বাংলাদেশ জুড়ে নারী ও শিশু নির্যাতনের অজস্র ঘটনার অভিযোগে এ বার নিশানা হলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গির আলম চৌধুরী। ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ নামে বামপন্থী ছাত্রছাত্রীদের তৈরি মঞ্চটি বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে মশাল মিছিল ও অবস্থান করে, তার প্রধান দাবি ছিল ‘অপদার্থ ও ব্যর্থ’ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণ। এ দিন সন্ধ্যায় বিশাল মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের অনেকটা এলাকা পরিক্রমা করে। মিছিল থেকে স্লোগান দেওয়া হয়— ‘ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অপসারণ করতে হবে’, ‘খুন ধর্ষণ যেখানে, লড়াই হবে সেখানে‘, ‘খুন ধর্ষণ নিপীড়ন, রুখে দাও জনগণ’, ‘হামলা মামলা হুলিয়া, নিতে হবে তুলিয়া’। মঙ্গলবার এই মঞ্চের একটি মিছিলের উপরে চড়াও হয়ে প্রচণ্ড মারধর করে ইউনূস সরকারের পুলিশ। বহু পড়ুয়া তাতে জখম হন। এ দিন অবশ্য তেমন কিছু হয়নি। আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে সঙ্ঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হওয়া মাগুরার এক শিশু এক সপ্তাহ সংজ্ঞাহীন অবস্থায় থেকে এ দিন দুপুরে মারা গিয়েছে। তাকে স্মরণ করে এক মিনিট নীরবতা পালন করে এ দিন ছাত্রদের মিছিলটি শুরু হয়।
মাগুরার বালিকাটি সামজমাধ্যমে নির্যাতিতাদের প্রতীকে পরিণত হয়েছিল। মাগুরা থেকে প্রথমে ফরিদপুর, পরে ঢাকার কম্বাইন্ড মেডিক্যাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। প্রতিরক্ষা দফতরের জনসংযোগ দফতর বিবৃতিতে জানিয়েছে, এ দিন দুপুর একটায় শিশুটি মারা যায়। সামরিক কপ্টারে শিশুটির দেহ মাগুরায় নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে বহু মানুষ জানাজায় অংশ নেন। তার পরে গ্রেফতার হওয়া আসামিদের বাড়িঘরে চড়াও হন ক্ষিপ্ত জনতা। ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় মাগুরা শহরে তাদের বাড়িটি। হেফাজতে ইসলামী থেকে জামায়াত, এনসিপি— সব দল শিশুটির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগির বিবৃতিতে বলেছেন, ‘দেশে প্রশাসনের কর্তৃত্ব না থাকায় ধর্ষণের ঘটনা ক্রমেই বেড়ে চলেছে।’
এরই মধ্যে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউএসএড প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাহায্য প্রকল্প। রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার শাখা জানিয়েছে, কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলির শরণার্থীদের দৈনিক রেশনের বরাদ্দ কমিয়ে অর্ধেক করতে হয়েছে। পরিস্থিতি দেখতে রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেসকে আমন্ত্রণ করেছিলেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার তিনি তিন দিনের সফরে ঢাকায় পৌঁছেছেন। বিদেশ উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন তাঁকে স্বাগত জানান। শুক্রবার কক্সবাজারের উখিয়ায় গিয়ে রোহিঙ্গা শিবিরের অবস্থা দেখবেন গুতেরেস। বুধবার ইউনূসের প্রেস উইং জানিয়েছে, গুতেরেসের সঙ্গে থাকবেন ইউনূসও। মহাসচিব এর আগে কয়েক বার রোহিঙ্গা শিবির দেখে গেলেও ইউনূস এই প্রথম কোনও রোহিঙ্গা শিবিরে যাচ্ছেন। উখিয়ায় রোহিঙ্গা ইমামদের সঙ্গে কথা বলবেন দু’জনে। এর পরে বিকেলে লাখখানেক রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতার করবেন গুতেরেস ও ইউনূস। তার জন্য ঢালাও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ইউনূস সরকার মনে করছে, রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিবের সফরের পরে এই খাতে বরাদ্দ বাড়তে পারে। গুতেরেসের সফরকে ইউনূস সরকারের প্রতি রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘এক ধরনের অনুমোদন’ হিসাবে দেখছেন তাঁর অনুগামীরা। তবে এই সফরকে কারণ দেখিয়ে ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে সচিবালয়, জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে শাহবাগ মোড় পর্যন্ত এলাকায় মিছিল ও সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে প্রশাসন।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)