্বাহ কী ভাবে হবে, সেটাও ভাবতে হবে। ‘ফিশ অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ সার্ভিসেস’-এর ডিরেক্টর ব্রায়ান নেসভিক বলেন, “পরিবেশ রক্ষা যাতে আমেরিকার শক্তি উৎপাদন, কৃষি, পরিকাঠামো ব্যবস্থার চাহিদার সঙ্গে ভারসাম্য রেখে চলতে পারে, এখন থেকে সে রকম পদক্ষেপ নিতে হবে।” ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাবকে ‘কমন সেন্স’ বলা হচ্ছে, কারণ আমেরিকার শিল্পসংস্থাগুলির দীর্ঘদিনের অভিযোগ যে এই পরিবেশ আইনের জন্য যতটা প্রয়োজন, ততটা শক্তি উৎপাদনের জন্য খননকাজ চালানো যায় না।

এখানেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন ‘ডিফেন্ডার্স অব ওয়াইল্ড লাইফ’ সংস্থার সঙ্গে যুক্ত আইনজীবী জেন ডেভেনপোর্ট। তাঁর কথায়, “এই ভাবে ড্রিলিং, বুলডোজ়িং, লগিং করে এই প্রাণীগুলির আবাসস্থল কেড়ে নিয়ে এই সরকার বন্যপ্রাণীদের বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ফ্লরিডা ম্যানাটির মতো প্রাণী, যাদের সংখ্যা অনেক যত্নে বাড়ানো হয়েছিল, আবার চলে যাবে বিপন্ন প্রাণীর তালিকায়।

পঞ্চাশ বছর ধরে প্রাণীদের বিলুপ্তি হয়ে যাওয়া থেকে বাঁচাতে অসম্ভব ভাল কাজ করে চলেছে ‘এনডেঞ্জার্ড স্পিসিস অ্যাক্ট’। এই আইন পাল্টালে ফ্লোরিডা স্ক্রাব জে, গোল্ডেন ইগলের মতো প্রাণীদের রক্ষা করা কঠিন হবে। ২০২৫-এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, এ দেশে বহু পাখি এখন বিপন্ন। তার সাথে বিপন্ন ৪০ শতাংশ খেচর প্রাণী, এক তৃতীয়াংশ প্রবাল, সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী জীব আর বিভিন্ন প্রজাতির হাঙর। আর আছে পোকামাকড় প্রজাতি, যারা পৃথিবীর যে কোনও বাস্তুতন্ত্রের মূল স্তম্ভ, পৃথিবীর সমস্ত প্রাণী প্রজাতির আশি শতাংশের বেশি এরাই। এর মধ্যে যে কোনও বাস্তুতন্ত্রে একটি প্রজাতির অনুপস্থিতি গোটা বাস্তুতন্ত্রকে বদলে দিতে পারে।

আইন পাল্টে ফেলার এই প্রস্তাব আগামী এক মাস জনমত জানানোর জন্য খোলা থাকবে। সাধারণ মানুষের সদিচ্ছা যদি এই আইনের বদলকে আটকাতে পারে, তা হলে রক্ষা পাবে বহু বিপন্ন প্রাণী, রক্ষা পাব আমরাও।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

america Environment

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy