Advertisement
০৬ মে ২০২৪

অভিবাসী স্বামী জেলে, ট্রাম্পে আশাভঙ্গ স্ত্রীর

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপরে হেলেন বেরিস্টাইনের ছিল অগাধ আস্থা। স্বামী রবার্ট কিন্তু ট্রাম্পকে ভোট দেওয়ার সময় হেলেনকে বার বার সতর্ক করেছিলেন, ট্রাম্প-জমানায় অভিবাসীদের আমেরিকায় ঠাঁই হবে না। আস্থা টলেনি হেলেনের।

প্রবেশ: হোয়াইট হাউসের ইস্ট রুমে ঢুকছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে। এপি

প্রবেশ: হোয়াইট হাউসের ইস্ট রুমে ঢুকছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে। এপি

ওয়াশিংটন
সংবাদ সংস্থা  শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:৪১
Share: Save:

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপরে হেলেন বেরিস্টাইনের ছিল অগাধ আস্থা। স্বামী রবার্ট কিন্তু ট্রাম্পকে ভোট দেওয়ার সময় হেলেনকে বার বার সতর্ক করেছিলেন, ট্রাম্প-জমানায় অভিবাসীদের আমেরিকায় ঠাঁই হবে না। আস্থা টলেনি হেলেনের। জোর গলায় বলেছিলেন, উনি তো শুধু খারাপ লোকেদের তাড়াবেন। তবে হেলেন ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি, নিজের সিদ্ধান্তের জন্য পরে তাঁকে আফশোস করতে হবে। ভাবেননি, ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির খাঁড়া এসে পড়বে তাঁরই স্বামীর উপরে। তাও আবার বিনা দোষে, কোনও অপরাধ না করেই।

হেলেনের স্বামী রবার্টকে গত ৬ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার করেছে অভিবাসন ও শুল্ক দফতরের আধিকারিকরা। ওই পরিবারের মুখপাত্র শিকাগোর আইনজীবী অ্যাডাম আনসারি জানিয়েছেন, গত শুক্রবার উইসকনসিনের কাউন্টি জেল থেকে নিউ অর্লিয়েন্সে তাকে পাঠানো হয়েছে। মেক্সিকোয় ফেরত পাঠানোর আগে সেখানে আরও দু-সপ্তাহ থাকতে হবে তাঁকে। জেলে আর পাঁচটা দাগি আসামির সঙ্গে রবার্টের থাকার কারণ একটাই। তিনি মেক্সিকোর নাগরিক। তাঁর সামাজিক নিরাপত্তার কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, কাজ করার অনুমতিপত্র কিছুই তাঁকে বাঁচাতে পারেনি। পরিবারের লোকজন হন্যে হয়ে আইনজীবীদের দরজায়-দরজায় ঘুরেছেন। তবে সব চেষ্টাই ব্যর্থ।

ওবামা-জমানায় কিন্তু অপরাধী বা অপরাধ জগতের সঙ্গে যোগসাজশ আছে এমন অভিবাসীদেরই ফেরত পাঠানো হচ্ছিল। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২৫ জানুয়ারি যে প্রশাসনিক নির্দেশ দেন, তাতে বলা হয় ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত, নথিভুক্ত নয় এমন অভিবাসীদেরও ফেরত পাঠানো হবে। তবে রবার্টের বিরুদ্ধে এমন কোনও অভিযোগই নেই।

এক মার্কিন সংবাদপত্রে দাবি, আমেরিকায় রবার্ট পা রাখেন ১৯৯৮ সালে। ক্যালিফোর্নিয়ায় এক মাসির বাড়ি গিয়েছিলেন। তার পরে মেক্সিকোয় আর ফেরেননি। এর পর ইন্ডিয়ানায় বিয়ে করেন, সংসার পাতেন। একটি রেস্তোরাঁও খোলেন। সেখানে ২০ জন মার্কিন নাগরিককে কাজে রাখেন। রবার্টের সমর্থকদের দাবি, ৪৩ বছর বয়সি রবার্ট নিপাট দায়িত্ববান নাগরিক। তাঁর বিরুদ্ধে আইনভঙ্গের অভিযোগও নেই।

তবে এই ছাড়পত্রে রবার্টের হয়রানি কিছু কম হয়নি। আইনি জটিলতার শুরু প্রায় দেড় দশক আগে। অভিবাসন ও শুল্ক দফতরের এক মুখপাত্রের কথায়, ফেডেরাল আদালতের এক বিচারপতি ২০০০ সালে রবার্টকে স্বেচ্ছায় চলে যাওয়ার জন্য ৬০ দিনের সময় দিয়েছিলেন। তবে সেই সময়ের মধ্যে রবার্ট আমেরিকা ছেড়ে যাননি বলে ওই নির্দেশই তাঁর আমেরিকা ছাড়ার চূড়ান্ত ফরমান বলে গণ্য হয়।

রবার্টের গ্রেফতারির পরেও আইনজীবী ফ্লোরা তাঁর আমেরিকা ছাড়ার ফরমানে স্থগিতাদেশ চেয়ে আর্জি জানিয়েছিলেন। তা-ও ১৫ মার্চ খারিজ হয়ে গিয়েছে। মার্কিন নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্যও হেলেনকে কম ঝক্কি পোয়াতে হয়নি। গত ১৮ বছরে ১০ জন অ্যাটর্নির কাছে গিয়েছিলেন বেরিস্টাইন দম্পতি। বেশির ভাগ অ্যাটর্নি বলেছেন, কিছু করার নেই। অভিবাসন আইন পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের অপেক্ষা করতে হবে।

এখন শুধু অপেক্ষাই করছেন রবার্ট। ১৮ বছর আগে ফেলে আসা দেশে ফেরত যাওয়ার জন্য। আইনি সাহায্যের প্রায় সব দরজাই বন্ধ। অপেক্ষায় হেলেন ও তাঁর তিন সন্তানও। হেলেনের আশাভঙ্গ হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘যদি কেউ অপরাধী হয়, খারাপ কাজ করে, তাঁকে দেশছাড়া করাটা অন্যায্য বলব না।’’ কিন্তু হেলেনের বক্তব্য, ‘‘আপনি সুনাগরিক হলেও এমন হবে? আপনি দেশের অন্যদের সাহায্য করছেন। তাঁদের কাজের ব্যবস্থা করছেন। আয়কর দিচ্ছেন নিয়ম মেনে। তা হলে তো এটাই ভাবব যে এই দেশে আপনার বাস নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলবে না।’’

শেষমেশ হেলেনের আক্ষেপ, ‘‘আমরা তো ট্রাম্পের পক্ষেই ছিলাম। উনি প্রেসিডেন্ট হওয়ায় খুব খুশি হয়েছিলাম। উনি যা বলেন, ঠিকই বলেন। কিন্তু উনি তো এটাও বলেন, ভাল মানুষ হলে আমেরিকার নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ রয়েছে!’’ সেই ভেবেই মন বাঁধছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mexico Donald Trump Undocumented immigrant
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE