Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Afghanistan

Afghanistan: সারা দুনিয়ার সামনে কাবুলের আকাশে বিমান থেকে খসে-পড়া মৃত দুই যুবক ছিলেন সহোদর

তালিবান কাবুলের দখল নেওয়ার পর অন্য অনেকের মতো তাঁরাও পালাতে চেয়েছিলেন দেশ ছেড়ে। কিন্তু জায়গা পাননি বিমানের মধ্যে।

বিমান থেকে খসে পড়ার সেই দৃশ্য। ছবি সৌজন্য টুইটার।

বিমান থেকে খসে পড়ার সেই দৃশ্য। ছবি সৌজন্য টুইটার।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২১ ১৪:৫০
Share: Save:

একই মায়ের গর্ভে জন্ম তাঁদের। একই পরিণতি হল দু’জনের। একই আকাশ থেকে তাঁদের পর পর খসে পড়তে দেখল সারা দুনিয়া।

তালিবান কাবুলের দখল নেওয়ার পর অন্য অনেকের মতো তাঁরাও পালাতে চেয়েছিলেন দেশ ছেড়ে। কিন্তু জায়গা পাননি বিমানের মধ্যে। মরিয়া চেষ্টায় আঁকড়ে ধরেছিলেন বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ার। ভেবেছিলেন, ওই ভাবেই পালাবেন তালিবানদের হাত থেকে। বোঝেননি, বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ার ধরে ঝুলতে ঝুলতে বেশিদূর যাওয়া যায় না। বোঝেননি, কাবুলের আকাশসীমা ছাড়ানোর আগেই তাঁদের খসে পড়তে হবে নীচের জমিতে। যে দৃশ্য দেখে শিউরে উঠবে সারা পৃথিবী। সোমবারের সেই ঘটনা এক ধাক্কায় আফগানিস্তান তথা কাবুলের দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়েছিল সারা পৃথিবীর। এমন ঘটনা, যা সাম্প্রতিককালে দেখেননি কেউ।

দুই ভাইয়ের নাম রেজা এবং কবীর। তাঁরা একই মায়ের সন্তান। বিমান থেকে পড়ে যাওয়ার পর কবীর এখনও নিখোঁজ। বিমান থেকে পড়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর কাবুল বিমানবন্দর থেকে কিছু দূরে সোমবারই রেজার ছিন্নভিন্ন দেহ উদ্ধার হয়। তবে কবীরের হদিশ মেলেনি। তাঁর খোঁজে দিশাহারা পরিবার। কবীরের পরিজনদের কথায়, “আমরা রেজাকে হারিয়েছি। কিন্তু এখনও কবীরের আশায় বুক বাঁধছি।” একের পর এক হাসপাতালে ছুটে বেড়িয়েছেন কবীরের বাবা-মা। কিন্তু বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কোথাও পাননি কবীরকে। তাঁরা বলেন, “জীবিত বা মৃত যে ভাবেই হোক কবীরকে যেন ফিরে পাই। আমরা সেটুকু সান্ত্বনাই চাইছি।”

মোট আট ভাইবোনের মধ্যে রেজা এবং কবীর ছিলেন পিঠোপিঠি দুই ভাই। দু’জনের বয়সও প্রায় কাছাকাছি। প্রতিবেশীদের কাছে তাঁরা খবর পেয়েছিলেন, ২০ হাজার মানুষকে উদ্ধার করে নিয়ে যাবে আমেরিকা। তার পর কানাডা বা আমেরিকায় তাঁদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হবে। তালিবানি শাসনের ভয় এতটাই তাঁদের উপর চেপে বসেছিল যে, কাউকে না বলে শুধু পরিচয়পত্র নিয়েই দুই ভাই বেরিয়ে পড়েছিলেন কাবুল বিমানবন্দরের উদ্দেশে।

বিমানবন্দরে তখন শ’য়ে শ’য়ে আফগানবাসী। সকলেই মরিয়া হয়ে বিমানে ওঠার চেষ্টা করছিলেন। পরিজনেরা জানাচ্ছেন, সম্ভবত পড়িমড়ি করে আফগানবাসীদের বিমানে ওঠার সেই দৃশ্য তাঁদের আরও মরিয়া করে তুলেছিল। সে কারণেই দুই ভাই আঁকড়ে ধরেছিলেন অতিকায় বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ার। নিজেদের আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছিলেন ল্যান্ডিং গিয়ারের সঙ্গে। কিন্তু যে কোনও বিমান আকাশে ওড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ল্যান্ডিং গিয়ার বিমানের তলদেশে ঢুকে যায়। ফলে তার সঙ্গে লেগে থাকা যে কোনও জীব বা বস্তুর খসে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনও গতি থাকে না। রেজা এবং কবীরের পরিণতিও সেটাই হয়েছিল। কাবুলের আকাশে দু’টি বিন্দুর মতো খসে পড়েছিলেন তাঁরা।

কাবুল বিমানবন্দর ছেড়ে কিছুদূর এগোবার পরেই দুই ভাই আছড়ে পড়েছিলেন সেই দেশের মাটিতে, যে দেশ ছেড়ে তাঁরা পালাতে চেয়েছিলেন প্রাণপণ। রেজার প্রাণহীন দেহ গিয়েছে লাশকাটা ঘরে। সহোদর কবীরকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন অসহায় বাবা-মা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Afghanistan usa plane Afghan Brothers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE