Advertisement
E-Paper

অর্থনীতিতে পরিবেশ, প্রযুক্তির নোবেল-যোগ

অর্থনীতির একেবারে কেন্দ্রে থাকা, কিন্তু অবহেলিত, এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজেছেন, এমন দুই অর্থনীতিবিদই এ বছরের নোবেল পুরস্কার প্রাপক। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক উইলিয়াম ডি নর্ডাউস (৭৭) আর নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পল এম রোমার (৬২)।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৮ ০১:৪৪
পল এম রোমার ও  উইলিয়াম ডি নর্ডাউস

পল এম রোমার ও  উইলিয়াম ডি নর্ডাউস

প্রযুক্তির উন্নতি, আর জ্ঞান কী ভাবে আলাদা করে দেয় একটা দেশকে? অথবা, অর্থনীতির বৃদ্ধি জলবায়ুর উপর কী ভাবে প্রভাব ফেলে, আর জলবায়ুর পরিবর্তন কী ভাবে প্রভাবিত করে বৃদ্ধির হারকে? তার চেয়েও বড় কথা, এই ঘটনাগুলো কী ভাবে প্রভাব ফেলতে থাকে স্থান-কালের গণ্ডি অতিক্রম করে? অর্থনীতির একেবারে কেন্দ্রে থাকা, কিন্তু অবহেলিত, এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজেছেন, এমন দুই অর্থনীতিবিদই এ বছরের নোবেল পুরস্কার প্রাপক। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক উইলিয়াম ডি নর্ডাউস (৭৭) আর নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পল এম রোমার (৬২)।

নর্ডাউস আর রোমার এক সঙ্গে নোবেল পাওয়ায় একটু অবাকই হয়েছেন, লন্ডন স্কুল অব ইকনমিকস-এর অর্থনীতিবিদ মৈত্রীশ ঘটক। বললেন, ‘‘দুই ক্ষেত্রেই নোবেল পুরস্কার পাওয়ার কথা, সন্দেহ নেই। কিন্তু, দু’জনে এক সঙ্গে পুরস্কার পাওয়ার তাৎপর্য আলাদা। সাধারণত প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন বা প্রাকৃতিক সম্পদ, দু’টোকেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের পরিকাঠামোর পরিসরের বাইরে রাখা হয়। রোমার আর নর্ডাউসের কাজের গুরুত্ব হল, তাঁরা দেখিয়েছেন, প্রযুক্তি আর পরিবেশ, কোনওটাই অর্থনীতির ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ঊর্ধ্বে নয়। অর্থনীতির দুটো মূল প্রশ্ন হল, দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক বৃদ্ধি কিসে হয়, আর সেই বৃদ্ধির সীমা নির্ধারিত হয় কী ভাবে। রোমারের কাজ প্রথম প্রশ্নটার উত্তর দেয়, আর নর্ডাউসের কাজ দ্বিতীয় প্রশ্নের। এক দিকে অর্থনীতির টানে প্রযুক্তি আর পরিবেশ প্রভাবিত হয়, আবার উল্টো দিকে তারা প্রভাব ফেলে অর্থনীতিতে— এ বছরের নোবেল পুরস্কার আসলে এই সত্যটার স্বীকৃতি।’’

নর্ডাউস অর্থনীতির চর্চায় টেনে এনেছেন ভৌতবিজ্ঞানকে। তাঁর ‘ইন্টিগ্রেটেড অ্যাসেসমেন্ট মডেল’ যেমন খোঁজ রাখে, কী ভাবে রসায়নের ধর্ম মেনে পরিবেশে জমা হতে থাকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড, পদার্থবিদ্যার সূত্র মেনে কী ভাবে পরিবেশে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের ঘনত্বের সঙ্গে মানুষের জ্বালানির ব্যবহারও পাল্টায়, তেমনই জানায়, বাজার অর্থনীতি চাহিদা-জোগান কী ভাবে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের মাত্রা নির্ধারণ করে। কার্বন ক্রেডিট বা কার্বন করের মতো নীতিতে কী ভাবে এই নিঃসরণের মাত্রা পাল্টায়, আর বৃদ্ধির হার ও উন্নয়নের ওপর তার কী প্রভাব প়ড়ে। পরিবেশকে অর্থনীতির প্রশ্ন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে নর্ডাউসের ভূমিকা অগ্রপথিকের।

রোমার আবার পাল্টে দিয়েছেন অর্থনৈতিক বৃদ্ধির ধারণাকেই। তাঁর ‘এন্ডোজেনাস গ্রোথ মডেল’ বলেছে, প্রযুক্তির পরিবর্তন অর্থনীতির মডেলের বাইরে থেকে আসে না, বরং বাজারের ধর্ম মেনেই তা তৈরি হয়। প্রযুক্তি এমনই জিনিস, যার ব্যবহার থেকে কাউকে বাদ দেওয়া মুশকিল। আবার, সবাই যদি বিনা বাধায় নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করতে থাকে, তা হলে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য যথেষ্ট খরচ করবে না বাজার। ফলে, ব্যবহার কতখানি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, আর কোথায় ছাড়তে হবে, সেটা অর্থনীতির কেন্দ্রীয় প্রশ্ন। যে দেশ সেই প্রশ্নের ঠিক উত্তর খুঁজে পায়, রোমারের বিপুল পরিসংখ্যান বলছে, সেই দেশ এগিয়ে যায় তত দ্রুত।

রোমারের পুরস্কারের গুরুত্ব কোথায়? ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, কলকাতা-র অধিকর্তা অর্থনীতিবিদ অচিন চক্রবর্তী বললেন, ‘‘যেখানে বিনিয়োগের সঙ্গে জ্ঞানবৃদ্ধির সম্ভাবনা, উৎপাদন ব্যবস্থাকে সে দিকে ঠেলে নিতে পারলে দীর্ঘমেয়াদে লাভ। তা হলে নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে জ্ঞান ও প্রযুক্তিতে জোর দেওয়া উচিত। কিন্তু জ্ঞান উৎপাদন আবার পুরোটা বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়া যায় না। গবেষণায় ব্যক্তিগত উদ্যোগের ও বিনিয়োগের সম্ভাবনা কম, যে হেতু গবেষণার ফলাফলের পুরোটাই বিনিয়োগকারী আত্মস্থ করে নিতে পারে না শুধু নিজের লাভের জন্যে। ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে যখন উচ্চশিক্ষায় অসরকারি বিনিয়োগের কথা বলা হয়, বোঝাই যাচ্ছে তার সমর্থন তত্ত্বে পাওয়া যায় না। দুনিয়া জুড়়েই এই ভ্রান্তি ধরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে পল রোমারের তত্ত্বের গুরুত্ব।’’

William Nordhaus Paul Romer Nobel Prize America
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy